“এইগুলো তো সবাই পারে! তুমি উলটোটা পার কী না বলো। লুলা ঠ্যাং ঠিক করতে পার? কানা চোখ ভালো করতে পার? খারাপ চেহারা ভালো করতে পার?”
কাবিল কোহকাফী মাথা চুলকে বলল, “পারার কথা! তোমরা তো জান জিন হচ্ছে খুব উঁচু পর্যায়ের একটা ব্যাপার। আমাদের অনেক ক্ষমতা!”
“ওহ্!” টুশি অধৈর্য হয়ে বলল, “তুমি সোজাসুজি বলে দাও না–আমার চেহারাটা তুমি ভালো করে দিতে পারবে কি না!”
কাবিল কোহকাফী ইতস্তত করে বলল, “মনে হয় পারব।”
টুশি সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “কেন? মনে হয় কেন? তুমি শিওর না কেন?”
“কারণ এইসব কাজকর্মের জন্যে অনেক প্র্যাকটিস করতে হয়। কেউ বেশি পারে, কেউ কম পারে।”
তপু জিজ্ঞেস করল, “তুমি বেশি পার না কম পার?”
“আমি?” কাবিল কোহকাফী একটু ইতস্তত করে বলল, “আমি–মানে আসলে হয়েছে কি-শাহজাদি দুনিয়ার পিছনে ঘুরোঘুরি করে ইয়ে মানে”।
টুশি মাথা নেড়ে বলল, “তার মানে তুমি পার না। তুমি হচ্ছ অপদার্থ জিন। লাফাংরা।”
“লাফাংরা?”
“হ্যাঁ। লাফাংরা মানে হচ্ছে ফালতু।”
কাবিল কোহকাফী রেগে গিয়ে বলল, “আমি মোটেও লাফাংরা না। প্রত্যেক দিন পত্রিকায় আমার উপর খবর বের হয়।”
“সেটাতে তোমার কোনো কেরানি নাই। মানুষ অদৃশ্য হলে এগুলো করতেই পারে। যে-কেউ পারবে। আমি অদৃশ্য হলে আমিও করতে পারব।” টুশি মুখ শক্ত করে বলল, “যদি পার তা হলে আমার চেহারাটা ঠিক করে দাও।”
কাবিল কোহকাফী টেবিলে থাবা দিয়ে বলল, “ঠিক আছে! আমি যদি জিনের বাচ্চা জিন হই, কোহকাফ নগরের আগুন দিয়ে যদি আমার শরীর তৈরি হয়ে থাকে তা হলে এক সপ্তাহের মাঝে তোমার চেহারাকে আমি আগুনের খাপরার মতো সুন্দর করে দেব!”
তপু জিজ্ঞেস করল, “আ-আগুনের খাপরা?”
“হ্যাঁ। তোমার গায়ের রং হবে বেদানার মতো, ভুরু হবে ধনুকের মতো, চোখ। হবে ভ্রমরের মতো, দাঁত হবে মুক্তার মতো–”
টুশি লজ্জা পেয়ে বলল, “এত কিছুর দরকার নাই। শুধু দেখে যেন কেউ নাক না সিঁটকায়, তা হলেই হবে।”
তপু জিজ্ঞেস করল, “তু-তুমি কেমন করে করবে?”
“একটা জিন জীবনে কমপক্ষে একটা জাদু করতে পারে। আমি সেই জাদুটা করব!”
“কীভাবে ক-করবে?”
“আসল সোলেমানি জাদু নামে একটা বই আছে। দুই হাজার বছর আগের বই। সেই বইটা যোগাড় করতে হবে। সেইখানে জিনদের সব জাদুর কথা লেখা আছে।”
“কী কী জাদু আছে সেখানে?”
“সবরকম জাদু। মানুষকে কীভাবে টিকটিকি বানাতে হয়। লোহাকে কীভাবে সোনা বানাতে হয়। আকাশে কীভাবে উড়তে হয়। অত্যাচারী রাজাকে কীভাবে শাস্তি দিতে হয়। সবকিছু আছে।”
“কীভাবে অ-অদৃশ্য হতে হয় সে-সেটা লেখা আছে?”
