আমি আর মাহবুব মাইক্রোবাস থেকে নেমে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। একটু পরে দেখলাম একটা গাড়ি এসে থামল আর গাড়ি থেকে বেশ কয়েকজন মানুষ নামল। কাছে আসার পর চিনতে পারলাম মানুষগুলো পুলিশ। পিছনে আমরা ডোরিনের আলুকে দেখতে পেলাম। আমি ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আমার মামাকে পাওয়া গেছে?
ডোরিনের আব্বু মাথা নাড়ল, বলল, “না।”
“ভালো করে খুঁজে দেখেছে?”
“কোথায় ভালো করে খুঁজে দেখবে?”
“কেন? ডোরিন বলেনি? মনি কাঞ্চনের নিচে একটা গোপন ল্যাবরেটরি আছে, সেখানে?”
“গোপন কেন হবে? এটা মনি কাঞ্চনের বেসমেন্ট। খাবার স্টোরেজের জায়গা, কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ল্যাব।”
আমি প্রতিবাদ করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু ঠিক তখন পুলিশদের একজন যে মনে হয় তাদের ভেতরকার অফিসার বলল, “আমরা দেখেছি। কোনো মানুষকে কেউ আটকে রাখে নাই। কে আটকে রাখবে? “এখানে তো সন্ত্রাসী থাকে না, সম্মানী মানুষজন থাকে। বিদেশ থেকে এসেছে সব বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার।”
আমি প্রতিবাদ করে বললাম, “কিন্তু কিন্তু”।
পুলিশ অফিসারটা আমাকে কথা বলতে দিল না, বলল, “কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া সার্চ করেছি এখন বিপদে না পড়ে যাই। আমরা করতে চাচ্ছিলাম না, কিন্তু স্যারের মেয়ে আর ছেলে এতো চেঁচামেচি শুরু করল যে আমাদের সার্চ করতেই হলো। খুবই লজ্জা পেয়েছি আমরা।”
আমার প্রায় চোখে পানি এসে যাচ্ছিল, ভাঙা গলায় বললাম, “মামা আমার মামা তাহলে কোথায়?”
“কোনো এক জায়গায় গিয়েছেন আবার চলে আসবেন।” পুলিশ অফিসার হঠাৎ গলার স্বর পাল্টে বলল, “তোমার মামা আসার পর আমাদের তার সাথে কথা বলতে হবে। আমাদের কাছে রিপোর্ট এসেছে এখানে নাকি ইয়াবা তৈরির গোপন ফ্যাক্টরি আছে”
আমি অবাক হয়ে মানুষটা দিকে তাকিয়ে রইলাম। কী বলছে এই মানুষটা? আমার মামা ইয়াবা তৈরি করছে? হঠাৎ করে আমি বুঝতে পারলাম এই পুলিশগুলোকে আসলে বিদেশি মানুষগুলো টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে। এরা আমার মামাকে খুঁজে বের করবে না। উল্টো দরকার হলে ‘ মামাকে ক্রসফায়ার করে ফেলবে। মামার ল্যাবরেটরিতে ইয়াবা প্যাকেট ফেলে রেখে মামাকে বিপদে ফেলে দেবে। মামাকে আমার খুঁজে বের করতে হবে।
পুলিশ অফিসার বলল, “যাই হোক, আমরা এসেছি তোমার মামার গাড়িটা নিয়ে যাবার জন্য। আজ রাতের মতো এটাকে মনি কাঞ্চনের পার্কিং লটে রাখব। কাল লোকাল থানায় নিয়ে যেতে হবে সার্চ করার জন্য।”
ডোরিনের আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আজ রাতটা আমাদের সাথে থাকো। তোমার বাসায় ফোন করে দেব, কাল ভোরে তোমার আব্বু আম্মু এসে তোমাকে নিয়ে যাবেন।”
আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, “না। আমি আমার মাইক্রোবাসেই থাকব। আমার মামা এসে আমাকে না পেলে চিন্তা করবে। মাইক্রোবাসে আমি থাকি। এখানে থাকার সব ব্যবস্থা আছে।”
পুলিশ অফিসার বলল, “একা একা কীভাবে থাকবে?”
