না।
কিন্তু তোমার গলার স্বরে রাগ আছে।
থাকলে কিছু করার নেই।
রামী কেমাতো সিবালভা।
তার মানে কি?
উল্টো করে বললাম, নামী কেমাতো সিলভা মানে হল মীরা তোমাকে ভালবাসি।
ভালো।
বযা রেম লেপে না কেমাতো।
তার মানে কি?
তার মানে হল তোমাকে না পেলে মরে যাব।
শীলার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে–বেকুব টাইপ একটা মানুষ। যার প্রধান কাজ বাজার করা আর ঘন ঝাঁট দেয়া সে কেমন মেয়ে পটানোর খেলা শিখেছে। উল্টা কথা বলার খেলা খেলছে। মাকে এই ব্যাপারটা বলতে হবে। টেলিফোন শেষ করেই মীরা মাকে বলবে। মা যা করার করুক।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রহমান সাহেব পান মুখে দিয়ে ঘুমুতে গেলেন। চিত্রা গেল তার বাবার সঙ্গে। সে আজ বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করবে। বাবার মধ্যে সে কেমন যেন দিশাহারা ভাব দেখছে। এটা তার ভালো লাগছে না।
সে নিয়ে ও দিশাহারা বোধ করছে। আগামীকাল যে একটা বিশেষ ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে সেই ঘটনা সম্পর্কে এই বাড়ির কেউ কিছু জানে না। বাবাকে কি এই ঘটনাটা বলা যায়। কিংবা বাবার কাছে কি পরামর্শ চাওয়া যায়। জটিল সমস্যায় পরামর্শ দেবার ক্ষমতা কি বাবার আছে?
রহমান সাহেব শুয়ে পড়েছেন। চিত্রা বাবার পাশে বসেছে। চিত্রা বলল, বাবা তোমার মাথা ব্যথা কি কমেছে?
হ্যাঁ।
না কমলে বল–আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেব।
রহমান সাহেব খুবই অস্বস্তির সঙ্গে বললেন— না, না লাগবে না।
চিত্রা বলল, তুমি এত অস্বস্তি বোধ করছ কেন? মেয়ে তার বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে এতে অস্বস্তির কি আছে?
মাথা ব্যাথা নে। যা তুই ঘুমুতে যা।
যাচ্ছি। তোমার সঙ্গে খানিকক্ষণ গল্প করি। বিয়ের পর তো আর গল্প করার সুযোগ হবে না। না-কি তোমার ঘুম পাচ্ছে।
ঘুম পাচ্ছে না।
চিত্রা নালা দুলাতে বুলাতে বলল–এ বাড়ির কেউ জানে না, কাল কিন্তু শুধু এনগেমেন্ট হবে না। বিয়ে হয়ে যাবে।
ও আচ্ছা।
তুমি এমনভাবে ও আচ্ছা বললে— যেন এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তুমি সে খুবই অল্পত মানুষ এটা বোধহয় তুমি জান না।
রহমান সাহেব হাসলেন। চিত্রা বলল, আহসান টেলিফোনে এই খবরটা আমাকে দিয়েছে। ওরাই কাজি নিয়ে আসবে। এনগেজমেন্টের পর পরই আহসানের বড়চাচা প্রস্তাবটা তুলবেন। বিয়ে হয়ে যাবে। শুধু যে বিয়ে হবে তাই না। বিয়ের পর ওরা সেদিনই আমাকে নিয়ে যাবে।
আহসান কে?
আশ্চর্য কথা বাবা আহসান কে মানে? তুমি জান না আহসান কে?
না।
যার সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে তার নামই আহসান।
ও আচ্ছা।
ঘটনাটা আমি শুধু তোমাকে বললাম। এদিকে আমি গোপনে গোপনে কি করেছি জান?
না।
আমি আমার প্রয়োজনীয় সব জিনিস স্যুটকেসে ঢুকিয়ে ফেলেছি। এমন ভাবে ঢুকিয়েছি যেন মা কিছু বুঝতে না পারেন। ভালো করেছি না বাবা?
হ্যাঁ ভালো করেছিস।
শ্বশুর বাড়িতে যাব অথচ আমার নিজের একটা তোয়ালে থাকবে না। ওদের তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। এটা ঠিক না। বাবা তোমার মনে হয় ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাও।
আচ্ছা।
বাতি নিভিয়ে দেব বাবা?
