ডোরিন বলল, “হ্যাঁ। মনে আছে। আমি ভাবছিলাম কী আজব!”
“আসলে সেই গাছের গোড়াতে যে মাটি ছিল সেটা ছিল রেডিও একটিভ। এটার কাছে গাইগার কাউন্টার নিতেই সেটা কটকট করছিল। তোমরা কেউ লক্ষ করনি।”
মাহবুব বলল, “করেছিলাম। আমি লক্ষ করেছিলাম। কিন্তু আমি পাত্তা দেই নাই।”
“তার মানে বুঝেছ?”
টনি জিজ্ঞেস করল, “মানে কী?”
“তার মানে ঐ জায়গাটাতে নিশ্চয়ই ইউরেনিয়ামের খনি আছে।”
“সত্যি?”
‘হ্যাঁ এইজন্য এই বিদেশি মানুষগুলো এখানে একত্র হয়েছে। মনি কাঞ্চনের নিচে গোপনে একটা ল্যাবরেটরি বানিয়েছে। মামার ল্যাবরেটরিতে যে যন্ত্রপাতি ছিল তাদেরও সেগুলো আছে। আমি দেখেই চিনেছি।
“কী আশ্চর্য!”
“হ্যাঁ। তারা ইউরেনিয়ামের খনি যেখানে আছে সেই পুরো জায়গাটা নিশ্চয়ই দখল করে নিয়েছে। মুখে বলছে সেখানে সিমেন্টের ফ্যাক্টরি বানাবে, আসলে মাটি খুঁড়ে ইউরেনিয়াম বের করে নিয়ে যাবে।”
“কী সর্বনাশ।”
‘হ্যাঁ। অনেক বড় সর্বনাশ।”
“তোমার মামা শুনে কী বলেছে?”
“আমার মামাকে এখনও বলার সময় পাই নাই। তাছাড়া মনি কাঞ্চনের গোপন ল্যাবরেটরিটার কথা তো আগে জানতাম না।”
“তোমার মামাকে কখন বলবে?”
আমি বললাম, “ভাবছিলাম, ইউরেনিয়ামের জায়গা থেকে মাটি তুলে নিয়ে এসে মামাকে দেই। তারপর মামাকে বলি।”
ডোরিন বলল, গুড আইডিয়া।”
মাহবুব বলল, “কখন যাবে?”
“কাল সকালে।”
ডোরিন বলল, “গুড আইডিয়া। আমরাও চলে আসব।”
মাহবুব বলল, “হ্যাঁ। আমিও চলে আসব। একসাথে যাব।”
টনি বলল, “কিন্তু আমাদের তো ঢুকতে দেবে না।”
আমি বললাম, “বুদ্ধি করে ঢুকতে হবে।”
ডোরিন বলল, “টোপনের অনেক পিছলে বুদ্ধি! তাই না?”
আমি মাথা নাড়লাম, বললাম, “হ্যাঁ।”
মাহবুব বলল, “আমি আমার নৌকাটা নিয়ে আসব, তাহলে নৌকা থেকে নেমে যেতে পারব, আমাদের ধরতে পারবে না।”
ডোরিন আবার হাতে কিল দিয়ে বলল, “ভেরি গুড আইডিয়া।”
আমরা আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম, তারপর আগামীকাল কীভাবে কোথায় দেখা করব সেগুলো ঠিক করে ফেললাম।
ফিরে যাবার সময় ডোরিন আর টনির আব্বু স্পিড বোটের ড্রাইভারের সাথে কথা বলল, তারা আমাদের দুজনকে হাওড়ের পাড়ে নামিয়ে দিল। মাহবুব তার বাসায় রওনা দিল আমি রওনা দিলাম মামার মাইক্রোবাসের দিকে।
.
