“গতকাল মতিঝিলের একটি ব্যস্ত সড়কে একটি শিশু নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা যায় যে একটি শিশু হঠাৎ করে রাস্তা পার হওয়ার জন্যে দৌড় দিয়ে একটি চলন্ত ট্রাকের সামনে পড়ে যায়। ট্রাক ড্রাইভার তার চলন্ত ট্রাক থামাতে সক্ষম না হলেও শিশুটি সম্পূর্ণ অলৌকিকভাবে ট্রাকের তলা থেকে রাস্তার একপাশে চলে আসে। শিশুটি জানায় তার মনে হয়েছে যে কোনো-একজন মানুষ তাকে টেনে রাস্তা থেকে সরিয়ে এনেছে যদিও প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে কোনো মানুষ দেখে নি।
এই অলৌকিক ঘটনার পর শিশুটি “পিচ্চি পীর” নামে পরিচিত হয়েছে এবং স্থানীয় মানুষেরা তার থেকে পানি পড়া নেয়ার জন্যে ভিড় জমাচ্ছে। শিশুটির পিতা তার সন্তানের জন্যে একটি খানকায়ে শরিফ স্থাপনের জন্যে ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন।”
.
এর পরের দিন যে-খবরটি কাবিল কোহকাফীকে পড়ে শোনাতে হল সেটি এরকম :
পুলিশ সার্জেন্ট নাজেহাল
“গতকাল মহাখালি এলাকায় একজন পুলিশ সার্জেন্টকে অত্যন্ত বিচিত্র উপায়ে নাজেহাল হতে দেখা গেছে। খবরে প্রকাশ এই পুলিশ সার্জেন্ট একটি চলমান ট্রাককে থামিয়ে প্রকাশ্যে ট্রাক ড্রাইভারের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করে। ট্রাকটি চলে যাবার পর পুলিশ সার্জেন্ট সরে যাওয়ার চেষ্টা করে রাস্তার উপর পড়ে যায়। সে কিছুতেই হাঁটতে পারছিল না এবং তাকে ঘিরে একটি ভিড় জমে যায়।
পুলিশ সার্জেন্টকে ধরাধরি করে রাস্তার পাশে নিয়ে যাবার পর দেখা যায় তার জুতোর দুটি ফিতা গিঁট দিয়ে বেঁধে রাখার কারণে সে হাঁটতে পারছিল না।
কে কীভাবে তার জুতোর ফিতায় গিঁট দিয়েছে সেটি এখনও রহস্যাবৃত তবে ঘটনাটি এই এলাকায় কৌতুকের সৃষ্টি করেছে।”
.
এর পরের দিন কাবিল কোহকাফীকে যে খবরটি পড়ে শোনানো হচ্ছিল, সেটি এরকম :
স্কুলছাত্রীর সাহসিকতা
স্কুলছাত্রীকে উত্যক্ত করার কারণে কীভাবে সে কিছু বখাটে ছাত্রকে তুলোধুনা করেছে সেই খবরটি যখন মাত্র পড়তে শুরু করেছে ঠিক তখন টুশি শুনতে পেল কে যেন দরজা খুলে ঘরে ঢুকেছে।
টুশি এবং তপু মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যায়। দরজায় মন্তাজ ওস্তাদ, কালাচান এবং দবির মিয়া। মন্তাজ ওস্তাদের হাতে একটা রিভলবার, দবির মিয়ার হাতে একটা কাটা রাইফেল এবং কালাচান একটা বড় বস্তা ধরে রেখেছে। টুশি কয়েক সেকেন্ড কোনো কথা বলতে পারল না, হাঁ করে এই তিন মূর্তির দিকে তাকিয়ে রইল। তপু বলল, “ততা-তো-তোমরা? পু-পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে?”
মন্তাজ ওস্তাদ বলল, “না, ছাড়ে নাই।”
“তা হলে?”