মাহবুব পাশে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিল, সে হঠাৎ করে বলল, “আমি থাকব টোপেনের সাথে।”
পুলিশ অফিসার ভুরু কুঁচকে বলল, “তুমি কে? তোমার বাড়ি কোথায়?”
“আমার বাড়ি এখানেই।”
“তুমি এখানে থাকলে তোমার বাসায় চিন্তা করবে না।”
“আমি বাসায় ফোন করে বলে দেব। তাহলে চিন্তা করবে না।”
পুলিশ অফিসার কাঁধ ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “ঠিক আছে। তোমার ইচ্ছা। কিন্তু আমরা এই গাড়িটা এই জঙ্গল থেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আজ রাতের মতো এটা থাকবে মনি কাঞ্চনের পার্কিং লটে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “ঠিক আছে।”
পুলিশের একজন ড্রাইভার যখন মামার মাইক্রোবাসটা ড্রাইভ করে মনি কাঞ্চনে নিয়ে যেতে থাকে তখন আমি মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি আমি কী করব। আমার সাইন্টিস্ট মামাকে আর কেউ খুঁজে বের করবে না। আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
আমিই মামাকে খুঁজে বের করব। যেভাবে হোক।
১১. আমি আর মাহবুব
১১.
আমি আর মাহবুব চুপচাপ মামার মাইক্রোবাসটাতে বসে আছি। ডোরিন আর টনি এসেছিল, অনেকক্ষণ আমাদের সাথে কথা বলে একটু আগে তাদের রুমে ফিরে গেছে। খাবারের প্যাকেট নিয়ে এসেছিল আমরা চারজন বসে সেগুলো খেয়েছি। খুবই মজার খাবার দাবার, মনমেজাজ ভালো থাকলে খাবারগুলো মজা করে খেতাম, কিন্তু এখন শুধু খাওয়ার জন্য খেয়েছি। মজাটা টের পাই নাই, পেটটা শুধু ভরেছে।
ডোরিন আর টনি চলে যাবার পর আমি তার মাহবুব আরো কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। দেখলাম আস্তে আস্তে রিসোর্টটার লাইটগুলো একটা একটা করে নিভতে শুরু করেছে। যখন পুরো রিসোর্টটা মোটামুটি অন্ধকার হয়ে গেল তখন আমি আর মাহবুব আমাদের মাইক্রোবাস থেকে বের হলাম।
আমার ব্যাকপেকটা ঝেড়ে পরিষ্কার করেছি। সেখানে কয়েকটা জিনিস নিয়েছি, একটা টর্চলাইট, একটা চাকু, আমার ডাইরিটা (সেখানে যে পুলিশের এস পিকে আমরা গাড়ি একসিডেন্টের পরে উদ্ধার করেছিলাম তার ভিজিটিং কার্ডটা স্কচ টেপ দিয়ে লাগানো আছে)। তারপর খুব সাবধানে মামার গোপন বাক্সটা খুলে সেখানে থেকে মামার পিস্তলটা নিয়েছি। পিস্তলের ভিতরে একটা ম্যাগাজিন ভর্তি গুলি আর একটা বাড়তি ম্যাগাজিন। পিস্তলটা একটা তোয়ালে দিয়ে পেরিয়ে নিয়েছি। তারপর দুইজন খুব সাবধানে মাইক্রোবাস থেকে নেমে পা টিপে টিপে মনি কাঞ্চনের দেয়াল শেষে ঝোঁপ বাড়ের ভিতর দিয়ে প্রায় গুঁড়ি মেরে হেঁটে যেতে লাগলাম। মনি কাঞ্চনের পিছনে গিয়ে ঝোঁপ ঝাড়ের ভিতর দিয়ে আমরা খুব সাবধানে সেই গোপন সিঁড়িটার কাছে পৌঁছালাম। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ঢাকনাটা বের করে আমরা সেটা টেনে তুলে ভিতরে ঢুকে গেলাম।