কেউ কোনো শব্দ করল না। মামা বলল, “যদি আমার কথা বুঝে থাক মাথা নাড়াও।”
এবারে সবাই মাথা নাড়ল। মামা বলল, “চমৎকার। আমরা আমাদের প্রোগ্রামের একেবারে শেষের দিকে চলে এসেছি।” তারপর হঠাৎ ইংরেজি বন্ধ করে একেবারে পরিষ্কার বাংলায় বলল, “আমাদের মাঝে একজন একেবারে খাঁটি রাজাকার আছে যে বিদেশিদের পা চেটে নিজের দেশের সর্বনাশ করতে রাজি আছে।”
দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালি মানুষটা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, “মাপ করে দেন স্যার। ভুল হয়ে গেছে স্যার।”
মামা বলল, “আমার পিস্তলে সবার জন্য একটা করে গুলি রেখেছি শুধু তোমার জন্য রাখি নাই। আমার ধারণা আমি খালি হাতে তোমার কল্লা ছিঁড়ে নিতে পারব। ঠিক বলেছি কি?”
মানুষটা এবারে ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিল, কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আপনার পায়ে পড়ি স্যার। মাপ করে দেন স্যার।”
“মাপ করার কথা পরে। তোমাকে আমি একটা কাজ দেই।”
“বলেন স্যার। আপনি যেটা বলবেন সেইটাই করব স্যার। খোদার কসম স্যার।”
“খোদাকে টানাটানি করো না, তোমার মতন রাজাকারদের জন্য খোদার কোনো সময় নাই।”
“কী করতে হবে বলেন স্যার।”
এইখানে যতগুলো মানুষ হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে প্রথমে তাদের সবার হাত এই দড়ি দিয়ে বাঁধবে। একসাথে কোরবানী ঈদের সময় গরু যেভাবে নেয় সেইভাবে।”
মানুষটা মনে হয় বুঝতে পারল না, মামা ধমক দিল, “বুঝেছ?”
“বুঝেছি।”
“নাও শুরু কর। টোপন তুই সাহায্য কর। শুধু গুলি খাওয়া মানুষটাকে বাধার দরকার নাই। তাকে বাইরে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে হবে।”
মামা দড়িটা ছুঁড়ে দিল, মানুষটা তখন দড়িটা নিয়ে বাঁধা শুরু করল। দড়ি দিয়ে একজনের বাম হাত তারপর ডান হাত তারপর পরের জনের বাম হাত তারপর পরেরজনের ডান হাত এইভাবে। সবাইকে এক দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলা হলো। এরা ইচ্ছা করলেই এই বাঁধন খুলে ফেলতে পারবে, কিন্তু এটা করতে একটু সময় লাগবে, ওই বাড়তি সময়টা পাওয়াই মামার উদ্দেশ্য।
দড়ি দিয়ে বাঁধা শেষ হবার পর মামা বলল, “এবারে সবার ট্রাউজার খুলে নাও।”
বাঙালি মানুষটা থতমত খেয়ে বলল, “কী খুলে নেব?”
“ট্রাউজার। মানে প্যান্ট।”
“প্যান্ট?”
“হ্যাঁ।”
“মানে ন্যাংটা করে ফেলব?”
“পুরোপুরি ন্যাংটা না, ভেতরে নিশ্চয়ই আন্ডার প্যান্ট জাঙ্গিয়া এইসব আছে।”
“কেন খুলে নিতে চাচ্ছেন স্যার?”
