“সেজন্যই করছি। তুমি একদম নড়বে না। রেডি! ওয়ান টু–”
আমি বললাম, “মামা থাক, থাক, ছেড়ে দাও। প্লিজ।”
“ছেড়ে দেব?”
“হ্যাঁ।”
“কেন? তুই না বললি শাস্তি দিতে।”
“শাস্তি হয়ে গেছে মামা। দেখ, সে ভয়ে হিস্যু করে দিয়েছে।”
সত্যি সত্যি তার পায়ের নিচে ঝরঝর করে হিস্যু পড়ছে। মামা মাথা নেড়ে বলল, “যা মদের বোতলটা নিয়ে আয়, আমাদের অন্য কাজে লাগবে।”
“কী কাজে লাগবে?”
“দেখবি একটু পরেই।”
আমরা ঠিক যখন বের হয়ে আসছি তখন ছয়জন মানুষের একজন ভারী গলায় বলল, “আমি কী একটা বিষয় জানতে পারি?”
“কী বিষয়?”
“তুমি এখানে এই পিস্তলটা কোথায় পেয়েছ?”
মামা হা হা করে হাসল, তারপর বলল, “আমার এই পুচকে ভাগ্নে এটা আমার জন্য নিয়ে এসেছে। তার শরীরে বিশেষ কিছু নাই কিন্তু মাথার ভিতরে ডাবল সাইজের মগজ।”
তারপর আমরা বের হয়ে এলাম। প্রথমে গুলি খাওয়া মানুষটাকে নিয়ে বাঙালি মানুষটা। তারপর মামা, হাতে পিস্তল নিয়ে খুবই সতর্ক। সবার পিছনে আমি। আমার ঘাড়ে ছয়টা বিদেশির ছয়টা প্যান্ট।
বের হয়েই মামা বাঙালি মানুষটাকে বলল, “এই গুলি খাওয়া মানুষটাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। এক্ষুণি নিয়ে যাও।”
বাঙালি মানুষটা বলল, “জ্বি স্যার। নিয়ে যাচ্ছি স্যার।”
মামা বলল, “খবরদার আর কোনো দুই নম্বুরী কাজ করতে যেও না।”
মানুষটা বলল, “না স্যার। করব না স্যার। খোদার কসম।”
মামা বিরক্ত হয়ে বলল, “খবরদার খোদাকে নিয়ে টানাটানি করো না। যাও বের হও।” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কোনদিকে বের হতে হবে তুই জানিস?”
“হ্যাঁ মামা। খুঁজে বের করে ফেলব।” বলে আমি সামনে হাঁটতে থাকি।”
মামা হাঁটতে হাঁটতে একটু পরপর উপরে ছাদের দিকে তাকাচ্ছিল। হঠাৎ উপরে কিছু একটা দেখে মামা দাঁড়িয়ে গেল। আমি উপরে তাকালাম, সেখানে গোল প্লাস্টিকের কিছু একটা লাগানো। আমি জিজ্ঞেস করলাম “এখানে এটা কী?”
মামা বলল, ‘স্মোক ডিটেক্টর।”
স্মোক ডিটেক্টরের ঠিক নিচে প্যান্টগুলো রেখে মামা সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিল। মদের বোতল থেকে সেখানে একটু মদ ঢেলে দেবার পর সেটা দপ করে জ্বলে উঠল।
আগুনটা খুব ভালো করে ধরানো গেল না কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা হলো না। প্রচুর ধোয়া হলো এবং সেই ধোঁয়াতে স্মোক ডিটেক্টরটা থেকে বিকট স্বরে এলার্ম বাজতে থাকে। শুধু যে এই স্মোকে ডিটেক্টর থেকে এলার্ম বাজছে তা নয়, বিকট একটা এলার্ম পুরো মনি কাঞ্চনে বাজতে শুরু করেছে।
মামা দাঁত বের করে হেসে বলল, “পুরো রিসোর্টের সবাই এখন জেগে উঠবে। শুধু আমরা কেন মজা দেখব, সবাই দেখুক।”
মামা ঠিক কোন জিনিসটাকে মজা ভাবছে আমি জানি না, কিন্তু আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।
আমি যখন গোপন সিঁড়িটা খুঁজে বেড়াচ্ছি তখন হঠাৎ একটা মেয়ের গলার চিৎকার শুনতে পেলাম, “টোপন!”
তাকিয়ে দেখি করিডোরের শেষ মাথায় ডোরিন দাঁড়িয়ে আছে। তার পিছনে মাহবুব, টনি, ডোরিনের বাবা এবং অনেকগুলো পুলিশ। এরা আগের পুলিশ না, অন্য পুলিশ! কারণ এই পুলিশের পিছনে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা একজন মানুষ যাকে আমরা একসিডেন্ট থেকে বাঁচিয়েছিলাম। তার মানে মাহবুব ফোন করে তাকে সত্যি খবর দিতে পেরেছে।
কী চমৎকার!
