উত্তরে নাকি গলায় মানুষটা ঘোড়ার মতো শব্দ করে হাসল, “ইহ হি হি হি “
টুশি তখন রেগেমেগে ফোনটা রেখে দিল।
তপু বলল, “আপু অন্য পত্রিকায় ফো-ফোন করো।”
তখন দুজনে মিলে খোঁজাখুঁজি করে আরেকটা পত্রিকা অফিসে ফোন করল। অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর একজন মানুষ টেলিফোন ধরে বলল, “হ্যালো।”
টুশি এবারে গলার স্বর একটু মোটা করে বড় মানুষের মতো ভঙ্গি করে বলার চেষ্টা করল, “দেখেন আমি খুব জরুরি একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাই। কার সাথে কথা বলব?”
“একটু ধরেন”
টুশি এবারে একটু ভরসা পায়, মানুষটি তাকে আপনি করে বলছে। খানিকক্ষণ পর আরেকজন ফোন ধরে বলল, “বার্তা-সম্পাদক–
টুশি আবার গলার স্বর একটু মোটা করে বড় মানুষদের মতো করে বলল, “আমরা আপনাদের কাছে একটা কিডন্যাপিং রিপোের্ট করতে চাই।”
“পুলিশকে জানানো হয়েছে?”
“পুলিশকে জানিয়েছিলাম তারা শুনতে রাজি হয় নাই।”
“হুম।” বার্তা-সম্পাদক বলল, “কে কিডন্যাপ হয়েছে? আপনার কী হয়?”
টুশি ইতস্তত করে বলল, “আমাদের কেউ না। মানুষটা মানে ইয়ে আসলে”।
“কত বয়স?”
“এ-এক হাজার”।
“কী বললেন? এক হাজার? আমার সাথে ঠাট্টা করছেন?”
টুশি তাড়াতাড়ি বলল, “না-না-না ঠাট্টা করছি না। আসলে হয়েছে কি ব্যাপারটা খুব অস্বাভাবিক। যাকে কিডন্যাপ করেছে সে আসলে অদৃশ্য–”
উত্তেজনার কারণে টুশি গলার স্বর মোটা রাখতে ভুলে গেল–আর অন্য পাশের মানুষটা রেগে গিয়ে বলল, “শোনো মেয়ে, আমরা খুব ব্যস্ত মানুষ, তোমার ইয়ার্কি করার অনেক সময় থাকতে পারে, আমাদের এরকম জিনিস নিয়ে নষ্ট করার সময় নেই।”
টুশি ব্যস্ত হয়ে বলল, “বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি কথা বলছি। সবকিছু শোনেন তা হলে বুঝতে পারবেন।”
বার্তা-সম্পাদক বলল, “এক হাজার বছরের অদৃশ্য মানুষের কিডন্যাপিং হওয়ার খবর ছাপানোর কিছু ট্যাবলয়েড পত্রিকা আছে। সেখানে ফোন করো, তারা তোমার ইন্টারভিউ পর্যন্ত ছাপিয়ে দেবে।”
টুশি উত্তরে কিছু-একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই বার্তা-সম্পাদক খটাশ করে টেলিফোন রেখে দিয়েছে। টুশির যা মেজাজ খারাপ হল সেটি আর বলার মতো নয়।
.
পুলিশ আর পত্রিকার সাথে বেশি সুবিধে করতে না পেরে টুশি আর তপু শেষ পর্যন্ত একদিন চাচা-চাচিকে ব্যাপারটা খুলে বলার চেষ্টা করল। সকালবেলা সবাই নাস্তা করছে, তখন টুশি বলল, “চাচা, আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।”
“কী কথা?”
“আপনার মনে আছে, একরাতে আমি আর তপু বাসায় একা একা ছিলাম?”
চাচা ভুরু কুঁচকে বললেন, “হ্যাঁ, কী হয়েছে তখন?”
“সকালবেলা বাসায় এসে আপনি একটা অদৃশ্য জিনিসের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলেন, মনে আছে?”