“তোমার বাবা খুব বুদ্ধিমান মানুষ। তাই আমাদেরকে পুলিশে দেয় নাই। পুলিশের সাথে আমাদের খুব খাতির, পুলিশ আমাদের কখনও ধরে না।”
টুশি চোখের কোনা দিয়ে একবার কাবিলকে দেখল, কাবিল কোহকাফী যতক্ষণ ঘরে আছে তাদের কোনো ভয় নেই। সে চোখ পাকিয়ে বলল, “তোমরা কেন বাসায় এসেছ? এক্ষুনি বের হয়ে যাও।”
মন্তাজ ওস্তাদ চোখ টিপে বলল, “না গেলে কী করবে খুকি?”
“আগেরবার তো মাত্র একটা দাঁত ভাঙা হয়েছিল–এবার সবগুলো দাঁত ভেঙে দেয়া হবে।”
মন্তাজ ওস্তাদ এগিয়ে এসে খপ করে টুশির ঘাড় ধরে নিজের কাছে টেনে এনে তার মাথার কাছে রিভলবারটা ধরে বলল, “বেয়াদপ মেয়ে, বড়দের সাথে কেমন করে কথা বলতে হয় কেউ শেখায় নি?”
টুশি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। ততক্ষণে কালাচান তার বস্তা নিয়ে চলে এসেছে। বস্তা খুলতেই টুশি দেখল তার ভেতরে মুড়ি। এক বস্তা মুড়ি নিয়ে এই মানুষটি এখানে কেন এসেছে টুশি বুঝতে পারল না। সে অবাক হয়ে। দেখল কালাচান মুড়িগুলো মেঝেতে ঢালতে শুরু করেছে এবং দেখতে দেখতে সারা মেঝে মুড়িতে ঢেকে গেল!
টুশি অবাক হয়ে এই মানুষগুলোর কাজকর্ম দেখছিল–তার মাকে মন্তাজ ওস্তাদ তার মাথার পিছনের চুল ধরে তার মুখটি নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল, “বেয়াদপ মেয়ে–তোমার এই কালা কুচ্ছিৎ চেহারা নিয়ে তো তোমার মনে খুব দুঃখ। আমি কী করব জান?”
টুশি অবাক হয়ে মন্তাজ ওস্তাদের দিকে তাকাল–সে কেমন করে জানে যে চেহারা নিয়ে তার মনে দুঃখ? মন্তাজ ওস্তাদ তার ফোকলা দাঁত দিয়ে পিচিক করে একটু থুতু ফেলে বলল, “আমি এখন রিভলবারের বাঁট দিয়ে তোমার নাকটা ভেঙে ফেলব। তোমার কুৎসিত চেহারা তখন আরও কুৎসিত হয়ে যাবে!”
টুশি ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল, “ছাড়ো আমাকে ছাড়ো বলছি।”
মন্তাজ ওস্তাদ বলল, “এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? তোমাকে রেডি হওয়ার একটু সময় দিচ্ছি। আমি বলব ওয়ান টু থ্রি তারপর মারব তোমার নাকে। ঠিক আছে
টুশি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু মানুষটার হাত লোহার মতো শক্ত, কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারে না। মন্তাজ ওস্তাদ বলল, “ওয়ান।”
কাবিল কোহকাফী এতক্ষণ চুপ করে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিল, এবারে সে টুশিকে বাঁচানোর জন্যে এগিয়ে এল। ঠিক তখন হঠাৎ করে টুশি মুড়ির রহস্য বুঝতে পারল। এই মানুষগুলো কাবিলকে দেখতে পায় না কিন্তু হাঁটার সময় মুড়িতে পা দিলে তার পায়ের চাপে মুড়িগুলো গুঁড়ো হয়ে যায় তারা সেই গুঁড়ো হয়ে যাওয়া মুড়ি দেখে বুঝতে পারে কাবিল কোথায় আছে। তিনজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে ছিল এবং কাবিল ঠিক কোনদিক দিয়ে টুশির কাছে এগিয়ে আসছে বুঝতে পারল। টুশি সাবধান করার জন্যে চিৎকার করে বলল, “না–কাবিল না–”