জহির কিছুক্ষণ তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে রহমান সাহেবের দিকে তাকাল। থমথমে গলায় বলল, ভাইজান আপনি এই হারামজাদীকে এখানে নিয়ে এসছেন কেন?
রহমান সাহেব থতমত খেয়ে গেলেন। জহির বলল, এই কুত্তীকে আমি সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে তিন তালাক বলেছি। সে এটা আপনাকে বলে নাই?
রহমান সাহেব কি বললেন বুঝতে পারছেন না। তার সব চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। জহির বলল, একে নিয়ে চলে যান। যদি না যান, তাহলে আপনার সামনেই মাগীর পাছায় এক লাথি মেরে তাণে সিঁড়িতে ফেলে দেব।
রহমান সাহেব কাঁদো কাঁদো গলায় লুললেন, জহির এইসব তুমি কি বলছ?
যা সত্যি তাই বলছি। এক্ষুণি একে নিয়ে বিদায় হন।
রাগের মাথায় তালাক বললে তালাক হয় না।
আপনাকে এতক্ষণ কি বললাম আমি যা বলেছি ঠাণ্ডা মাথায় বলেছি। অনেক বিচার বিবেচনা করে বলেছি। এখন আপনি যান। নয়তো কোনো কারণে আপনি অপমান হবেন।
জহির ঘরে ঢুকে শক্ত করে দরজা বন্ধ করে দিল। রহমান সাহেব কি করবেন বুঝতে পারছেন না। ফরিদাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরা যাবে না। আত্মীয়স্বজন এমন কেউ নেই যা বাড়িতে তাকে নিয়ে তুলেন।
ফরিদা নিঃশব্দে কাঁদছে। রহমান সাহেবের খুবই মায়া লাগছে। তার চেয়েও বেশি লাগছে ভয়। কুরিদা বলল, ভাইজান এখন কি করব? রহমান সাহেব বললেন, বুঝতে পারছি না।
তোমার কাছে কি টাকা আছে ভাইজান। আমাকে একটা হোটেলে নিয়ে যাও। রাতটা কাটুক।
সত্তুর টাকা আছে।
তাহলে চল কালাপুর রেল স্টেশনে যাই। রেলস্টেশনে ত্রাতটা কাটাই।
আচ্ছা।
আচ্ছা বলে রহমান সাহেব সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলেন। ফরিদা বলল, কোথায় যাচ্ছে? রহমান সাহেব বললেন, এক প্যাকেট সিগারেট কিনে আনি। তুই একটু দাঁড়া।
আমার খুব পানির পিপাসা হয়েছে। ভাইজান এক বোতল পানি নিয়ে এসো। গলা কেমন শুকিয়ে গেছে।
আচ্ছা পানি নিয়ে আসব।
রহমান সাহেব সিগারেট কিনলেন। সিগারেট ধরালেন। বড় এক বোতল পানি কিনলেন। ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি। তারপর হাঁটতে শুরু করলেন নিজের বাড়ির দিকে। বোনের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না। খালি পেটে সিগারেট খাওয়ার জন্যে তার সামান্য মাথা ঘুরছে। বমি বমি আসছে। তিনি পানির বোতলের মুখ খুলে বোতলের পানির অর্ধেকটা এক টানে শেষ করে ফেললেন। বমি ভাব আলো বাড়ল, তুষ্ণা মিটল না। তিনি রাস্তার পাশে বসে বমি করলেন।
