আমি বললাম, “না। এটা চঞ্চলের যন্ত্র। এটা দিয়ে ঘরে বসে সিঁড়িতে কী হচ্ছে দেখা যায়। আমরা এক্ষুণি দেখলাম তোরা দাঁড়িয়ে রাক্ষসের মতো দুজনে পুরা চিপসের প্যাকেটটা খেয়ে শেষ করেছিস। আমাদেরকে যেন দিতে না হয় সেই জন্যে।”
একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে দুজনের মুখেই একটু লজ্জার ভাব ফুটল। টিটন অবশ্যি সাথে সাথেই লজ্জা কাটিয়ে বলল, “অল্প কয়টা চিপস-এতোজন মানুষ, সবার ভাগে কম পড়বে। সেই জন্যেই তো!”
আমি বললাম, “মোটেও অল্প কয়টা চিপস ছিল না। বিরাট বড় প্যাকেট ছিল।”
চঞ্চল বলল, “আর খালি প্যাকেটটা ফেলেছিস সিঁড়িতে। পরিবেশ দূষণ।”
অনু বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে, পরেরবার তোদের নিয়ে খাব।”
আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, “আমাদের ব্ল্যাক ড্রাগনের কী কী উদ্দেশ্য সব আমি কাগজে লিখে এনেছি। এই দেখ, প্রথমেই লেখা আছে একজন ব্ল্যাক ড্রাগন অন্য ব্ল্যাক ড্রাগনকে সহযোগিতা করবে। একজন বিপদে পড়লে আরেকজন বুকের রক্ত দিয়ে হলেও তাকে রক্ষা করবে। আর তোরা দুজনে চিপসের প্যাকেটটা খেয়ে ফেললি?”
অনু বলল, “ঠিক আছে, বললাম তো আর খাব না। এখন আমাকে দেখা কী কী লিখেছিস।”
আমি কাগজগুলো বের করলাম। প্রথম কাগজটা হচ্ছে ব্ল্যাক ড্রাগন হবার আবেদনপত্র। ডান দিকে ছবি লাগানোর জায়গা, উপরে একটা কালো ড্রাগনের ছবি। নাম-ঠিকানা, নিচে একটা অঙ্গীকারনামা। একজন ব্ল্যাক ড্রাগন কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না তার একটা লম্বা তালিকা। তা ছাড়াও যারা ব্ল্যাক ড্রাগন হবে তাদের জন্যে একটা ছোট কার্ড। সেটা আবার লেমিনেট করা হবে। সব ব্ল্যাক ড্রাগনকে সবসময় সাথে এই কার্ড রাখতে হবে।
চঞ্চল বলল, “সবই ঠিক আছে। কিন্তু পুরো জিনিসটা আসলে কম্পিউটারে টাইপ করে প্রিন্টারে প্রিন্ট করলে ভালো হত।”
আমি একটু অসন্তুষ্ট হয়ে বললাম, “কেন আমার হাতের লেখা কি খারাপ?”
টিটন বলল, “যথেষ্ট খারাপ। হাত দিয়ে লিখিস না পা দিয়ে লিখিস বোঝ যায় না।”
“বাজে কথা বলবি না।” আমি রেগে বললাম, “তোর নিজের হাতের লেখাটা কোনোদিন দেখেছিস? বাংলা লিখেছিস না চাইনিজ লিখেছিস সেটাই বোঝা যায় না!”
টিটন রেগে উঠে আরেকটা কী বলতে চেয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করে আমরা সবাই থেমে গেলাম। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে টুনি আর মিথিলা উঠে আসছে। দুজন সিঁড়ির মাঝখানে থেমে গেল, নিজেরা হাত নেড়ে কী যেন কথা বলল। কথা শেষ করে দুজনেই মুখে হাত দিয়ে খানিকক্ষণ হাসল। তারপর টুনি হাত দিয়ে তার চুলগুলো ঠিক করল, মনে হল মিথিলাকে জিজ্ঞেস করল তাকে কেমন দেখাচ্ছে। মিথিলা নিশ্চয়ই বলল ভালোই দেখাচ্ছে তখন দুজনেই আবার উপরে উঠতে শুরু করল।
একটু পরেই আমরা তাদের দুজনকে দরজার সামনে দেখতে পেলাম। আমরা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। টুনি বলল, “আমি আর মিথিলা এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মিথিলা বলল, তোরা এখানে আছিস! তাই ভাবলাম তোদর একটু দেখে যাই!”