অনেকদিন ডাইরি লেখা হয় না। রাত্রে ঘুমানোর আগে এখন পর্যন্ত কী হয়েছে সব কিছু লিখে ফেললাম। আমার ডাইরিটা এখন সারা পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং একটা ডাইরি। এই ডাইরিতে এখন মনি কাঞ্চনের নিচে গোপন ল্যাবরেটরির তথ্য আছে, ইউরেনিয়ামের খনির তথ্য আছে–মনে হয় এইটা এখন মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করা যাবে।
আমি যখন ডাইরি লিখছি তখন মামা জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার? ডাইরি লিখছিস নাকি উপন্যাস লিখছিস?”
আমি বললাম, “অনেক কিছু লেখা জমা হয়ে গেছে।”
“পড়ে শোনাবি, কী লিখছিস?”
“উঁহু এটা টপ সিক্রেট।”
মামা চোখ বড় বড় করে নিজের কাজে ফিরে গেল। শুধু যে মনি কাঞ্চনের বিষয়টা টপ সিক্রেট তা নয়। ডোরিনকে নিয়ে কয়েক লাইন লিখেছি। সেটা আরো বেশি টপ সিক্রেট।
রাতের ঘুমটা খুব ভালো হলো না। মনে হলো মামা এক সময় তার মাইক্রোবাস থেকে নিচে নেমে গেল। কিছুক্ষণ বাইরে থেকে আবার ফিরে এসে অনেকক্ষণ জেগে রইল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী হয়েছে মামা?”
“কিছু না ঘুমা।”
আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম।
১০. ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে
১০.
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে মামাকে একটু চিন্তিত দেখতে পেলাম। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করার পরও মামা পরিষ্কার করে উত্তর দিল না। তখন জিজ্ঞেস করলাম, “রাত্রে বাইরে গিয়েছিলে কেন মামা?”
প্রথমে ঠিক বলতে চাইল না তারপর বলল, “বাইরে মানুষের পায়ের শব্দ শুনে দেখতে গিয়েছিলাম।”
“কাউকে দেখেছ?”
‘না।”
“তোমার ভয় করে নাই?”
“না। ভয় করবে কেন?
“আমার কাছে লাইসেন্স করা পিস্তল আছে। তুই আছিস সেজন্য একটু চিন্তা হয়।”
“আমার জন্য কোনো চিন্তা করো না মামা।”
মামা আমার দিকে তাকাল, কোনো কথা বলল না। আমি একবার ভাবলাম মামাকে সবকিছু বলে দিই কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বললাম না। ইউরেনিয়াম খনির খানিকটা মাটি নিয়ে এসে চারজন মিলে বলব। মাহবুব ডোরিন আর টনি কথা বলার সময় খুব করে থাকতে চাইছে।
আমি একটু পরে বের হয়ে গেলাম। বের হওয়ার আগে মামার কাছ থেকে চেয়ে গাইগার কাউন্টারটা নিলাম। সেটাকে আজকে হাতে না ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে ব্যাকপেকে ভরে নিয়েছি। রাতে মানুষের পায়ের শব্দ শোনা গেছে তাই আমি মাইক্রোবাসটার চারপাশে ঘুরে দেখলাম। একটা গাছের নিচে কয়েকটা সিগারেটের গোড়া পেলাম, বিদেশি সিগারেট। কেউ রাতে এখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেয়েছে। সিনেমায় দেখেছি ডিটেকটিভরা সিগারেটের গোড়া আঙুলের ছাপ বের করার জন্য ব্যবহার করে। আমিও গোড়াগুলো কাগজে মুড়ে নিয়ে নিলাম। হেঁটে হেঁটে নদীর তীরে গিয়ে দেখি এর মাঝে মাহবুব পৌঁছে গেছে। জিজ্ঞেস করলাম, “নৌকাটা এনেছ?”
“হ্যাঁ।”
“কোথায়?”
‘নদীর অন্য মাথায় রেখে এসেছি, তাহলে বেশি দূর নৌকা বাইতে হবে না।”
“ভালো বুদ্ধি।”
আমি আর মাহবুব নদীর তীরে ইতস্তত হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে লাগলাম। মামা যখন পুরো ব্যাপারটা জানবে তখন মামা কী করবে সেটা নিয়ে কথা হলো। বিদেশিগুলো আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও কথা হলো।