আমি চেষ্টা নিব। যাও খেতে যাও। আজ তোমাদের বাসায় রান্না কি?
গরুর মাংস। দুপুরে গরুর মাংস এনেছিলাম। এরা দুপুরে যা রাঁধে রাতে সেটাই খায়। রাতে ভাত ছাড়া আর কিছু রান্না হয় না। দুপুরে যদি ডাল শেষ হয়ে যায়, রাতে আর ডাল রাঁধবে না। আমি ডাল ছাড়া খেতে পারি না।
রহমান সাহেব আগ্রহের সঙ্গে বললেন, আমিও পারি না। আগে সব তরকারির সঙ্গে ডাল খেতাম। চিত্রার মা বলত, সব কিছুর সঙ্গে ডাল মেশালে তরকারির স্বাদ কিভাবে পাবে? এখন সবার শেষে ডাল খাই। অভ্যাস হয়ে গেছে। মানুষ অভ্যেসের দাস।
চাচাজি, আমি যাই।
যাও। কোনো দুঃশ্চিন্তা করবে না।
আমার চাকরির ব্যাপারে একটু মাথায় রাখবেন চাচাজি।
অবশ্যই মাথায় রাখব।
রহমান সাহেবের ঘুম চটে গেছে। তিনি আরো কিছুক্ষণ বারান্দায় হাঁটাহাটি করলেন। মজনুর সমস্যার সমাধান হয়েছে কিনা এটা না জেনে ঘুমুতে যেতেও ইচ্ছা করছে না। বেচারা ডাল ছাড়া খেতে পারে না। ওদের বাড়িতে আবার রাতে রানা হয় না। দুপুরের ভাল আছে কিনা কে জানে। তার বাড়িতে ডাল আছে। একটি ডাল পাঠিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো।
তিনি চৌবাচ্চার পাশে বসে একটা সিগারেট পরালেন। শায়লা আজ চৌবাচ্চার মাছ জারে ভরতে ভুলে গেছে। মাছগুলি মনের আনন্দে ছোটাছুটি করছে। বৃষ্টির পানি পেয়ে তাদের বোধহয় ভালো লাগছে। চৌবাচ্চায় চাঁদের প্রতিবিম্ব। চট নলে চোখে পড়ে না। মাথা এদিক ওদিক করতে হয়। রহমান সাহেব মাথা এদিক ওদিক করে চাঁদ দেখতে লাগলেন। এই সময় অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটল, বড় একটা মাছ পানির ভেতর থেকে মুখ বের করে খুবই ক্ষীণ কি সস্পষ্ট গলায় বলল, আজ আমাদের খাবার দেয়া হয় নি।
রহমান সাহেবের গা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। ঘটনা কি? মাছ কেন মানুষের মতো কথা বলবে? তাঁর কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে? মাথা খারাপ হয়ে গেলে তা সর্বনাশ। চাকরি চলে যাবে। এরা তাকে কোনো পাগলাগারদে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে। পাগলদের সঙ্গে থেকে থেকেই তার মাথা আরো পারাপ হবে। তিনি চৌবাচ্চার দিয়ে আবারো তাকালেন। বড় মাছটা মুখ বের করে ঠোঁট নাড়ছে তবে এখন আর কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। শুধু বিজবিজ শব্দ হচ্ছে। রহমান সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, আল্লাহ রহম কর গো। রহম কর।
মেয়ের এনগেজমেন্ট
মেয়ের এনগেজমেন্ট উপলক্ষে শায়লা অফিস থেকে চার দিনের ছুটি নিয়েছেন। অফিস থেকে ছুটি তিনি এর আগেও নিয়েছেন, কিন্তু এবারে ছুটির দরখাস্ত লিখতে যে আনন্দ পেয়েছেন সে আনন্দ কখনো পান নি।
ডিরেক্টর সাহেব বললেন, বিয়ে দেবার মতো বড় মেয়ে আপনার আছে তাই তো জানতাম না। আপনাকে দেখেই কলেজ্জের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী মনে হয়। ছেলে কি করে?
