তার মানে কি?
চিত্রা সহজ গলায় বলল, কিছু ছেলে আছে যাদের পছন্দ করা যায় কিন্তু বিয়ে করা যায় না।
তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। ঐ ছেলে করে কি?
ঐ ছেলেকে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না মা। আমি এ ছেলের বিষয়ে তোমাকে কোনো কিছু বলব না।
তোর সঙ্গে পড়ে?
চিত্রা জবাব না দিয়ে পায়েসের হাঁড়িতে চামচ নাড়া শুরু করল। শায়লা চিন্তিত মুখে বসে রইলেন। চিত্রাকে এখন কেমন যেন অচেনা লাগছে। কঠিন মেয়ে বলে মনে হচ্ছে।
শায়লা খানিকটা হতাশাও বোধ করছেন। তাঁর মেয়ের পছন্দের একজন ছেলে থাকবে তিনি কখনো তা জানতে পারবেন না, তা কেমন করে হয়?
মীরা রান্নাঘরে ঢুকেছে। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে যে কোনো কারণেই হোক ভয় পেয়েছে। রাত্রে সে হঠাৎ হঠাৎ ভয় পায়। ভূতের ভয়। ভয় পেলেই ছুটে যেখানে লোকজন আছে সেখানে চলে আসে। শায়লা ছোটমেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি হয়েছে?
মীরা বলল, বাবা ফিরেছে মা। কি রকম যেন করছে।
কি রকম করছে মানে?
মনে হচ্ছে, আমাকে চিনতে পারছে না। তুমি একটু আাসতো মা।
শায়লা উঠে দাঁড়ালেন। চিত্রাও উঠে দাঁড়াল। শায়লা চুলা থেকে পায়েসের হাড়ি নামিয়ে রাখলেন। পায়েস যদি পুড়ে যায় তা হলে অলক্ষণ। বিয়ের পায়েস পুড়ে যাওয়া ভালো কথা না।
রহমান সাহেব তার ঘরে খাটেই বসে আছেন। সিগারেট টানছেন। শায়লা ঘরে ঢুকে বললেন, কি হয়েছে?
রহমান সাহেব বললেন, কিছু হয় নি।
শায়লা বললেন, বোনকে তার বাসায় দিয়ে এসেছ?
রহমান সাহেব বললেন, হ্যাঁ।
কোনো সমস্যা হয় নি?
না।
ঘরের মধ্যে সিগারেটের ছাই ফেলছ কি জন্যে? এসট্রে চোখে পড়ছে না?
রহমান সাহেব উঠে টেবিলের উপর থেকে এসট্রে নিলেন। শায়লা বললেন, সিগারেট ফেলে হাত মুখ ধুয়ে এসে ভাত খাও।
রহমান সাহের সঙ্গে সঙ্গে হাতের আধ-খাওয়া সিগারেট ফেলে দিলেন। তাঁর কাজ কর্ম খুবই স্বাভাবিক। মীরা এখন বাবার স্বাভাবিক আচার আচরণ দেখে অবাক হচ্ছে। অথচ বাবা একটু আগেই খুব অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। কলিং বেল শুনে মীরা দরজা খুলল। রহমান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু গলায় বললেন, ভেতরে আসব?
মীরা বিস্মিত হয়ে বলল, এইসব কি কথা বাবা? ভেতরে আস।
তিনি ভেতরে ঢুকে বললেন, কিছু মনে করবেন না। এই বাড়ির লোকজন সব কোথায়?
মীরা হতভম্ব গলায় বলল, বাবা তুমি কি বলছ?
তিনি শূন্য দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। মীরা ছুটে গেল রান্না ঘরে। এখন মনে হচ্ছে সবই স্বাভাবিক।
শায়লা রান্নাঘরের দিকে গেলেন। চিত্রা গেল মায়ের সঙ্গে। মীরা এসে বসল বাবার পাশে। মীরা বলল, বাবা সত্যি করে বল তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ?
রহমান সাহেব বললেন, পারছি।
বলতো আমি কে?