“তাহলে ওরা আমার পিছু পিছু আসতে একটু সংকোচ বোধ করবে। এটা খুবই স্ট্যান্ডার্ড টেকনিক। জাঙ্গিয়া পরে মানুষজন পাবলিক জায়গায় যেতে চায় না।”
“এরা একটু বেহায়া কিসিমের স্যার।”
“তবুও চেষ্টা করে দেখি।”
কাজেই বাঙালি মানুষটা সবার ট্রাউজার খুলে নিল। দেখা গেল একজনের জাঙ্গিয়া খুবই রঙিন, লাল নীল ফুল আঁকা। এরকম জাঙ্গিয়া হয় আমি তাই জানতাম না। মামা জাঙ্গিয়াটার খুব প্রশংসা করল কিন্তু সেই প্রশংসা শুনে মানুষটা খুব খুশি হয়েছে বলে মনে হলো না। মামা তারপর সবার প্যান্টের পকেট থেকে সব কিছু বের করে একত্র করল। সেখানে অনেক কিছু পাওয়া গেল, সিগারেটের লাইটার, সিগারেটের প্যাকেট, বিদেশি–যেটার গোড়া আমি বাঁচিয়ে রেখেছি। একজনের পকেটে একটা চ্যাপ্টা বোতল পাওয়া গেল, মামা বলল সেটা নাকি মদের বোতল। মামা ~ শুধু সিগারেটের লাইটারটা নিজের পকেটে ভরে নিল। তারপর সবাইকে ইংরেজিতে বলল, “আমি তোমাদের পকেটের ভিতর যা আছে সেগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যাব। তবে তোমাদের ট্রাউজারগুলোর মায়া ছেড়ে দাও। সেগুলো তোমরা ফেরত পাবে না।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “প্যান্টগুলো কী করবে মামা।”
মামা বলল, “একটু পরেই দেখবি।”
মামা ঘরটা ভালো করে দেখে সন্তুষ্টির মতো একটা শব্দ করল। তারপর বাঙালি মানুষটাকে বলল, “এই গুলি খাওয়া মানুষটাকে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে যাও। আমরা এখন যাব।”
আমি বললাম, “মামা।”
“কী হলো?”
“যে মানুষটা আমাকে লাথি দিয়েছে তাকে আমি একটা লাথি দিয়ে যেতে পারি?”
মামা মাথা নাড়ল, বলল, “উঁহু সেলফ ডিফেন্সের জন্য ঠিক আছে কিন্তু বন্দী মানুষের গায়ে হাত তোলা যাবে না। তাছাড়া আমাদের কালচারে ছোটরা বড় মানুষের গায়ে হাত তুলে না।”
“তাহলে তুমি তোমার পিস্তলটা দিয়ে মানুষটাকে একটু ভয় দেখাবে? প্লিজ।”
“ঠিক আছে সেটা করা যেতে পারে।” বলে মামা ইংরেজিতে বলল, “এই যে লাল মুখের মানুষ, তুমি এই ছোট ছেলেটাকে লাথি দিয়েছিলে, কাজটা ঠিক কর নাই।”
লাল মুখের মানুষটা বলল, “আমি দুঃখিত। কাজটা আসলেই ঠিক হয় নাই।”
“আমার গায়ে যে হাত তুলেছে সে নিজের দোষে শাস্তি পেয়ে গেছে, গুলি খেয়ে পড়ে আছে। তোমার কোনো শাস্তি হয় নাই। তোমাকে একটা শাস্তি দেওয়া দরকার।”
লাল মুখের মানুষটা আবার বলল, “প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
“ছোট একটা এক্সপেরিমেন্ট করি তোমাকে দিয়ে। আমার হাতের নিশানা খুব ভালো। মনে হয় এখনো ভালোই আছে, তোমার উপর একটু প্র্যাকটিস করি?”
মানুষটা বলল, “না, প্লিজ না।”
মামা আমাকে চ্যাপ্টা মদের বোতলটা দিয়ে বলল, “যা এই বোতলটা এই মানুষটার মাথায় বসিয়ে আয়।”
আমি গিয়ে বোতলটা মাথার উপর বসিয়ে দিলাম। মামা মানুষটাকে বলল, “তুমি নড়বে না। একেবারেই নড়বে না। আমি গুলি করে এই বোতলটা ফুটো করে দেব।”
মানুষটা থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “না, প্লিজ না। এটা খুব বিপদজনক।”