চাচা সরু চোখে বললেন, “আমি কোনো অদৃশ্য জিনিসের সাথে ধাক্কা খাই নি। আমি ডাক্তারকে দেখিয়েছি, ডাক্তার বলেছে মাইল্ড স্ট্রোকের মতো। ব্লাডপ্রেশার খুব বেশি ছিল বলে–”
“না, চাচা। ব্লাডপ্রেশার না, আপনি আসলে একটা অদৃশ্য মানুষের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলেন। ঠিক মানুষ না, জিন। একটা শিশি থেকে বের হয়েছে।”
চাচা একটা কথাও না বলে চোখ বড় বড় করে টুশির দিকে তাকিয়ে রইলেন, খানিকক্ষণ কোনো শব্দ নেই। চাচা খুব সাবধানে চাচির দিকে একবার তাকালেন তারপর আবার টুশির দিকে তাকালেন তারপর আবার চাচির দিকে তাকালেন। চাচি ভুরু দিয়ে একটা ইঙ্গিত করলেন যার অর্থ “এই-মেয়ে-পাগল-একে-ঘাঁটিও না।” চাচা তখন টুশির দিকে তাকিয়ে মুখে একটা অত্যন্ত মধুর হাসি ফুটিয়ে বললেন, “অবশ্যই শিশি থেকে বের হয়েছে। জিন যদি শিশি থেকে বের না হয় তা হলে কি মশা বের হবে?”
টুশি একটুকু অস্থির হয়ে বলল, “চাচা আপনি বিশ্বাস করছেন না? আমি সত্যি কথা বলছি। তা-ই নারে তপু?”
তপু মাথা নাড়ল, চাচি মাথা নাড়লেন এবং চাচাও মাথা নাড়লেন। চাচা জোরে জোরে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “কে বলেছে আমি বিশ্বাস করছি না? আমি অবশ্যই বিশ্বাস করেছি। অদৃশ্য জিন তো থাকতেই পারে। জিন যদি অদৃশ্য না হয় তা হলে কে অদৃশ্য হবে? তা হলে কি মানুষ অদৃশ্য হবে?”
টুশি হঠাৎ করে কেমন যেন হাল ছেড়ে দেয়। চাচা-চাচি কোনোভাবেই এটা বিশ্বাস করবেন না, লাভের মাঝে লাভ হল যে চাচা-চাচি তাকে একটা পাগল ভেবে নিলেন।
টুশি আবিষ্কার করল চাচা আর চাচি ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে তার দিকে তাকাচ্ছেন, কে জানে এখন তাকে জোর করে একটা পাগলা-গারদে ভরতি না করে দেন। টুশি কী করবে বুঝতে পারল না, রাগে-দুঃখে তার নিজের হাত কামড়াতে ইচ্ছে করল।
.
এই ঘটনার দুইদিন পর খবরের কাগজ খুলে টুশি আর তপু স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। খবরের কাগজের ভিতরে পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে বিজ্ঞাপন, সেখানে বড় বড় করে লেখা :
অদৃশ্য দানব! অদৃশ্য দানব!! অদৃশ্য দানব!!!
বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে বড় অলৌকিক ঘটনা। নিজের চোখে দেখুন, ইতিহাসের অংশ হোন। মানুষরূপী একটি ভয়ংকর রক্তপিপাসু হিংস্র প্রাণী সম্প্রতি ধরা পড়েছে। এই প্রাণীটি পুরোপুরি অদৃশ্য–তাকে প্রথমবারের মতো মঞ্চে নিয়ে আসা হচ্ছে।
নিজের চোখে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় অলৌকিক ঘটনাটি দেখুন। এই অদৃশ্য দানবের উপর বিশেষ প্রতিবেদন আজকে রাত সাড়ে আটটায় টেলিভিশনে।
টিকিটের জন্যে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন।
.
টুশি আর তপু অনেকক্ষণ কথা বলতে পারে না। তপু শেষ পর্যন্ত বলল, “কা কাবিল কোহকাফী মোটেই ভ-ভয়ংকর না।”