আগামীকাল মেয়ের এনগেজমেন্ট। সব খাবার দাবারই আসছে বাইনে থেকে। ঘরের কোনো আইটেম না থাকলে খারাপ দেখা যায় বলেই শায়লা কাওনের চালের পায়েস বসিয়েছেন। রান্না বান্নার ঝামেলা আগের রাতেই মিটিয়ে ফেলতে চান। আগামীকাল তিনি রান্না ঘরে ঢুকবেন না। তিনি চিত্রাকে এনে পাশে বসিয়েছেন। চিত্রার দায়িত্ব হল মাঝে মাঝে চামুচ দিয়ে পায়েস নেড়ে দেয়া। পায়েস যেন ধরে না যায়। শায়লা মেয়েকে দিয়ে এই কাজটা ইচ্ছা করেই করাচ্ছেন যাতে যাতে বরপক্ষের লোকদের বলতে পারেন—পায়েস রেঁধেছে চিত্রা। প্রসঙ্গ ছাড়া অবশ্যি কথাটা বলা যাবে না। প্রসঙ্গ উঠলে তবেই বলতে হবে। বর পক্ষের কেউ যদি পায়েস মুখে দিয়ে বলে—বাহ্ খেতে ভালো হয়েছে তো তাহলেই তিনি বলবেন, পায়েস বেঁধেছে চিত্রা।
চিত্রা বলল, মা ফুপুকে এত রাতে ফেরত পাঠানো ঠিক হয় নি। বেচারা বিপদে পড়ে তার ভাইয়ের কাছে এসেছে। আমার নিজের কোনো ভাই নেই, তারপরেও আমি বুঝতে পারছি যে কোনো লোনের অধিকার আছে বিপদে পড়লে তার ভাইয়ের কাছে আসা।
শায়লা বিরক্ত মুখে বললেন, এইসব সাজানো বিপদ। দুদিন পর পর বিপদের কথা বলে উপস্থিত হয়। যখন চলে যায় তখন দেখা যায়–আমার গলার হার নেই, তোর কানের দুল নেই। এই যন্ত্রণা আমার আর সহ্য হয় না। তারচেয়েও বড় কথা তোর ফুপু যদি থেকে যায়–এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে উল্টাপাল্টা কথা বলে সর্বনাশ করে দেবে। তোর শ্বশুরকেই হয়তো বলবে— জানেন আমার স্বামী আমাকে মাগী ডেকেছে আর গায়ে গরম চা ঢেলে দিয়েছে।
চিত্রা বলল তা অবশ্যি ঠিক। ফুপু ভয়ঙ্কর বোকা। কখন কি বলা উচিত কাকে কি বলা যায় এর কোনো ধারণাই নেই। আমাকে কি বলছিল জান মা?
কি বলছিল
না থাক।
মার সঙ্গে চিত্রার সব রকম কথা হয়। তারপরেও কিছু কিছু কথা না হওয়াই ভালো।
শায়লা তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, তোর ফুপু কি বলছিল?
এমন কোনো জরুরি কথা না। নারী পুরুষ সম্পর্কের বিষয়ে কিছু কথা যা একজন ফুপু তার ভাইস্তিকে বলতে পারেন না। এবং আমিও তোমাকে বলতে পারব না।
শায়লা রাগী গলায় বললেন, না বলতে চাইলে বলবি না।
চিত্রা বলল, মা তোমার সঙ্গে আরেকটা ব্যাপারে ক্লিয়ার করতে চাই। আমি কিন্তু আগামীকাল গান গাইব না।
তোকে তো গান গাইতে বলছি না।
এখন বলছ না। কিন্তু সময় মতো ঠিকই বলবে। তুমি তবলচিকে খবর দিয়েছ, নিশ্চয়ই দাওয়াত খাবার জন্যে খবর দাও নি।
ওরা শুনতে চাইলে একটা গান করবি। এতে অসুবিধা কি?
না। বিয়ের পর আমি গান ছেড়ে দেব।
কেন?
জানি না কেন? আমার মনে হচ্ছে বিয়ের পর আমার গান করতে ইচ্ছা করবে না।
এ রকম মনে হবার কারণ কি?
জানি না।
শায়লা হঠাৎ বললেন, চিত্রা তোর কি কোনো পছন্দের ছেলে আছে?
চিলা পায়েস নাড়া বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, হ্যাঁ আছে।
শায়লা হতভম্ব হয়ে গেলেন। চিত্রা বলল, এ রকম হতাশ চোখে তাকাবার মতো কোনো কিছু না মা। আমার পছন্দের ছেলে আছে শুনে তোমাকে নার্ভাস হতে হবে না। বিয়ে করার মতো কোনো ছেলে না।