কাবিল কোহকাফী মাথা চুলকে বিমর্ষ হয়ে বলল, “সেটা মনে হয় নাই।”
“কেন নাই?”
“কারণ এইটা অনেক বড় জাদু। সবাই পারে না।”
টুশি জিজ্ঞেস করল, “তা হলে তুমি অদৃশ্য হয়ে আছ কেমন করে?”
“আমাকে অনেক বড় জাদুকর বাণ মেরে অদৃশ্য করে রেখেছে। শাহজাদি দুনিয়ার নানি ছিল আসল ডাইনি বুড়ি। শাহজাদি দুনিয়া যখন ট্রিক্স করে আমাকে বোতলের মাঝে ভরে দিল–সেই ডাইনি বুড়ি তখন বোতলের মুখ লাগিয়ে বাণ মেরে দিয়েছে!”
“তা হলে তোমাকে কখনও কেউ দেখবে না?”
কাবিল কোহকাফী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কেউ যদি সেই বাণ ছুটাতে পারে তা হলে দেখবে।”
টুশি জিজ্ঞেস করল, “সেই বাণ কেমন করে ছোটাবে?”
“ডাইনি বুড়ি সেটা জানি কোথায় লিখে রেখেছে।”
“কোথায়?”
“সেটা তো জানি না। শাহজাদি দুনিয়া অনেক অনুরোধ করল তখন মন্ত্রটা লিখে দিল।”
তপু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তা-তা হলে তোমাকে আর কেউ কখনও দে-দেখবে না?”
কাবিল কোহকাফী মুখ কালো করে বলল, “নাহ্।”
টুশি জিজ্ঞেস করল, “তা হলে আমরা দুইজন কেমন করে দেখি?”
কাবিল কোহকাফী মাথা চুলকে বলল, “সেইটা আমি জানি না। মনে হয় আমি যখন বোতল থেকে বের হই তখন সেই ধোঁয়া তোমাদের নাকে গেছে। মনে হয় সেই ধোঁয়া যাদের নাকে যায় তারা দেখতে পায়?”
যুক্তিটা টুশির খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না, কিন্তু সে সেটা নিয়ে আপত্তিও করল না।
তপু কথা বলতে বলতে জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকিয়ে কিছু-একটা দেখে ভালো করে দেখার জন্যে পরদা তুলে তাকাল। টুশি জিজ্ঞেস করল, “কী দেখিস?”
“একটা মা-মাইক্রোবাস।”
“মাইক্রোবাসে দেখার কী আছে?”
“না, কেমন জানি স-সন্দেহ হচ্ছে।”
“কী সন্দেহ?”
“কয়েকবার এদিক ঘু-ঘুরেছে। এখন রাস্তার পা-পা-পাশে দাঁড়িয়ে আছে! প পরদা দিয়ে ঢাকা। ভেতরে কে দে-দে-দেখা যায় না।”
টুশি হাত দিয়ে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, “ধুর! ঢাকা শহরে কয় হাজার মাইক্রোবাস আছে তুই জানিস?”
টুশির কথা সত্যি। ঢাকা শহরে আসলেই কয়েক হাজার মাইক্রোবাস আছে। তবে এটি ছিল একটি বিশেষ মাইক্রোবাস। এর ভিতরে মন্তাজ ওস্তাদ, কালাচান। আর দবির মিয়া ছাড়াও আরও দুইজন মানুষ ছিল। শুধু মানুষ নয়, টুশিদের বাসাটাকে চোখে-চোখে রাখার জন্যে এই মাইক্রোবাসটা যন্ত্রপাতিতে বোঝাই করা ছিল। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তপু জানতেও পারল না দামি ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে ঠিক সেই মুহূর্তে তার ভিডিও করে কম্পিউটারে সেটা বিশ্লেষণ করা শুরু করে দেয়া হয়েছে!
পরদিন যে-খবরটি কাবিল কোহকাফীকে পড়ে শোনাতে হল সেটি ছিল এরকম :
নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা