আমি আর মাহবুব তারপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম। আমি ব্যাকপেকটা খুলে মামার পিস্তলটা বের করে কোমরে গুঁজে নিলাম। সিনেমার সিক্রেট এজেন্টরা এইভাবে পিস্তল নেয়, কিন্তু এখন আমার আসলে সেই সব মাথায় নাই। ভয়ের চোটে রীতিমতো বাথরুম পেয়ে গেছে কিন্তু সেই কথাটা তো আর মাহবুবকে বলা যায় না। আমি ফিসফিস করে বললাম, “প্রথমে আমি ঢুকব, যদি আমি ধরা পড়ে যাই তাহলে তুমি আর ভিতরে ঢুকবে না।”
মাহবুব বলল, “প্রথমে আমিও ঢুকতে পারি।”
“না। প্রথমে আমি।” যদি ধরা পড়ে যাই তুমি বের হয়ে আমার ডাইরিটার শেষ পৃষ্ঠায় একটা ভিজিটিং কার্ড আছে। সেই কার্ডের মানুষটাকে ফোন করে সবকিছু বলবে।”
মাহবুব ফিসফিস করে বলল, “মানুষটা কে?”
“একজন পুলিশ অফিসার। তার পুরো ফ্যামিলিকে আমরা একসিডেন্ট থেকে বাঁচিয়েছিলাম।”
“ঠিক আছে।”
“তবে একটা কথা।”
“কি কথা?”
“তুমি ডাইরিটার কিছু পড়তে পারবে না। একটা শব্দও না। ঠিক আছে?”
“ঠিক আছে।”
“বল খোদার কসম।”
মাহবুব মনে হয় একটু অবাক হলো, তারপর বলল, “খোদার কসম।”
“ঠিক আছে। আমি তাহলে গেলাম।”
মাহবুব বলল, “যাও।”
আমি তখন খুব সাবধানে দরজাটা ফাঁক করে ভিতরে উঁকি দিলাম। আশেপাশে কেউ নেই। আমি তখন সাবধানে ভিতের ঢুকে মাত্র এক পা সামনে এগিয়েছে তখন হঠাৎ করে কোথা থেকে জানি বিশাল পাহাড়ের মতো একটা মানুষ হুংকার দিয়ে বলল, “হু ইজ দ্যাট?”
আমি চমকে উঠলাম। এতো বড় একটা মানুষকে আমি দেখতে পেলাম না কেন? তখন অবশ্য এতো কিছু চিন্তা করার সময় নাই, আমি জানটা হাতে নিয়ে একটা দৌড় দিলাম।
পাহাড়ের মতো মানুষটা একটা লাফ দিয়ে আমাকে ধরার চেষ্টা করল, একটুর জন্য তার হাত ফসকে গেল। কোথায় যাচ্ছি কোনদিকে যাচ্ছি আমি কিছুই জানি না শুধু নিজের জান বাঁচানোর জন্য ছুটে যাচ্ছি, কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলাম না। পাহাড়ের মতো মানুষটা আরেকটা লাফ দিয়ে আমাকে ধরে ফেলল। তার লোহার মতো আঙুল মনে হলো আমার শরীরের মাংস কেটে ভিতরে ঢুকে হাড় পর্যন্ত গুড়ো করে ফেলল।
মানুষটা আমাকে একটা ময়লা ত্যানার মতো ধরে উপরে তুলে আছাড় দিয়ে নিচে নামালোলা। আমি কোনোমতে আমার কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তলটা ধরে রাখলাম যেন বের হয়ে না যায় কিংবা মানুষটা দেখে না ফেলে।
মানুষটা আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “ইউ লিটল রাসকেল।”
চোখগুলো ভাটার মতো জ্বলছে মুখে বিকট গন্ধ মনে হচ্ছে এক্ষুণি আমার ঘাড় মটকে খেয়ে ফেলবে।
আমার হাতে সময় বেশি নাই, আমি বাঁচার শেষ চেষ্টা করলাম, ব্যাটা ছেলেদের যে জায়গায় মারলে সবচেয়ে বেশি ব্যথা লাগে আমি আমার ডান পা দিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সেখানে মারলাম। মানুষটা কোক করে করে একটা শব্দ করল তার বড় বড় চোখ দুটো মনি হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে পুরো চোখটা কেমন যেন সাদা হয়ে গেল, দাঁতগুলো বের হয়ে তাকে একটা ডাইনোসরের মতো দেখতে লাগল। (আমি ডাইনোসর কখনো দেখি নাই। কিন্তু দেখতে নিশ্চয়ই এরকম হবে।)
আমার লাথি খেয়ে মানুষটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে তার দুই হাত দিয়ে ব্যথা পাওয়া জায়গাটা চেপে ধরে একটা গগন বিদারী চিৎকার দিল। আমি তখন আবার আমার জান নিয়ে ছুটে পালালাম। সামনে একটা ঘর, ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। ভিতরে ঢুকে দেখি বের হওয়ার কোনো জায়গা নেই, তাই যত তাড়াতাড়ি ঢুকেছিলাম তার থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম পাহাড়ের মতো মানুষটা উঠে দাঁড়িয়ে আবার আমার পিছনে পিছনে ছুটে আসছে।
আমি দৌড়ে আরেকটা ঘরে ঢুকে যত তাড়াতাড়ি পারি ছিটকানি লাগিয়ে দিয়ে পালানোর একটা রাস্তা খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই। কী করব যখন চিন্তা করছি ততক্ষণে মানুষটা এসে দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করছে। তার প্রচণ্ড ধাক্কায় পুরো দরজা ভেঙে যাবার অবস্থা হলো। মানুষটা মনে হয় একটু দূরে গিয়ে ছুটে এসে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। এর পরের বার ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে আমি ছিটকানিটা খুলে ফেলে একটু সরে দাঁড়ালাম। মানুষটা এবারে যখন ছুটে এসে দরজা ধাক্কা দিল সাথে সাথে সে ভিতরে হুড়মুড় করে আছাড় খেয়ে পড়ে আবার একটা গগন বিদারী চিৎকার দিল। সেই ফাঁকে আমি লাফ দিয়ে বের হয়ে আবার জান নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম।
মানুষটার চিৎকার এবং হইচই শুনে অনেক মানুষ বের হয়ে এসেছে। তারা এখনো বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে। অবাক হয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আমি তার মাঝে ছুটে যেতে লাগলাম। অন্য একজন মানুষ আমাকে ধরার চেষ্টা করল, ধরতে পারল না। আমি তার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে একটা ঘরে ঢুকে ছিটকানি লাগিয়ে দিলাম। ঘরটা একটা ল্যাবরেটরি, ভিতরে নানা ধরনের যন্ত্রপাতি। আমি টেবিল থেকে ধাক্কা দিয়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি নিচে ফেলে দিয়ে হাতে নেওয়ার মতো একটা কিন্তু খুঁজতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত একটা চকচকে সিলিন্ডার পেয়ে গেলাম। সেটা দুই হাতে ধরে আমি গায়ের জোরে কিছু যন্ত্রপাতি গুড়ো করে দিলাম। কেন দিলাম কে জানে। মনে হয় কোনো কারণে আমার অনেক রাগ উঠে গেছে।
তারপর ঘরের বাতি নিভিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম ভেতরে কেউ ঢুকলেই তাকে মেরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। ইতস্তত ছোটাছুটি করার কারণে কোনদিকে কী আছে আর বুঝতে পারছি না, চেষ্টা করতে হবে যেদিক দিয়ে ঢুকেছি সেদিক দিয়ে বের হয়ে যেতে।