“কী হল?”
“ই-ই-ইন্টারনেট!”
“ইন্টারনেট?”
“হ্যাঁ।” তপু উত্তেজিত হয়ে বলল, “ই-ইন্টারনেটে খোঁজ করি–সে-সেখানে হয়তো খোঁজ পাওয়া যাবে।”
টুশি হাতে কিল দিয়ে বলল, “ঠিক বলেছিস!” পরমুহূর্তে চিন্তিত হয়ে বলল, “কিন্তু ইন্টারনেট পাব কোথায়?”
“ম-মনে নাই” তপু হড়বড় করে বলল, “স্কুলে যা-যাবার সময় রা-রাস্তায় একটা সা-সাইবার কাফে আছে?”
টুশি আবার হাতে কিল দিয়ে বলল, “ঠিক বলেছিস।”
পরমুহূর্তে আবার সে চিন্তিত হয়ে বলল, “কিন্তু এই শিশিটা ইন্টারনেটে কেমন করে পাঠাব?”
“শিশিটাতো পা-পাঠানো যাবে না। শিশির উপরের লে-লেখাটা স্ক্যান করে পা-পাঠাব।”
টুশি আবার হাতে কিল দিয়ে বলল, “ঠিক বলেছিস! আয় তা হলে কাজ শুরু করে দিই।”
একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে খুব সাবধানে পরীক্ষা করে টুশি আর তপু শিশির উপরের লেখাটা প্রথমে একটা কাগজে লিখে নিল। তারপর দুজন ছুটলো। সাইবার কাফের দিকে।
টুশি আর তপু এর আগে কখনও সাইবার কাফেতে আসে নি। কী করে কী করতে হয় দুজনের কেউই জানে না। সাইবার কাফের কর্মচারীটি তাদের দুজনকে একটা কম্পিউটারের আসনে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল, দুজনে মিলে যখন কী-বোর্ড আর মাউস নিয়ে ধস্তাধস্তি করছে তখন পাশের কম্পিউটারে বসে থাকা এলোমেলো চুলের তেরো-চোদ্দ বছরের টিশার্ট পরা একটা ছেলে জিজ্ঞেস করল, “তোমরা কী করছ?”
টুশি এবং তপু দুজনেই একটু সন্দেহের চোখে ছেলেটার দিকে তাকায়। কিন্তু ছেলেটা সেটা লক্ষ করল বলে মনে হল না, গলা নামিয়ে বলল, “এই সাইবার কাফে মহা গিরিংগিবাজ–কী করতে চাও যদি না জান হলে ছিল খেয়ে যাবে।”
টুশি আর তপু কিছু বলল না। ছেলেটা তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে মেশিনের মতো কি-বোর্ডে কিছু-একটা টাইপ করতে করতে বলল, “তোমরা নূতন মক্কেল। কোন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করছ?”
“না মানে”
ছেলেটা বাম হাত দিয়ে মাউস ক্লিক করে কিছু-একটা ঘটিয়ে দিয়ে বলল, “কী করতে চাও?”
টুশি তখন কাগজটা বের করে সেই বিচিত্র লেখাটা দেখিয়ে বলল, “এইখানে কী লেখা সেটা বের করতে চাই!”
টুশি নিশ্চিত বড় কোনো মানুষকে এই কথা বললে সে হয় হা হা করে হেসে উঠত নাহয় ধমক দিয়ে বসত। কিন্তু টিশার্ট পরা এলোমেলো চুলের ছেলেটা তার কিছুই করল না, মুখটা ছুঁচালো করে বলল, “ভেরি ইন্টারেস্টিং। এনক্রিপশান প্রবলেম। তিনটা ইউজার গ্রুপ আছে তার মাঝে দুইটা সুপার।”
টুশি আর তপু কী বলবে বুঝতে পারল না। ছেলেটা কাগজটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নানাদিক থেকে দেখে বলল, “কোথায় পেয়েছ?”
“এটা একটা খুব পুরানো ভাষায় লেখা।”
ছেলেটা চোখ কপালে তুলে বলল, “কসম?”
টুশি বলল, “কসম।”
ছেলেটা এবারে চোখ ঘুরিয়ে বলল, “মাইয়ারে মাইয়া।”
কথাটার মানে কী টুশি কিংবা তপু কেউই বুঝতে পারল না বলে দুজনেই চুপ করে রইল। ছেলেটা কম্পিউটারে খুটখাট করতে করতে বলল, “তোমাদের ই মেইল অ্যাড্রেস আছে?”