হ্যাঁ।
চিত্রা বাতি নিভিয়ে দিল। চলে যাবার আগে সে কিছুক্ষণ বাবার কপালে হাত রাখল। কপাল গরম হয়ে আছে। মনে হচ্ছে তাঁর জ্বর আসছে। চিত্রা বাবার গায়ে চাদর টেনে দিল।
ফরিদা ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল
ফরিদা অনেক রাত পর্যন্ত তার ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। ভাইজান তাকে ফেলে চলে গিয়েছে এ জন্যে তার শুরুতে খুব মন খারাপ হয়েছিল। মন খারাপ ভাবটা অতি দ্রুত চলে গেল। তার কাছে মনে হল–আহারে বেচারা। বোনকে ফেলে চলে যেতে হচ্ছে এরচে কষ্টের আর কি আছে। এই লজ্জা বেচারাকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। হয়তো বোনের বাসায় সে আর কোনোদিন আসবেও না। বেচারা এটা সেটা খাবার শখ। যখনই কিছু খেতে ইচ্ছা হয় বাজার করে নিয়ে আসে। এমন একটা ভাব করে যেন বাজারটা সে করেছে তার বোনের জন্যে। সপ্তায় তিনদিন সে আসবেই। এসে যে গল্প গুজব করবে তা-না। চুপচাপ বসে থাকবে। খবরের কাগজ পড়বে। দুদিন আগের খবরের কাগজ দিলেও সমস্যা নেই। গভীর মনযোগে সেটাই পড়ছে। কারোর সম্পর্কে কোনো অভিযোগ নেই। এ রকম মানুষ কয়টা হয়? নিজের জন্যে না, ফরিদার কষ্ট হতে লাগল তার ভাইজানের জন্যে।
ফরিদার পানির পিপাসা খুব বেড়েছে। নিজের বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়ে একবার কি সে বলবে–পানি খাব। ঘরে ঢুকব না। বারান্দায় দাঁড়িয়েই খাব।
অতি পাষণ্ডও তৃষ্ণার্ত মানুষকে পানি দেয়। জহির নিশ্চয়ই এত পাষণ্ড না। ফরিদা সাহস পাচ্ছেই না। ঘরের ভেতর তাস খেলা হচ্ছে। জহিরের বন্ধু-বান্ধব চলে এসেছে। মাঝে মাঝে হাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হাসির ধরন থেকে বোঝা মাছে মদ খাওয়া হচ্ছে। মাতাল মানুষ এখন কি করে বসে তার ঠিক নেই। হয়তো বন্ধুদের সামনেই চড় বসিয়ে দিবে। চড় থাপ্পড় দেয়ার অভ্যাস এই মানুষটার আছে। রেগে গেলে তো হুঁশ থাকে না।
ফরিদার মনে হল তার উচিত রাগ পড়ার সুযোগ দেয়া। তাস টাস খেলে মনটা ভালো হোক। রাতে আরাম করে ঘুমাক। সকালবেলা ঘরে ঢোকার আনেকটা চেষ্টা করা যাবে। শুরুতে ফরিদার মনে হচ্ছিল রাত কাটানোটা খুব সমস্যা হবে। তার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এসেছে। ছাদে গিয়ে বসে থাকলেই হয়। এত রাতে কারোরই ছাদে আসার সম্ভাবনা নেই। তারপরেও কেউ যদি আসে সে বলবে–খুব গরম পড়ছে, ঘরে ঘুম আসছে না। তাই ছাদে হাঁটছি।
তবে রাতে বৃষ্টি নামতে পারে। বৃষ্টি নামলেও সমস্যা নেই, ছাদের সিঁড়ি ঘরে সে থাকবে। ফরিদা ছাদে উঠে গেল। ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদ সুন্দর থাকে না। কাপড় শুকানোর জন্যে একেক ফ্ল্যাটের মালিক একেক জায়গায় দড়ি টানায়। ছাদটা হয়ে থাকে জালের মতো। ছাদে উঠে ফরিদার ভালো লাগল। একটু করে এগুচ্ছে একটা দড়ি হাত দিয়ে ছুঁচ্ছে। এক ধরনের খেলা। ছাদের রেলিং ধরে সে নিচে তাকাল। সঙ্গে সঙ্গে তার মাথা ঘুরে উঠল। কি ভয়ঙ্কর। তার হাইট ফোবিয়া আছে। দোতলার বারান্দা থেকে সে নিচে তাকাতে পারে না আর এখন সে দাঁড়িয়ে আছে–পাঁচ তলা বাড়ির ছাদে।