শায়লা গভীর আনন্দের সঙ্গে বললেন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।
ডিরেক্টর সাহেব অবাক হয়ে বললেন, ভালো ছেলে পেয়েছেন তো! প্রেমের নিয়ে নাকি?
জ্বি না। আমার মেয়েরা প্রেম করা টাইপ না। ঘরোয়া ধরনের মেয়ে।
ছেলের বাবা কি করেন?
চার্টার্ড একাউন্টটেণ্ড ছিলেন। এখন রিটায়ার করেছেন। ছেলের দাদাকে আপনি হয়তো চিনবেন। সাবিহউল্লাহ খান। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের আমলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন।
বাহা বড় গাছে দড়ি বেঁধেছেন। ভেরি গুড।
স্যার আমি খুবই খুশি হলো যদি মেয়ের এনগেজমেন্টের দিন উপস্থিত থাকেন। আমার তো তেমন কেউ নেই। ছেলে পক্ষ হলো জাহাজ আর আমরা কাগজের নৌকা।
যাব, আমি অবশ্যই যাব। বিয়ে হচ্ছে কবে?
সেপ্টেম্বরের সাত তারিখে। ছেলের আত্মীয়স্বতন বেশির ভাগই থাকে দেশের বাইরে। বড় ছেলের বিয়ে আত্মীয়স্বজন সবাই আসবে। এই জন্যেই সময় নিচ্ছে।
ভালো সংবাদ খুবই ভালো সংবাদ।
শায়লা চার দিনের ছুটি নিয়েছেন এই খবর শুনে চিত্রা হাসতে হাসতে বলল, চার দিন তুমি ঘরে বসে থেকে কী করবে? তোমার কাজ কী?
শায়লা অবাক হয়ে বললেন, কি বলিস তুই! আমার কোনো কাজ নেই?
না নেই। ওরা আসলে চা-টা খেয়ে চলে যাবে। তার জন্যে চার দিন ছুটি নিলে? চায়ের সঙ্গে নাশতা কি তৈরি করলে সেটা চিন্তা করার জন্যে দুদিন আর নাশতা বানানোর জন্যে দুদিন?
শায়লা বিরক্ত হয়ে বললেন, তুই বোকার মতো কথা বলবি না। মাথার গায়ে আমার কুত্তা পাগলের মতো অবস্থা। নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাব কিনা সেটা পর্যন্ত বুঝতে পারছি না। পুরো সপ্তাহটাই ছুটি নেয়া উচিত ছিল।
প্রিজ্ঞা বল তো–এত কি তোমার কাজ।
শায়লা মেয়ের সামনে থেকে উঠে গেলেন। মেয়েকে না বলার মতো সময় তার নেই। এনগেজমেন্টের দিন পরার জন্যে শাড়ি কিনতে হবে। একসেট হালকা পানা বানিয়ে দেবেন। পাবার-দাবার কিছু মনে করা হবে। কিছু বাইরে থেকে কেনা হবে। এটাও ঠিক করতে হবে। এদিকে চিত্রার উত্তরার খালা টেলিফোন করে তুলেছেন একজন কাজির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। অনেক সময় এ রকম হয় এনগেজমেন্টের পর বর পক্ষের কোনো মুরব্বি বলে বসেন–বিয়ে পড়ানো হয়ে যাক। তখন তাদের মুখের ওপর না করা যায় না।
এনগেজমেন্টের দিন কে কি দেয়া হবে বা দেয়া হবে না সেটা নিয়েও আলোচনার দরকার। ছেলে তাঁকে সালাম করলে তখন একটা আংটি তো তাকে পলাতে হলে। পনেরো টাকা দামের সস্তার আংটি কিনলে চলবে না। ওদের সম্মানের দিকে লক্ষ্য রেখে আংটি কিনতে হবে। বড় গাছে নৌকা বাঁধার সুবিধা যেমন আছে অসুবিধাও আছে। নৌকা যত ছোট অসুবিধা তত বেশি।
এদিকে কাকতালীয় ভাবে একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। গত মাসে টিভি থেকে চিত্রা গান গাওয়ার প্রোগ্রাম পেয়েছিল। সেই গান রেকর্ড করা হয়েছে। প্রচার হয়নি। গানটা প্রচার হবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছটায়।