“টুশি বলল, নিউইয়র্কের একটা মিউজিয়াম তোমার শিশিটা বিশ হাজার ডলার দিয়ে কিনতে চাচ্ছে।”
কাবিল কোহকাফী মুচকি মুচকি হেসে বলল, “তা হলে রাজি হচ্ছ না কেন?”
টুশি চোখ বড় বড় করে বলল, “সর্বনাশ! যদি জানাজানি হয়ে যায় তুমিই সেই কাবিল কোহকাফী তা হলে আমাদের শিশুসদনের কী হবে?”
তপু বলল, “আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে থাকি, তারপরেই অটোগ্রাফ দিতে দিতে হাত ব্যথা হয়ে যায়।”
টুশি এদিক-সেদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে বলল, “তুমি কি আবার আগের মতো অদৃশ্য হতে পারবে?”
“মনে হয় না। অলৌকিক যা ক্ষমতা ছিল সব মনে হয় খরচ করে ফেলেছি!”
“কী অলৌকিক ক্ষমতা?”
“এই মনে করো মানুষকে টিকটিকি বানানো–লোহাকে সোনা বানানো–”
তপু হি হি করে হেসে বলল, “তুমি এগুলো কিছু পার না আমরা জানি!”
কাবিল কোহকাফী কোনো কথা না বলে মিটিমিটি হাসতে লাগল। টুশি বলল, “কী হল, তুমি এভাবে হাসছ কেন?”
“মনে আছে, তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমার চেহারাকে আগুনের খাপরার মতো সুন্দর করে দেব?”
“হ্যাঁ।”
“আমি মনে হয় এখন সেটা পারব।”
টুশি চোখ বড় বড় করে বলল, “সত্যি?”
“সত্যি। আমার ক্ষমতা তো কম তাই বেশি অলৌকিক কাজ করতে পারি না। যা ক্ষমতা ছিল শেষ করে ফেলেছি–আর মনে হয় একটা পারব। সত্যিকারের অলৌকিক একটা কাজ!”
টুশি তীক্ষ্ণ চোখে কাবিল কোহকাফীর দিকে তাকিয়ে বলল, “সত্যি পারবে?”
“হ্যাঁ। রাতারাতি তোমার চেহারা অন্যরকম হয়ে গেলে তো তোমাকে কেউ চিনবে না–তাই পুরো ব্যাপারটা হবে ধীরে ধীরে–মনে করো এক বছর সময় নিয়ে।”
টুশি বলল, “তুমি সত্যিই এরকম অলৌকিক একটা কাজ করতে পারবে?”
“হ্যাঁ। সব মন্ত্র ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেছি।”
“ভেরি গুড!” টুশি মাথাটা একটু এগিয়ে বলল, “তুমি তোমার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে মিতুলের পা ঠিক করে দাও।”
“মিতুলের পা?”
“হ্যাঁ। পারবে না?”
“পারব। কিন্তু তোমার না চেহারা নিয়ে এত দুঃখ ছিল?”
“এখন আর নেই। চেহারাটা বাইরের জিনিস–ভালো কিংবা খারাপ তাতে কিছু আসে যায় না!”
কাবিল কোহকাফী কিছুক্ষণ টুশির দিকে তাকিয়ে তার কাছে এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “তুমি ঠিকই বলেছ টুশি। যারা তোমার পরিচিত তারাই ঠিক করে জানে তোমার চেহারা কত সুন্দর।”
.
বাসায় যাবার জন্যে টুশি আর তপু কফিল কোরায়শির সাথে সিঁড়ি দিয়ে নামছে তখন দেখতে পেল মোটাসোটা একটা ছেলে খুব মনোযোগ দিয়ে উপরে তাকিয়ে আছে। টুশি জিজ্ঞেস করল, “কী দেখছ তুমি?”
“টিকটিকি।”
টুশি হেসে ফেলল, “টিকটিকি একটা দেখার জিনিস হল?”
ছেলেটা বলল, “এগুলো অন্যরকম।”
“অন্যরকম?”
“হ্যাঁ ঐ দেখো, তিনটা টিকটিকি সবসময় একসাথে থাকে। একটা হচ্ছে। শুকনো সেইটা হচ্ছে লিডার। তার পিছে পিছে থাকে দুইটা ভোটকা ভোটকা টিকটিকি। একটা কালো রঙের আরেকটা সাদা রঙের। যেটা কালো সেটার ঘাড় বলতে গেলে নেই। যেটা সাদা সেইটা কেমন জানি চিকন গলায় ডাকে”
টুশি চোখ বড় বড় করে প্রায় চিৎকার করে বলল, “কী বললে? কী বললে তুমি?”
ছেলেটা অবাক হয়ে টুশির দিকে তাকাল। সাধারণ টিকটিকির কয়টা কথা শুনে টুশি এরকম করে চিৎকার করছে কেন সে কিছুতেই বুঝতে পারল না।