তবে মামা সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করেছেন আমাদের দুর্ধর্ষ টিমটার। আমি, মাহবুব, ডোরিন আর টনি। টনি প্রথম দিকে আমাদের ধারে কাছে আসতে চাইত না সেটা সে এখন আর ভুলেও কাউকে বলে না। (আমরা সেইজন্য কিছু মনে করি না)। থ্রি স্টার সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যে অনেক বড় ইউরিনেয়াম রিজার্ভ আছে সেই খবরটা খুব যত্ন করে গোপন রাখা হলো। তবে মামার কাছে শুনেছি সরকার থ্রি স্টার সিমেন্ট কোম্পানির লিজ বাতিল করে পুরো জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে। মামার মতে আমাদের কাজকর্মের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছিল একসিডেন্টে আহত পুলিশের এসপিকে ফোন করে দেওয়া। হাসপাতাল থেকে মাত্র বাসায় গিয়েছিলেন কিন্তু আমাদের ফোন পেয়ে সাথে সাথে পুলিশ নিয়ে চলে আসার কারণে সব রকম ঝামেলা সামলে নেয়া হয়েছে। বিদেশি মানুষগুলো পরেরদিনই ছাড়া পেয়ে নিজের দেশে চলে গিয়েছে (তা না হলে নাকি যুদ্ধ লেগে যেত!) কিন্তু পুরো ষড়যন্ত্রটা থেমে গিয়েছে।
.
কেউ যেন মনে না করে পুরো ঘটনাটার মাঝে সবই ভালো। এই ঘটনার মাঝে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বেইজ্জতীটা ঘটেছে, যদিও সেটা জানি শুধু আমি আর মাত্র একজন মানুষ! জিনিসটা ঘটেছে এভাবে।
আমি যখন গোপন সিঁড়ি দিয়ে মনি কাঞ্চনের নিচে গোপনে ল্যাবরেটরিতে যাচ্ছি তখন আমি মাহবুবের হাতে আমার ব্যাকপেকটা দিয়ে বলেছিলাম সেখানে আমার ডাইরির শেষ পৃষ্ঠার পুলিশ অফিসারের কার্ডটা স্কচটেপ দিয়ে লাগানো ছিল। আমি যদি ফিরে না আসি সে যেন এই মানুষটাকে ফোন করে। কিন্তু আমি মাহবুবকে দিয়ে খোদার নামে কসম খাইয়ে রেখেছিলাম সে যেন কোনোভাবেই আমার ডাইরিটা না পড়ে।
মাহবুব নিজে ফোনটা করে নাই, ডাইরিটা দিয়েছিল ডোরিনকে ফোন করার জন্য। কিন্তু আমি যেরকম মাহবুবকে কসম খাইয়ে রেখেছিলাম যে ডাইরিটা না পড়ে ডোরিনকে সেরকম কসম খাওয়ানো হয় নাই তাই ডোরিন পুরো ডাইরিটা পড়ে ফেলেছে। (শুরুতে নানানরকম ভয় দেখানো হয়েছে। অভিশাপ দেয়া আছে কিন্তু ডোরিন সেগুলোকে কোনো পাত্তা দেয় নাই, কি আশ্চর্য!)।
যাই হোক এমনিতে একজনের ডাইরি পড়ে ফেললে সেরকম ভয়ংকর কিছু হওয়ার কথা না কিন্তু আমার কেসটা অন্যরকম। মাত্র সেদিন রাত জেগে আমি এখানকার সব ঘটনা লিখেছি তখন ডোরিনকে নিয়েও একটা প্যারাগ্রাফ লিখে ফেলেছিলাম। ডোরিন সেইটাও পড়ে ফেলেছে, কী সর্বনাশ!
আমি কি লিখেছিলাম সেটা যদি বলি তাহলে সবাই বুঝতে পারবে কেন সেটা সর্বনাশ। আমি লিখেছিলাম: ‘আমি এতোদিন ধরে ঠিক করে রেখেছিলাম জীবনেও বিয়ে করব না। কিন্তু কয়দিন থেকে মনে হচ্ছে বড় হলে বিয়ে করেও ফেলতে পারি। তবে যে কোনো নেকু টাইপের ঘ্যানঘ্যানে মেয়েকে বিয়ে করব না, শুধু যদি ডোরিন রাজি থাকে তাহলে। ডোরিন মোটেও নেকু টাইপের না, খুবই হাসিখুশি এবং মাথায় বুদ্ধিও আছে। তবে বড় হলে কী অবস্থা হবে কে জানে। মানুষ ছোট থাকতে একরকম থাকে বড় হলে হয়ে যায় অন্যরকম।…
আমার এই ভয়ংকর লেখাটা ডোরিন পড়ে ফেলেছে। আমি আর মামা যখন গোপন ল্যাবরেটরি জ্বালিয়ে দিয়ে বের হয়ে এসেছি, ভিতরে কী হয়েছে সবকিছু সবাইকে বলছি তখন এক সময় ডোরিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “টোপন তুমি আমাকে একটা গিফট দেবে?”
আমি বললাম, “কী গিফট?”
ডোরিন বলল, “তোমার ডাইরিটা।”
আমি বললাম, “কেন?”
ডোরিন বলল, “আমি পড়েছি। খুবই ইন্টারেস্টিং!” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। এর আগে আমি কোনোদিন কোনো মেয়েকে চোখ টিপতে দেখি নাই। কী ভয়ংকর।
যখন আশেপাশে কেউ নাই তখন গলা নামিয়ে বলল, “আমি তোমার থেকে এক ক্লাস উপরে পড়ি, তার মানে তুমি আমার থেকে এক বছর ছোট।”
আমি বললাম, “ইয়ে মানে কিন্তু
“আমার থেকে এক বছরের ছোট একজনকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু–”
আমি কোনোমতে বললাম, “কিন্তু—“
“বিয়ের পর যদি তুমি কোনোদিন শব্দ করে হাঁচি দাও সাথে সাথে ডিভোর্স।”
আমি বললাম, “অ্যাঁ অ্যাঁ–”
ডোরিন তখন–
.
থাক, ডোরিন তখন কী করেছে সেটা আর না বললাম। আমার জন্য খুবই বেইজ্জতী। চরম বেইজ্জতী!