রহমান সাহেব হাসিমুখে বললেন, তুই মীরা।
বাবা তুমি এমন অত ভাবে হাসছ কেন?
কই হাসছিনা তো।
রহমান সাহেব হাসতে শুরু করলেন। প্রথমে নিঃশব্দে। তারপর গা দুলিয়ে সশলে। তার হাসির দমকে খাট পর্যন্ত নড়তে শুরু করেছে। মীরা কাঁপতে কাঁপতে চেঁচিয়ে ডাকল, মা মা।
শাহালা বানু আবার ঘরে ঢুকলেন। বিরক্ত মুখে বললেন, কি হয়েছে?
মীরা বলল, বাবা যেন কি কম করে হাসছে। শায়লা স্বামীর দিকে তাকালেন নাহমান সাহেবের হাসি বন্ধ হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছেন। শায়লা বললেন, বসে আছ কেন? তোমাকে হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসতে বললাম না।
হমান সাহেব বললেন, আসছি।
আসছি না। এখন আস।
রহমান সাহেব বাধ্য ছেলের মতো উঠে দাঁড়ালেন। শায়লা বললেন, আগামীকাল বিকেলে তোমার মেরে এনগেজমেন্ট এটা মনে আছে তো?
ড়হমান সাহেব বললেন, কাড় এনগেজমেন্ট?
কার এনগেজমেন্ট মানে? তুমি কি আমার সঙ্গে রসিকতা করার চেষ্টা করছ? আমি নানান যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে আছি। আরর যন্ত্রণা বাড়াবে না। তোমার সমস্যা কি?
মাথা ব্যথা করছে।
ভাত খেয়ে মাথা ব্যথার দুটা ট্যাবলেই খেয়ে ঘুমাতে যাও।
আচ্ছা।
আগামীকাল অফিসে যাবার দরকার নেই। বাড়িতে নানান কাজকর্ম।
আচ্ছা।
বলপক্ষের লোকজনদের সঙ্গে তুমি আগবাড়িয়ে না বলতে যাবে না। চুপচাপ বসে থাকবে।
আচ্ছা।
ওরা কোনো প্রশ্ন করলে অল্প কথায় জবাব দেবে। দুনিয়ার ইতিহাস বলা শুরু করবে না।
আচ্ছা।
তোমায় অফিসের কেউ কি আসবে?
রহমান সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, কোথায় আসবে?
শায়লা নানু তীম চোখে তাকিয়ে রইলেন। তিনি অনেক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। বাড়তি যন্ত্রণা নিতে পারছেন না। তার খুবই বিরক্ত লাগছে। তিনি বিরক্তি চাপা দিয়ে ভাত বাড়তে গেলেন।
বাবার সঙ্গে চিত্রা খেতে বসেছে। মীরা আগেই খেয়ে নিয়েছে। সে টেলিফোনে কথা বলছে। ঐ টেলিফোনটা এসেছে। মজনু ভাইয়ের টেলিফোন। এখন মীরা গলার স্বরও চিনতে পারছে। মজনু ভাই চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলার চেষ্ট করছেন। এতে গলার স্বর ঢাকা পড়ছে না।
মীরা তুমি কি করছ?
টেলিফোনে কথা বলছি।
তোমার গলার স্বর এমন গম্ভীর কেন?
ঠাণ্ডা লেগেছে গলা বসে গেছে।
আগামীকাল তোমাদের বাড়িতে উৎসব।
হ্যাঁ উৎসব। আপনি কি করে জানেন?
জানি। কি করে জানি বলা যাবে না।
আচ্ছা শুনুন আমি কি আপনাকে কখনো দেখেছি?
হ্যাঁ দেখেছ।
আমি কি রোজই আপনাকে দেখি?
হ্যাঁ দেখ।
তারপরেও চিনতে পারছি না?
খুব কাছের মানুষকে চেনা যায় না। শোন মীরা, তুমি আমার সঙ্গে আগে তুমি তুমি করে কথা বলতে আজ আপনি করে কথা বলছ কেন?
জানি না কেন বলছি।
মীরা তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছ?