কালাচান এবং দবির মিয়া একসাথে মাথা নাড়ল, “মনে আছে।”
“এখন বুঝতে পেরেছ কেন আজকে আমাদের সৌভাগ্যের দিন? আনন্দের দিন?”
কালাচান মাথা চুলকে বলল, “জে না ওস্তাদ।”
মন্তাজ ওস্তাদ রেগে বলল, “আরে বেকুব, এই সহজ জিনিসটাও বুঝিস না! এই অদৃশ্য মানুষের কথা জানে খালি সেই ছেমড়া আর ছেমড়ি! তাদের দুইজনরে ধোকা দিয়ে আমরা অদৃশ্য মানুষরে ধরে আনব!”
“কী বলেন ওস্তাদ?”
“হ্যাঁ। তারপরে বিজনেস। একটা অদৃশ্য মানুষ কত টাকায় বিক্রি হবে জানিস? বিক্রি করার আগে শো করা হবে। সার্কাসে সার্কাসে দেখানো হবে। দশ লাখ মানুষ দুইশ টাকা টিকিট দিয়ে দেখতে আসবে–”
দবির মিয়া মাথা চুলকে বলল, “যারে দেখা যায় না তারে কেমন করে দেখবে?”
“আরে গাধা যেটা দেখা যায় সেইটা কি পয়সা দিয়ে কেউ দেখতে আসে? যেটা দেখা যায় না মানুষ সেইটাই পয়সা দিয়ে দেখে।” মন্তাজ ওস্তাদ তার দাঁতের ব্যথা ভুলে গিয়ে দুলে দুলে হাসতে লাগল।
কালাচান জিজ্ঞেস করল, “অদৃশ্য মানুষরে কেমন করে ধরবে ওস্তাদ?”
মন্তাজ ওস্তাদ মাথায় টোকা দিয়ে বলল, “চিন্তাভাবনা করে। এইবারে কোনো ভুল যেন না হয়।”
“হবে না ওস্তাদ।”
“কাজ শুরু করার আগে দরকার খোঁজখবর। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে বাসার সামনে রেখে সেখান থেকে এই বাসার উপরে খোঁজখবর রাখতে হবে। বাসার ভিতরে গোপন মাইক্রোফোন রেখে কথাবার্তা শুনতে হবে”।
দবির মিয়া দাঁত বের করে হেসে বলল, “একেবারে হলিউডের সিনেমার মতন!” মন্তাজ ওস্তাদ দাঁতের ফাঁক দিয়ে পিচিক করে থুতু ফেলে বলল, “হলিউডের সিনেমাও এইবারে ফেইল মারবে। আমরা হব হলিউডের সিনেমার বাপ!”
১২. কিডন্যাপ
কাবিল কোহকাফী খাবার টেবিলে পা ঝুলিয়ে বসে কলা খাচ্ছে। খেতে খেতে বলল, “আরেকবার পড়ো দেখি টুশি।”
টুশি বলল, “এক জিনিস কতবার পড়ব?”
কাবিল কোহকাফী কলায় একটা কামড় দিয়ে বলল, “আহ্! পড়ো না একবার!”
টুশি আর তপু স্কুল থেকে এসে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে এসে দেখে বাসায় চাচা বা চাচি নেই। কাবিল কোহকাফী ডাইনিং-টেবিলে বসে কলা খাচ্ছে। আজকাল প্রায় প্রত্যেক দিনই তার কোথাও-না-কোথাও একটা অ্যাডভেঞ্চার হয়, পরদিন সেটা খবরের কাগজে ছাপা হয়। টুশিকে পরদিন তাকে সেটা পড়ে শোনাতে হয়।
টুশি পড়তে শুরু করল, “দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাত ছলিম গ্রেফতার। গতকাল দুপুরবেলা মতিঝিলে ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে ছলিম নামে একজন দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাত ধরা পড়েছে। খবরে প্রকাশ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সে প্রায় এগারো লক্ষ টাকা নিয়ে পলায়ন করার সময় হঠাৎ করে ফুটপাথে আছাড় খেয়ে পড়ে। সে উঠে দৌড়াতে শুরু করার পর আবার আছাড় খেয়ে পড়ে। ব্যাংকের সামনে তার সহযোগীরা গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত ছিল এবং মাত্র ত্রিশ থেকে চল্লিশ ফুট স্থান অতিক্রম করতে গিয়ে এই দুর্ধর্ষ ডাকাত ছলিম ক্রমাগত আছাড় খেয়ে পড়তে থাকে এবং তখন পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে।
“দুর্ধষ ব্যাংক ডাকাত ছলিম পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি করার সময় জানায় যে তার মনে হচ্ছিল পায়ের ভেতর অন্য কেউ পা প্রবেশ করিয়ে তাকে ফেলে দিচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল না।
“সংবাদদাতা একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করার পর ডাক্তার বলেছেন এটি সম্ভবত মাংশপেশি এবং স্নায়ুর একটি দুরারোগ্য রোগ। রোগটি সংক্রামক হতে পারে সন্দেহ করে এই দুর্ধর্ষ ডাকাত ছলিমকে হাজতে আলাদা করে রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়।
“পুলিশ সূত্র জানায় এ ব্যাপারে জোর তদন্ত চলছে।”
টুশি পড়া শেষ করে কাবিল কোহকাফীর দিকে তাকাল–কাবিল কোহকাফী তখন দুলে দুলে হাসছে। তৃতীয় কলাটাতে একটা কামড় দিয়ে বলল, “তোমরা যদি ছলিম ডাকাতের অবস্থাটা দেখতে তা হলে হাসতে হাসতে মারা যেতে!”
টুশি বলল, “আচ্ছা কাবিল কোহকাফী, মানুষকে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়া ছাড়া তুমি আর অন্য কিছু করতে পার না?”
“অন্য কী?”
টুশি একটু ইতস্তত করে বলল, “আমরা আরব্য রজনীতে পড়েছি জিনেরা আরও কত কী করতে পারে! আকাশে উড়তে পারে। বড় হতে পারে ছোট হতে পারে। মানুষের ইচ্ছাপূরণ করতে পারে।”
“কে বলেছে পারি না। আমিও পারি।”
“তা হলে সেগুলো করে দেখাও না কেন?”
“কী দেখতে চাও?”
“যেমন মনে করো–” টুশি হঠাৎ ইতস্তত করে থেমে যায়।
তপু বলল, “আমি বু-বুঝেছি আপু কী চায়!”
কাবিল তপুর দিকে তাকাল, “কী চায়?”
“টু-টুশি আপু মনে করে তার চেহারা বেশি ভালো না, সেইজন্যে চেহারাটা সু-সুন্দর করতে চায়!”
কাবিল কোহকাফী হা হা করে হেসে উঠল। টুশি একটু রেগে উঠে বলল, “কী হল, তুমি হাসছ কেন? এইটা কি হাসির ব্যাপার?”
কাবিল মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ এইটা হাসির ব্যাপার। কারণ চেহারার মাঝে ভালো আর খারাপ নাই। মানুষ ভালো হলে চেহারাটা ভালো লাগে, মানুষ খারাপ হলে তার চেহারাটাও খারাপ লাগে।”
টুশি কঠিন মুখ করে বলল, “যাক আর বড় বড় কথা বলতে হবে না। তুমি বলো আমার চেহারা তুমি ভালো করে দিতে পারবে কি না।”
“চেহারার পরিবর্তন তো আমাদের জন্যে ডালভাত। আমরা জিনেরা হচ্ছি এর এক্সপার্ট। ভালো চেহারা খারাপ করে দিতে পারি। ভালো ঠ্যাং লুলা করে দিতে পারি। ভালো চোখ কানা করে দিতে পারি”।