মানুষগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। একজন বলল, “তুমি তোমার ইঁদুরের বাচ্চা নিয়ে এখানে এসেছ?”
টুশি দাঁত বের করে হেসে বলল, “আমার পোষা ইঁদুর, সবসময় আমার সাথে থাকে।”
“সেইজন্যে তুমি এখানে এসে সব ভেঙেচুরে ফেলছ?” মানুষটা ধমক দিয়ে বলল, “তোমার বাবা-মা কোথায়?”
টুশি অনির্দিষ্ট একটা ভঙ্গি করে বলল, “ঐ তো ওখানে।”
একজন বলল, “যাও, ভাগো এখান থেকে।”
আরেকজন বলল, “আজকালকার ছেলেপিলে যে কী পাজি চিন্তাও করা যায় না। সাহস কত বড়–এখানে ঢুকে গেল!”
মানুষগুলো তার গল্প বিশ্বাস করেছে টুশি তাই আরও একটু চেষ্টা করল, “কিন্তু আমার ইঁদুর?”
লিকলিকে মানুষটা ধমক দিয়ে বলল, “তোমার ইঁদুরের খেতা পুড়ি। ভাগে” তারপর একটা ধাক্কা দিয়ে তাকে স্টেজ থেকে বাইরে নিয়ে যেতে থাকে। টুশি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল, এতক্ষণে তপু নিশ্চয়ই কাবিল কোহকাফীর কাছে। পৌঁছে গেছে–তাকে তার মন্ত্রটাও বলে দিয়েছে। কাবিল কোহকাফীকে যখন দেখানো হবে তখন সবাই দেখবে নাদুস-নুদুস একজন ভালো মানুষকে এরা ধরে বেঁধে রেখেছে! অদৃশ্য মানবের পুরো ব্যাপারটাই তখন একটা ঠাট্টা হয়ে যাবে এরা সবাই পাবলিকের যা একটা মার খাবে সেটা আর বলার মতো নয়।
পোষা ইঁদুরকে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে এরকম মন খারাপের ভঙ্গি করে টুশি হাঁটতে থাকে ঠিক তখন ভয়ংকর একটা ব্যাপার ঘটে গেল। টুশি তাকিয়ে দেখে স্টেজের এক পাশ থেকে মন্তাজ ওস্তাদ এবং দুই পাশে কালাচান আর দবির মিয়া তার দিকে লম্বা পা ফেলে এগিয়ে আসছে। টুশি তখন ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে এক দৌড়ে বাইরে চলে যাবার চেষ্টা করল কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, কালাচান আর দবির মিয়া দৌড়ে এসে তাকে ধরে ফেলেছে। মন্তাজ ওস্তাদ হুংকার দিয়ে বলল, “এই মেয়ে এখানে কোথা থেকে এসেছে?”
লিকলিকে মানুষটা হাত নেড়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বলল, “ফালতু মাইয়া-ইন্দুরের পিছনে পিছনে চলে আসছে!”
মন্তাজ ওস্তাদ হিংস্র মুখে বলল, “ফালতু মাইয়া? তুমি জান এইটা কে?”
লিকলিকে মানুষটা আমতা-আমতা করে বলল, “কে?”
“এই মেয়ে তোমাকে দশবার কিনে দশবার বিক্রি করে দিতে পারবে। এর মতো ধুরন্ধর মানুষ আমি আমার জন্মে দেখি নাই”
“কী বলছেন আপনি?”
“হ্যাঁ।” মন্তাজ ওস্তাদ কঠিন মুখে বলল, “এই মেয়ে কেন এসেছে জান?”
“কেন?”
“আমাদের অদৃশ্য দানবকে ছুটিয়ে নেবার জন্যে।”
“কীভাবে নেবে?”
“সেইটা তোমার ব্রেনে ধরবে না–তাই বোঝার চেষ্টাও কোরো না।”
লিকলিকে মানুষটার মনে হল একটু অপমান হল, সে কিছু-একটা বলতে চাইছিল কিন্তু মন্তাজ ওস্তাদ তাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে তার দুই সাগরেদকে বলল, “কালাচান, দবির মিয়া”
“জে?”
“এই মেয়েকে যদি এখানে পাওয়া যায় তার অর্থ কী জানিস?”
“কী?”
“তার অর্থ এইখানে সেই তোতলা পিচ্চিটাও আছে। এক্ষুনি খুঁজে বের কর।”
লিকলিকে মানুষটা চোখ কপালে তুলে বলল, “তোত পিচ্চি?”
“হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি যা খাঁচার কাছে–নিশ্চয়ই সেখানে আছে। দৌড়া-”
একসাথে তখন অনেকে দৌড়ে গেল খাঁচার দিকে।
.
তপু যখন হামাগুড়ি দিয়ে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা খাঁচাটার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তখন হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ করে কার্ডবোর্ডের গাছটা স্টেজে ভেঙে পড়েছে। তপু ভয়ে চমকে উঠল, সাথে সাথে বুঝতে পারল টুশি এখন ধরা পড়ে যাবে কাজেই যা। করার তার নিজেরই করতে হবে। ভয় তার বুকের ভিতর একটা কাঁপুনি দিয়ে গেল। নিজেকে শান্ত করে তপু তাড়াতাড়ি আরও একবার কুলহু আল্লাহ পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে নেয় তারপর হামাগুড়ি দিয়ে খাঁচাটার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। কালো কাপড় তুলে ভেতরে তাকাল, আবছা অন্ধকারে দেখতে পেল খাঁচার দেয়ালে হেলান দিয়ে কাবিল কোহকাফী বসে আছে। চোখেমুখে একধরনের ভয়ংকর মন খারাপ-করা উদাস ভঙ্গি। কাবিল কোহকাফীর দুই হাত দুই পা এবং গলা শিকল দিয়ে খাঁচার ভেতরে বাঁধা–দেখেই কেমন যেন মন খারাপ হয়ে যায়। তপু ফিসফিস করে ডাকল, “কাবিল কো-কোহকাফী–”
কাবিল কোহকাফী চমকে তপুর দিকে তাকাল, তাকে দেখে হঠাৎ তার মুখটা আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, শিকল পরা অবস্থায় তার দিকে এগিয়ে এস বলল, “আরে তপু! তুমি কোথা থেকে এসেছে?”
তপু হড়বড় করে বলল, “তো-তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছি!”
“কেমন করে তুমি উদ্ধার করবে?”
“যে জি-জিনিসটা বললে তো-তোমাকে সবাই দেখতে পাবে সে-সেটা বলতে এসেছি।”
কাবিল কোহকাফী অবাক হয়ে বলল, “সেটা তুমি কেমন করে জান?”
“আমরা বে-বে-বের করেছি। তুমি যে বো-বোতলটার ভেতরে ছিলে, সে সেখানে লেখা ছিল।”
“কী তাজ্জবের ব্যাপার!”
“হ্যাঁ। তু-তুমি সেটা বললেই স-সবাই তোমাকে দেখতে পাবে। ত-ত-তখন তোমাকে আর বেঁধে রা-রা-রাখতে পারবে না!”
কাবিল কোহকাফী আনন্দে তার শিকল ঝাঁকিয়ে বলল, “জবরদস্ত! চমৎকার!”
“হ্যাঁ, তুমি মা-মাথা নিচু করে দু-দু-দুই হাত দুই পাশে রাখো। তারপর বলো “
কাবিল কোহকাফী মাথা নিচু করে দুই হাত দুই পাশে রেখে বলল, “কী বলব?”
“বলো–মা-মা-মাগারুফাস”
কাবিল বলল, “মা-মা-মাগারুফাস।”
তপু বলল, “না, নামা-মা-মাগারুফাস না”
মাগারুফাস বলতে গিয়ে আবার তপুর মুখে কথাটা আটকে গেল, সে বলল, “মা-মা-মাগারুফাস”
কাবিল বলল, “তাই তো বললাম, মা-মা-মাগারুফাস।”