বদমেজাজি প্রফেসরকেও তারা একটা ই-মেইল পাঠাল, সেখানে লিখল :
“হে বদমেজাজি প্রফেসর জন্মের সময় তোমার মা কি তোমার
মুখে মধু দিতে ভুলে গিয়ে আলকাতরা দিয়েছিল?”
তারপর তারা ছুটল বাসায়। কাবিল কোহকাফীকে অদৃশ্য থেকে উদ্ধার করার মন্ত্র তারা এখন পেয়ে গেছে!
১৪. অদৃশ্য দানব
অনেক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢোকার একটা লম্বা লাইন সেই লাইন ধরে মানুষেরা আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে। বাইরে বিশাল একটা পোস্টার সেখানে ভয়ংকর একটা ছবি। বিশাল একটা দানব শেকল দিয়ে শক্ত করে বাঁধা, দানবটি শেকল ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করছে, পারছে না। দানবটির মুখে হিংস্র এবং পৈশাচিক হাসি। ছবিটি দেখেই আত্মা শুকিয়ে যায়।
টুশি আর তপু লাইন ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তপু ফিসফিস করে বলল, “ছ ছবিটা দেখেছ আপু?”
“দেখেছি।”
“কা-কাবিল কোহকাফী মোটেই দে-দেখতে এরকম না।”
“হ্যাঁ। কাবিল কোহকাফী কত সুইট!”
তপু টুশির হাত ধরে বলল, “আপু।”
“কী হল?”
“আমরা কি কা-কাবিল কোহকাফীকে উদ্ধার করতে পা-পারব?”
টুশি জোর গলায় বলল, “একশবার পারব। না পারার কী আছে?”
টুশি মনে-মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে তপুকে সাহস দেবার জন্যে অনেক জোর দিয়ে বলেছে একশবার পারবে, না পারার কী আছে! কিন্তু আসলে সে ভেতরে ভেতরে খুব ভয় পাচ্ছে। তার পেটের ভেতরে কেমন যেন পাক দিচ্ছে। যতবার পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করছে ততবার ভয়ে তার হাত-পা শরীরের ভেতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে। মন্তাজ ওস্তাদ, কালাচান আর দবির মিয়ার মতো খারাপ খারাপ মানুষগুলো এখানে আছে। তারা টুশিকে আর তপুকে চেনে, যদি তাদের দেখে ফেলে তখন কী হবে? কাবিল কোহকাফীকে নিশ্চয়ই খুব কড়া পাহাড়ায় শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। তপুকে নিয়ে সে কেমন করে সেখানে যাবে? যদি যেতেও পারে তাকে কি সে মন্ত্রটা বলতে পারবে? যদি বলতেও পারে কাবিল কোহকাফী কি তার কথা শুনতে পাবে?
টুশির শরীর কেমন জানি শক্ত হয়ে যায়–জোর করে সে মনের ভেতর থেকে সবকিছু দূর করে দিতে চেষ্টা করল।
গেটে টিকিট দেখিয়ে টুশি আর তপু ভেতরে ঢুকল। হোটেলের বিশাল বলরুমে আয়োজন করা হয়েছে। সামনে বিশাল স্টেজ। স্টেজ লাল ভেলভেটের পরদা দিয়ে ঢাকা। হলঘরের ভেতরে বেশ ঠাণ্ডা, কুলকুল করে এয়ার কন্ডিশনের বাতাস বইছে। ভেতরে আবছা অন্ধকার দেখে টুশি একটু স্বস্তি পেল, মন্তাজ ওস্তাদ আর তার খারাপ খারাপ সাঙ্গোপাঙ্গগুলো তা হলে তাদের দেখতে পাবে না।
ভেতরে সুন্দর কাপড় পরা অনেক মানুষ, তারা টিকিট পরীক্ষা করে সবাইকে তাদের সিটে বসাচ্ছে। টেলিভিশনের লোকজন ক্যামেরা নিয়ে এসেছে। তারা এখন দর্শকদের দিকে ক্যামেরা তাক করে রেখেছে। যদি হঠাৎ করে তাদের ছবি উঠে যায়, টেলিভিশনে সেটা দেখান হয়–আর চাচা-চাচি সেটা দেখে ফেলেন তা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। টুশি আর তপু মিলে অনেকরকম কায়দা-কানুন করে মিথ্যে কথা বলে এখানে এসেছে। চাচা-চাচিকে বুঝিয়েছে তার বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে যাচ্ছে–একা একা যেতে ইচ্ছে করছে না বলে তপুকে নিয়ে যাচ্ছে। ধরা পড়ে গেলে কী হবে কে জানে।
টুশি আর তপুর সিট ইল সামনের দিকে। তারা দুজনে নিজের সিটে গিয়ে বসল। টুশি ফিসফিস করে তপুকে জিজ্ঞেস করল, “বোতলটা আছে তো?”
তপু পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিশ্চিত হয়ে বলল, “হ্যাঁ আছে।”
ঠিক কী কারণ জানা নেই টুশি আর তপু কাবিল কোহকাফীর বোতলটা সাথে। করে নিয়ে এসেছে। বোতলের উপরে মন্ত্রটা লেখা–সেই মন্ত্র বলার সময় যদি বোতলটা কাছাকাছি থাকে তা হলে কে জানে হয়তো মন্ত্রের জোর আরও বেশি হবে।
তপু কিছুক্ষণ উসখুস করে বলল, “আপু, আমরা ক-কখন ভেতরে যাব?”
টুশি ঘড়ি দেখে বলল, “বেশি আগে যেয়ে কাজ নেই। মানুষের ভিড় আরেকটু বাড় ক।”
তপু জিজ্ঞেস করল, “কো-কোনদিক দিয়ে যাব আপু?”
স্টেজের দুইপাশে দুটি সিঁড়ি ভিতরে ঢুকে গেছে–সেদিক দিয়ে ছাড়া আর যাওয়ার জায়গা নেই। টুশি দেখাল, “ঐ যে ওদিক দিয়ে।”
“যদি আমাদের ধ-ধরে ফেলে?”
“ধরলে ধরবে। দুইজন দুইদিক দিয়ে যাবে। একজন কোনোভাবে ঢুকে যাব, বুঝলি? ভিতরে ঢুকে কাবিল কোহকাফীর খাঁচার কাছে গিয়ে বলব, “মাথা নিচু হাত উঁচু মাগারুফাস মাগারুফাস মাগারুফাস, মনে আছে তো?”
“হ্যাঁ। ম-মনে আছে।”
পরদা ওঠার পর যখন সবাই দেখবে কাবিল কোহকাফী বসে আছে–অদৃশ্য না ছাই তখন বদমাইশগুলো আচ্ছা মতন জব্দ হবে।”
তপু মাথা নাড়ল, “জ-জ-জব্দ হবে।”
টুশি উত্তেজিত গলায় বলল, “বুঝলি তপু এই বদমাইশগুলোর বিজনেসের। আসল ব্যাপারটাই হচ্ছে অদৃশ্য একজন মানুষ। কিন্তু যদি দেখা যায় মানুষটা অদৃশ্য না তা হলেই বিজনেসের বারোটা বেজে যাবে।”
তপু মাথা নাড়ল, “বা-বারোটা বেজে যাবে।”
টুশি মাথা ঘুরিয়ে তাকাল, বিশাল হলঘর মানুষে ভরে যাচ্ছে। বড় বড় মানুষেরা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছে। সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। যারা বড় তাদের চোখেমুখে একধরনের অবিশ্বাসের হাসি, ছোটরা খুবই উত্তেজিত। যারা একটু বেশি ছোট তারা ভয় পেয়ে তাদের বাবা-মাকে ধরে রেখেছে। ঠিক এরকম সময় একটা ভয়ের মিউজিক বাজতে শুরু করল, উপস্থিত সবাই তখন নড়েচড়ে বসে।
টুশি ঘড়ি দেখে বলল, “চল এখন।”
তপু বলল, “আমার ভ-ভয় করছে আপু।”