ডাহা মিথ্যা কথা! নিশ্চয়ই অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, সেই আসল কথাটা শোনার জন্যে আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম। টুনি ভান করল হঠাৎ যেন তার কিছু একটা মনে পড়েছে, তখন সে হাতের একটা প্যাকেট থেকে কিছু কাগজ বের করে বলল, “ও আচ্ছা! আমি আর মিথিলা কথা বলছিলাম। আমরা ঠিক করেছি আমরা একটা ক্লাব করব।”
আমরা একসাথে বললাম, “ক্লাব?”
“হ্যাঁ। নাম দিয়েছি ব্ল্যাক ড্রাগন। যারা মেম্বার হবে তাদেরকে বলা হবে ব্ল্যাক ড্রাগন! ব্ল্যাক ড্রাগন হবার আবেদনপত্র তৈরি করেছি, এই দেখ!”
আমরা দেখলাম কম্পিউটারে টাইপ করা আবেদনপত্র। উপরে একটা কালো রঙের ড্রাগনের ছবি। ডান পাশে টুনির রঙিন ছবি। অন্যটাতে মিথিলার। ঠিক আমরা যেরকম আলোচনা করেছিলাম। আবেদনপত্রের নিচে অঙ্গীকারনামা, ব্ল্যাক ড্রাগনেরা কী করতে পারবে আর কী করতে পারবে না তার একটা লম্বা তালিকা। দেখে আমরা এতো অবাক হলাম যে কী বলব বুঝতে পারছিলাম না।
টুনি প্যাকেট থেকে দুইটা ছোট ছোট কার্ড বের করে বলল, “আর প্রত্যেক ব্ল্যাক ড্রাগনের থাকবে এই কার্ড। লেমিনেট করা। সবসময় সাথে রাখতে হবে। একজন ব্ল্যাক ড্রাগন এটা দেখালেই অন্য সব ব্ল্যাক ড্রাগন তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। দরকার হলে বুকের রক্ত দিয়ে রক্ষা করবে। তাই না রে মিথিলা?”
মিথিলা কলের পুতুলের মতো মাথা নাড়ল।
তখন টিটন একটা গর্জনের মতো শব্দ করল। আমি বললাম, “ব্ল্যাক ড্রাগন হচ্ছে আমাদের ক্লাবের নাম। আমাদের।”
টুনি শুনে খুবই খুশি হওয়ার ভান করল, বলল, “তা হলে তো আরো ভালো। হয় তোরা আমাদের ক্লাবে যোগ দিবি। না হয় আমরা তোদের ক্লাবে যোগ দিব। ছয়জন ব্ল্যাক ড্রাগন! ফ্যান্টাস্টিক!”
টিটন আবার গর্জনের মতো শব্দ করল।
টুনি বলল, “কী হল? হ্যাঁ, না কিছু বলছিস না কেন? শুধু নাক দিয়ে শব্দ করছিস কেন?”
আমি আবার চিৎকার করে বললাম, “ব্ল্যাক ড্রাগন আমাদের।”
টুনি বলল, “আমিও তো তাই বলছি! ব্ল্যাক ড্রাগন আমাদের। তোরা চারজন আর আমরা দুইজন–সব মিলিয়ে আমাদের ছয়জনের।”
আমরা কী বলব বুঝতে পারছিলাম না, তখন টুনি বলল, “ঠিক আছে। ঠিক আছে কোনো তাড়াহুড়া নেই। তোরা চিন্তা-ভাবনা করে আমাদেরকে বলিস!”
তারপরে আমাদের কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমরা তখন আমাদের টেলিভিশনের দিকে তাকালাম, দেখলাম টুনি আর মিথিলা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ছে! কী বলছে শুনতে পাচ্ছি না–শুধু দেখতে পাচ্ছি। সেটা দেখেই আমাদের তালু গরম হয়ে গেল। এইটুকুন মেয়ের কী ফিচলে বুদ্ধি, বাবারে বাবা!