এত কিছু জানো কীভাবে? তুমিও তো জীবনে প্রথম যাচ্ছ।
প্রথম গেলেও চাচাজি আমার সব মুখস্ত। চলুন এখন যাই ট্রাভেল এজেন্সিতে।
আজই যাবে?
অবশ্যই আজ যাব। আগে ভাগে বুকিং দিয়ে না রাখলে পরে সমস্যায় পড়ে খাব। দেখা যাবে সব আছে, প্লেনের টিকিট নাই। চাচাজি, উজবেক এয়ারলাইন্স আপনার কাছে কেমন লাগে?
উজবেক এয়ারলাইন্সের ব্যাপারটা কী?
খুবই সস্তায় টিকিট দেয়। অবশ্যি তাদের সার্ভিস খুব খারাপ। মস্কোতে নিয়ে ফেলে রাখে। কোনো খোঁজ খবর করে না। তাতে আমাদের অসুবিধা কী? ফাঁকতালে মস্কো দেখা হয়ে গেল। সুযোগ-সুবিধা পেলে ঘন্টাটা দেখে এলাম।
ঘণ্টা দেখে এলে মানে কী? কী ঘণ্টা?
মস্কোর ঘণ্টা। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য।
মস্কোর ঘন্টা দেখতে দেবে?
অবশ্যই দেবে। পাসপোর্ট হোটেলে জমা রেখে বারঘন্টার একটা পারমিট বের করে দুজন চলে গেলাম। ভাষার সমস্যা হবে। ওরা ইংরেজির ইও জানে না। ইশারায় কাজ সারতে হবে। যদি সত্যি সত্যি আমরা মাস্কো হয়ে যাই তাহলে হয় কাজ চালাবার মতো কয়েকটা রাশিয়ান শব্দ শিখে গেলাম।
যেমন ধরুন, তুমি কেমন আছ? রাশিয়ান ভাষায় হবে–কাক দেলা। মস্কোর ঘন্টা দেখব- রাশিয়ান ভাষায় হবে খাচু স্মাতরিত মস্কোভুসকি কোলাল।
শামসুদ্দিন রীতিমতো বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি রাশিয়ান ভাষা জানো নাকি?
জয়নাল আনন্দের হাসি হেসে বলল, যদি মস্কো হয়ে যেতে হয় এই ভেবে আগেই দু একটা টুকটাক রাশিয়ান শিখে রেখেছিলাম। গুড মর্নিং-এর রাশিয়ান হলো–দোবরে উতরা।
শামসুদ্দিন বললেন তুমি আমাকে খুবই আশ্চর্য করলে।
জয়নাল বলল, উজবেক এয়ারলাইন্সে যাওয়াই যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে রাশিয়ান এম্বেসিতে যাব। সেখানে রাশিয়ান জানা বাঙালি পাওয়া যাবে। এম্বেসি স্টাফ। ওদের কাছ থেকে ভালো মতো সুলুক-সন্ধান নিয়ে যাব। চাচাজি শুনুন, আজ দুপুরে আমার সঙ্গে খাবেন। খাওয়া ভালো হবে না। নিজে বেঁধে খাই। ডাল, ভাত, ডিমভাজি। তাতে অসুবিধা নেই–খাওয়াটা বড় কথা না। খেতে খেতে প্ল্যান প্রোগ্রাম করতে হবে। আপনার কি কোনো সিরিয়াস অসুখ-বিসুখ আছে?
কেন বলো তো?
অসুখ-বিসুখ থাকলে আমেরিকায় ফ্রি অব কস্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। হেলথ ইনস্যুরেন্স না থাকলে ঐ দেশে চিকিৎসা হয় না তা ঠিক, তবে অন্য সূক্ষ্ম ব্যবস্থা আছে। ফেডারেল গভর্নমেন্টের হাসপাতাল আপনার চিকিৎসা করতে বাধ্য। আপনাকে নিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে উপস্থিত হতে হবে। চিকিৎসা না করে যাবি কোথায়?