.
শেষ কথা
এরপর যা হওয়ার কথা এবং যেভাবে হওয়ার কথা সবকিছু সেভাবে হলো। মামা গোপন ল্যাবরেটরির করিডোরে বিদেশিগুলোর প্যান্টগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর পুরো রিসোর্টে এলার্ম বাজতে লাগল এবং প্রায় ভোর রাতে সবাই লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে এলো, চারিদিকে বিশাল হই চই এবং মনে হলো একটা মেলা বসেছে। সবাই জানতে চাইছিল কী হয়েছে এবং কীভাবে কীভাবে জানি খবর রটে গেল যে বিদেশি ডাকাত ধরা পড়েছে। তখন আর কেউ নিজেদের রুমে ফিরে যায় না, বিদেশি ডাকাত দেখার জন্য দাঁড়িয়ে রইল। শেষ পর্যন্ত যখন হাত বাঁধা অবস্থায় ছয়জন বিদেশিকে আমাদের গোপন সিঁড়ি দিয়ে বের করে আনা হলো তখন পাবলিকের ভেতর হুলুস্থুল পরে গেল। এই বেহায়া মানুষগুলো কেন জাঙিয়া পরে ঘুরে বেড়ায় সেটা নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা শুরু হয়ে গেল। সবাই তাদের সাথে সেলফি তুলতে চায়, পাবলিকদের কন্ট্রোল করতে পুলিশের অনেক কষ্ট করতে হলো।
যে বাঙালি মানুষটা গুলি খাওয়া মাথা মোটা মানুষটাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সে বিদেশিটাকে লবিতে পৌঁছে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। তাকে আর কোনোদিনই খুঁজে পাওয়া যায় নি। গুলি খাওয়া মানুষটাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
আমাকে আর মামাকেও পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে নিতে চেয়েছিল আমরা দুজনের কেউই রাজি হই নাই। ডাক্তার তখন রিসোর্টের লবিতে পরীক্ষা করে জানিয়ে দিল আঘাত সেরকম গুরুতর নয়, দুই চারদিন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
খবর পেয়ে মিঠুন আর আপুকে নিয়ে আব্বু আম্মু তখনই রওনা দিয়ে দিয়েছিল, পরের দিন সকালে যখন আমাদের সাথে দেখা হলো আমাকে ধরে আম্মু যেভাবে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল যে দেখে মনে হতে লাগল যে আমি আসলে মারা গেছি। যে আপু সারা জীবন আমাকে জ্বালাতন করে গিয়েছে সে পর্যন্ত মামার কাছে, মাহবুব, ডোরিন আর টনির কাছে আমার গল্প শুনে প্রায় কান্না কান্না হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখল। মিঠুন বার বার আমার মুখে পুরো গল্পটা শুনতে চাইল এবং বানিয়ে বানিয়ে আমাকে আরো অনেক কিছু যোগ করে পুরো গল্পটা বলতে হলো। পাহাড়ের মতো মানুষটার অসুবিধা জায়গায় লাথি দেওয়ার পর সে কীভাবে কোঁক করে শব্দ করে উঠেছিল এবং তার চোখ উল্টে গিয়েছিল মিঠুনকে অনেকবার অভিনয় করে দেখাতে হয়েছিল। তবে শুধু মিঠুন না অন্য সবাইকে যে অংশটা বারবার বলতে হয়েছে সেটা হচ্ছে ভয়ংকর বিদেশিটা যখন মারাত্মক একটা ছোরা নিয়ে মামার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আর মামা বিদ্যুৎবেগে তার হাতে গুলি করে তাকে নিচে ফেলে দিয়েছিল। পুরো সময়টাতে ভয়ে আমার পেটের ভাত চাউল হয়ে যাবার অবস্থা হয়েছিল কিন্তু আমি সেটা একবারও কাউকে বুঝতে দিলাম না। যখনই কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি ভয় পেয়েছিলাম কিনা তখনই আমি হা হা করে হেসে বললাম, ভয়? ভয় পাব কেন? ভয় পাওয়ার কী আছে? শরীরে যখন এড্রেনেলিন এসে যায় তখন বুকে ভয় ডর থাকে না। (এড্রেনেলিন কী জিনিস আমি জানি না, মামাকে একবার শব্দটা ব্যবহার করতে শুনেছি এরপর থেকে আমি যখন তখন এই শব্দটা ব্যবহার করি!)