তপু মাথা নাড়ল, “না–নাই।”
“এই লেখাটা স্ক্যান করেছ?”
তপু মাথা নাড়ল, “না।”
“যাও, আগে স্ক্যান করিয়ে আনো। আমি ততক্ষণে তোমাদের একটা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলে দিই।”
টিশার্ট পরা উশকো-খুশকো চুলের ছেলেটা থাকার কারণে আধা ঘণ্টার মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন ভাষায় বিশেষজ্ঞ এরকম অনেক মানুষের কাছে এই লেখাটা পাঠানো হয়ে গেল। ছেলেটা বলল, যদি কেউ এর সমাধান বের করতে পারে তা হলে আজ কালকের মাঝেই তাদের সেটা জানিয়ে দেবে। টুশি আর তপুকে সাইবার কাফেতে এসে প্রত্যেক দিন তাদের ই-মেইল পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো উত্তর এসেছে কি না।
সত্যি কথা বলতে কি কোনো উত্তর চলে আসবে সেটা টুশি কিংবা তপু কেউই একেবারে আশা করে নি। তাই পরের দিন স্কুল থেকে আসার সময় যখন সাইবার কাফেতে গিয়ে তাদের ই-মেইল এসেছে কি না পরীক্ষা করতে গেল তখন তারা অবাক হয়ে দেখল সত্যি সত্যি চারটা ই-মেইল চলে এসেছে। প্রথম ই-মেইলটাতে লেখা :
“তোমরা যে লেখাটি পাঠিয়েছ আমি সেটা সম্পর্কে পরিচিত নই। লেখার গঠনভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে এটা প্রাচীন হিব্রু ভাষায় একটি অপভ্রংশ।” দ্বিতীয় ই-মেইলটাতে লেখা :
“তোমাদের লেখাটি দেখে মনে হচ্ছে এটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে তাইগ্রিস নদীর তীরে গড়ে-ওঠা একটি সভ্যতার লিপি। এই লিপিটি বর্তমানে মৃত। তোমরা কোথায় এটি পেয়েছ জানার জন্যে খুব আগ্রহী। তৃতীয় ই-মেইলটাতে লেখা :
“তোমাদের পাঠানো ই-মেইলে সংযুক্ত লিপিটি পেয়ে আমি চমৎকৃত হয়েছি। এটি অধুনালুপ্ত কিফুস ভাষার লিখনলিপি। আমি দীর্ঘদিন থেকে এই ভাষার উপরে গবেষণা করছি। এখানে লেখা : কাবিল তুমি দুই হস্ত প্রসারণ করে মস্তিষ্ক নত করো, উচ্চারণ করে উচ্চকণ্ঠে, মাগারুফাস মাগারুফাস এবং মাগারুফাস। এই লিপিটি কোথা থেকে সংগ্রহ করেছ আমাকে জানাও। আমাদের জাতীয় মিউজিয়াম এর প্রকৃত কপিটি সংগ্রহ করতে আগ্রহী হবে।”
চতুর্থ ই-মেইলটি পাঠিয়েছে একজন বদমেজাজি প্রফেসর, সে লিখেছে : “ভবিষ্যতে আমাকে এই ধরনের আজেবাজে জিনিস পাঠালে মাথা ভেঙে দেব। দূর হও হতভাগা সকল।”
অন্য তিনটি ই-মেইল পেয়ে টুশি আর তপু এত খুশি হয়ে গেল যে বদমেজাজি প্রফেসরের ই-মেইলটির জন্যে তারা কিছু মনে করল না। যিনি এই রহস্যময় লেখাটার অনুবাদ করে পাঠিয়েছেন টুশি আর তপু তাঁকে বিশাল লম্বা একটা চিঠিতে সবকিছু লিখে পাঠাল। মানুষটা নিশ্চয়ই কিছু বিশ্বাস করবেন না কিন্তু টুশি আর তপু সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না। অন্য যে-দুজন তাদের কাছে ই-মেইল পাঠিয়েছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ দিয়ে সাথে সাথে উত্তর পাঠিয়ে দিল।