শামসুদ্দিন বিস্মিত গলায় বললেন, আমেরিকার সব কিছুই দেখি তুমি জানো।
জয়নাল আনন্দের হাসি হেসে বলল, নয় বছর ধরে লেগে আছি। জানব না কেন? আমেরিকায় চোখ বন্ধ করে ছেড়ে দিলেও আমার কোনো সমস্যা হবে না।
দুপুরে জয়নাল রান্না করল। কেরোসিনের চুলায় রান্না। শামসুদ্দিন চৌকিতে পা তুলে বসে জয়নালের রান্না দেখলেন। জয়নাল বলেছিল ডাল, ভাত, ডিম ভাজা। দেখা গেল রান্নার আয়োজন ব্যাপক। বেগুন ভাজা আছে। গরুর মাংসের কিমার সঙ্গে বুটের ডাল দিয়ে কুচকুচে কালো রঙের অদ্ভুত তরকারি। ডিম ভাজা হলো না, সিদ্ধ ডিম কচলে ভর্তা বানানো হলো–তার রঙও কালো।
জয়নালের থাকার জায়গাটা শামসুদ্দিনের পছন্দ হলো। বাড়ির গ্যারেজের উপর লম্বাটে ঘর। দুটা চৌকি এবং টেবিল পাতার পরেও খানিকটা জায়গা আছে। সবই বেশ গোছানো। ঘরে জানালা আছে। জানালা দিয়ে সজনে গাছের ডাল দেখা যায়। শামসুদ্দিন বললেন, তুমি একা থাক না?
জয়নাল বলল, এখন একা থাকি। আগে আমার সঙ্গে সিদ্দিক থাকত। সে বিয়ে করে জুরাইনে তার শ্বশুরবাড়িতে থাকে। মাঝে মাঝে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে আমার এখানে থাকতে আসে। বিছানা রেডি করা থাকে বলে অসুবিধা হয় না। ওর কাছে এক্সট্রা চাবি আছে।
বাথরুমের ব্যবস্থা কী?
নিচে সার্ভেন্টস টয়লেট আছে। চাচাজি বাথরুমে যাবেন?
না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
আমেরিকায় আপনি তো বেড়াতেই যাচ্ছেন না-কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
কোনো উদ্দেশ্য নেই। বেড়াতেই যাচ্ছি।
তাহলে প্রথম কিছুদিন আপনাকে নিয়ে বেড়াব। আটলান্টিক সিটিতে নিয়ে যাব। ক্যাসিনো আছে। স্লট মেশিনে অল্প পয়সায় জুয়া খেলবেন।
জুয়া খেলার দরকার কী?
কোনো দরকার নেই। অভিজ্ঞতার জন্যে খেলা। আটলান্টিক সিটি থেকে আপনাকে নিয়ে যাব লাস ভেগাস। মরুভূমির ভেতর কী জিনিস বানিয়েছে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। লাস ভেগাসে কিছু শো হয়। সেগুলিও দেখার মতো। এখন লাস ভেগাসের সির্জাস প্রেসে ডেভিড কপারফিল্ড যাদু দেখাচ্ছে। সিজার্স প্লেসের সঙ্গে ডেভিড কপারফিল্ডের এক বছরের চুক্তি হয়েছে। এক বছর ডেভিড কপারফিল্ডকে নিয়মিত যাদু দেখাতে হবে। ডেভিড কপারফিল্ডের নাম শুনেছেন তো?
না।
বলেন কী! মারাত্মক মেজিশিয়ান। আস্ত এরোপ্লেন ভ্যানিশ করে দিয়েছিল। আপনাকে ডেভিড কপারফিল্ডের যাদু ইনশাল্লাহ দেখাব। ত্রিশ ডলার করে টিকিট। সেখান থেকে আপনাকে নিয়ে যাব গ্রান্ড কেনিয়ন দেখাতে গ্রান্ড কেনিয়নে গাধা ভাড়া পাওয়া যায়। ইচ্ছা করলে গাধার পিঠে চড়ে গ্রান্ড কেনিয়নে নামতে পারেন। ঘণ্টা হিসেবে গাধা ভাড়া করতে হবে। ঘন্টায় বিশ ডলার।
তুমি এমনভাবে বলছ যেন আগেও কয়েকবার লাস ভেগাস গিয়েছ।
না গেলেও সবই জানি। আপনার যে-সব জায়গায় যাবার ইচ্ছা তার দুএকটার নাম বলুন তো।