টনি বলল, “ছেড়ে দাও। আরেকটা টেনিস বল নিয়ে আসি চল।”
কিন্তু আমার কেন জানি চোখ চেপে গেল। আমি খুঁজতেই থাকলাম, খুঁজতেই থাকলাম। ঠিক যেখানে বলটা পড়েছে সেই জায়গাটা পাতি পাতি করে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ এক জায়গায় একটা গোল গর্ত দেখতে পেলাম। গর্তটা বেশ গভীর, কিছু দেখা যায় না। আমি ভিতরে হাত ঢুকিয়ে হাতটা নাড়াচাড়া করতেই একপাশে একটা আংটার মতো জিনিস পেলাম। হাত দিয়ে সেটা নাড়াচাড়া করে বোঝার চেষ্টা করলাম এটা কী। ঠিক বুঝতে পারলাম না। তখন এটা ধরে টান দিতেই কিছু একটা নড়ে উঠল, কী নড়ল ঠিক বুঝতে পারলাম না। তখন আবার টান দিতেই উপরের মাটিটা নড়ে উঠল। মনে হলো এটা একটা ঢাকনার মতন, এর উপর মাটি জমেছে সেখানে ঘাস উঠেছে।
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, মাহবুব জিজ্ঞেস করল, “কী পেয়েছ?”
“বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে একটা ঢাকনা। টান দিলে খুলে যাবে।”
“সত্যি?” বলে মাহবুবও আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে গেল। তারপর সেও হাত দিয়ে কড়াটা ধরল। তখন আমরা দুজন ধরে টান দিতেই ঢাকনা বেশ একটু উঠে এলো। ডোরিন আর টনিও তখন ঢাকনাটা ধরে ফেলল। আমরা চারজন মিলে তখন ঢাকনাটা টেনে খুলে ফেললাম। অবাক হয়ে দেখলাম নিচে একটা সিঁড়ি নেমে গেছে। এবং সিঁড়ির নিচে আমাদের টেনিস বলটা পড়ে আছে। এখন অবশ্য এই টেনিস বলটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা এবং আগ্রহ নেই। এই রহস্যময় সিঁড়িটা কোথায় গেছে সেটা নিয়ে আমাদের আগ্রহ।
আমরা নিঃশব্দে একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকালাম। তারপর এদিক সেদিক তাকালাম, বোঝার চেষ্টা করলাম কেউ আমাদের দেখে ফেলেছে কি না। আমরা ঝোঁপ ঝাড় দিয়ে আড়াল হয়ে আছি, কেউ আমাদের দেখছে না। চারজন আরো উবু হয়ে বসলাম যেন কেউ দেখতে চাইলেও দেখতে না পারে।
আমি সবার আগে কথা বললাম, “চল, নামি।”
মাহবুব সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল, বলল, “হ্যাঁ, চল।”
ডোরিন ইতস্তত করে বলল, “নামবে? যদি কিছু হয়?”
আমি বললাম, “কী আর হবে? দেখে আসি সিঁড়িটা কোথায় গেছে।”
ডোরিন শেষ পর্যন্ত রাজি হলো। বলল, “ঠিক আছে।”
টনি ঠিক সাহস পাচ্ছিল না কিন্তু সবাই যদি নেমে যায় তখন একা একা থেকে যাওয়াটা কেমন দেখায়? তাই সেও রাজি হলো।
আমরা একজন একজন করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম। সবাই নেমে যাবার পর ঢাকনাটা আবার টেনে ঢেকে দিলাম যেন বাইরে হঠাৎ কেউ চলে এলেও বুঝতে না পারে এখানে কিছু আছে।
ঢাকনাটা টেনে দেবার পর প্রথমে সিঁড়িটা ঘুটঘুঁটে অন্ধকার হয়ে গেল তারপর আস্তে আস্তে অন্ধকারটা একটু কেটে গিয়ে আমরা আবছা আলো দেখতে পেলাম। মনে হলো সামনে একটা দরজা সেই দরজার নিচ দিয়ে একটু আলো বের হচ্ছে। আমরা কোনো কথা না বলে খুব সাবধানে নিচে নামতে থাকি। দরজার সামনে গিয়ে আমরা দাঁড়ালাম, দরজাতে হাত দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কোনো হ্যাঁন্ডেল আছে কি না। সত্যি সত্যি একটা হ্যাঁন্ডেল পেলাম। হ্যাঁন্ডেলটা ঘোরালে দরজাটা খুলবে আমরা একেবারেই আশা করিনি। কিন্তু সত্যি সত্যি শক্ত হ্যাঁন্ডেলটা একটু জোর দিয়ে চাপ দিতেই খুট করে দরজাটা খুলে গেল। দরজার অন্য পাশে কি আছে আমরা জানি না তাই দরজাটা আগেই খুলে ফেললাম না। খুব সাবধানে একটু ফাঁক করে সেই ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলাম। মনে হলো সামনে একটু খানি ফাঁকা জায়গা তারপর আরেকটা দরজা। আমরা তখন সাবধানে ফাঁকা জায়গাটায় এসে দাঁড়ালাম। আগের দরজাটা খুলেছে বলে এটাও খুলবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এবং আমাদের সন্দেহ সত্যি হলো। আমরা নাটা ঘোরানোর চেষ্টা করে বুঝতে পারলাম এটা তালা মারা। কাজেই আর ভেতরে যাওয়ার উপায় নেই। টনি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “চল ফিরে যাই।”
আমরা ফিরেই যাচ্ছিলাম তখন ডোরিন চাপা গলায় বলল, “এই দেখ।”
আমরা দেখলাম দেওয়ালে একটা চাবির রিং ঝুলছে। সেখানে ছোট বড় কয়েকটা চাবি।
আমি আনন্দের চাপা একটা শব্দ করে চাবির রিংটা হাতে নিয়ে একটা একটা করে চাবিগুলো নবের ভেতর ঢোকানোর চেষ্টা করলাম। প্রথম দুটো কাজ করল না, তিন নাম্বারটা চাপ দিতেই ঢুকে গেল। আমি সাবধানে চাবিটা ঘোরালাম এবং দরজাটা খুট করে খুলে গেল। দরজায় ওই পাশে কী আছে আমরা জানি না তাই কয়েক সেকেন্ড নিঃশব্দে অপেক্ষা করলাম। যখন কিছুই হলো না তখন খুব সাবধানে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে একটুখানি ফাঁক করে ভিতরে তাকালাম। সামনে ঝকঝকে একটা করিডোর, আলোতে ঝলমল করছে। আমি করিডোরের দুই দিকে তাকালাম, কোনো মানুষ নেই। শুধু যন্ত্রপাতির একটা চাপা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
টনি বলল, “অনেক দেখা হয়েছে। এখন চল যাই।”
আমি বললাম, “একটু ভিতরে ঢুকি।”
টনি ভয় পাওয়া গলায় বলল, “না, প্লিজ না।”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেলাম। আমার পিছু পিছু মাহবুবও ঢুকে গেল। তার পিছনে ডোরিন এবং সবার শেষে টনি।
টনি ভয় পাওয়া গলায় বলল, “যদি কেউ দেখে ফেলে।”
“দেখে ফেললে দেখবে। আমরা কি চুরি করতে এসেছি?” আমাদের বলটা পড়ে গেছে সেটা খুঁজতে খুঁজতে এসেছি।”
মাহবুব মাথা নাড়ল, অন্যরা কিছু বলল না। আমরা করিডোর ধরে হাঁটতে থাকি। দুইপাশে বড় বড় ঘর, সেই ঘরের জানালা দিয়ে ভেতরে দেখা যায়। আমরা দেখতে দেখতে যেতে থাকি। নানা ধরনের যন্ত্রপাতি। মনে হয় বিশাল একটা ল্যাবরেটরি। আমরা আরেকটু এগিয়ে গেলাম, জানালা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে আমি চমকে উঠলাম, এখানে পাশাপাশি অনেকগুলো যন্ত্র এবং এই যন্ত্রগুলো আমি চিনি। মামার মাইক্রোবাসে একটা আছে, এটা হচ্ছে গামা রে স্পেকট্রোস্কোপি করার ডিটেক্টর শুধু তাই না, এক পাশে টেবিলের ওপর সারি সারি অনেকগুলো গাইগার কাউন্টার।