“এই দুইটা মানুষ কী নিয়ে কথা বলছে শুনে আসতে পারবে?”
ডোরিন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। বলল, “কেন?”
“দরকার আছে। তোমাকে পরে বলব। কিন্তু মানুষ দুইটা যেন বুঝতে না পারে। বুঝেছ?”
“বুঝেছি।” ডোরিন কয়েক সেকেন্ড কী যেন একটা চিন্তা করল, তারপর বলল, “ঠিক আছে। চেষ্টা করে দেখি।” তারপর সে তার আম্মুর দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল, “আম্মু, তোমার টেলিফোনটা একটু দেবে?”
“কেন?”
‘আমার ঈশিতাকে একটা ফোন করতে হবে। খুব জরুরি।”
“আগে খেয়ে নে তারপর ফোন করিস।”
“আমার খাওয়া শেষ। দাও ফোনটা।”
ডোরিনের আম্মু তার ফোনটা বের করে দিল। ডোরিন তখন উঠে দাঁড়িয়ে সেটা ডায়াল করার ভান করল। তারপর কানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর কথা বলার ভান করে একটু এগিয়ে গেল। অনবদ্য অভিনয়। কথা বলার এবং শোনার ভান করতে করতে সে ইতস্তত হাঁটতে হাঁটতে বিদেশি মানুষ দুইটার টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
বিদেশি মানুষ দুইটা একবার আড়চোখে ডোরিনকে দেখল কিন্তু কোনো কিছু সন্দেহ করল না। ডোরিন কাছাকাছি দাঁড়িয়ে তার বন্ধু ঈশিতার সাথে কথা বলার অভিনয় করতে করতে মানুষ দুইটার কথা শোনার চেষ্টা করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ কথা শুনে সে আবার আমাদের টেবিলে ফিরে এসে আমার পাশে বসে গেল। আমি গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কথা শুনেছ?”
“হ্যাঁ কিছু শুনেছি।”
“কী নিয়ে কথা বলছে?”
“সিমেন্ট ফ্যাক্টরি।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “সিমেন্ট ফ্যাক্টরি?”
“হ্যাঁ। ট্রিপল স্টার সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। কী একটা খনিজ সিমেন্টের বস্তায় করে নিয়ে যাবে।”
‘কীসের খনিজ?”
“ঠিক বুঝতে পারি নাই–কি যেন নাম খনিজটার।”
“ইউরেনিয়াম?”
ডোরিন মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ। হ্যাঁ। ইউরেনিয়াম।”
আমি চোখ বড় বড় করে ডোরিনের দিকে তাকালাম, ডোরিন অবাক হয়ে বলল, “কী হয়েছে?”
আমি ফিসফিস করে বললাম, “বলব তোমাকে পরে বলব।”
০৯. লাঞ্চ খেয়েই মামা চলে গেল
০৯.
লাঞ্চ খেয়েই মামা চলে গেল। আমি আর মাহবুব রয়ে গেলাম মনি কাঞ্চনে। এখানে অনেক কিছু করার ব্যবস্থা আছে, ডোরিন আর টনি সেগুলো আমাদের দেখাবে। প্রথমে দেখালো ব্যায়াম করার জায়গা। সেখানে পাহাড়ের মতো বড় বড় সাদা চামড়ার মানুষ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়াচ্ছে, দেখে খুবই আজব লাগে যে একজন প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে কিন্তু নিজের জায়গা থেকে নড়ছে না। তারপর নিয়ে গেল বিলিয়ার্ড খেলার রুমে। আমি আগে শুধু সিনেমায় দেখেছি মানুষজন বিলিয়ার্ড খেলছে এবং তখন ডাকাতেরা গুলি করে সব লুটপাট করে নিচ্ছে। একটা টেবিল খালি ছিল ডোরিন আর টনি সেটা দখল করে নিয়ে বিলিয়ার্ড বলগুলি সাজিয়ে নিল। আমরা তখন বল দিয়ে খানিকক্ষণ ঠোকাঠুকি করলাম একদিকে মারলে বল অন্যদিকে ছুটে যায় আর আমরা সেটা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম। যারা অন্য টেবিলে বিলিয়ার্ড খেলছিল তারা আমাদের এই হাসাহাসি শুনে খুবই বিরক্ত হচ্ছিল কিন্তু আমরা তাদের পাত্তা দিলাম না।
তারপর আমরা রিসোর্টের বাইরে এলাম। প্রথমে ডোরিন আর টনি আমাদেরকে সুইমিংপুলে নিয়ে গেল। সুইমিংপুলটা খুবই সুন্দর, প্রথমে ভেবেছিলাম সেখানে বুঝি টলটলে নীল পানি কিন্তু পানির তো আর কোনো রং হয় না, তখন বুঝতে পারলাম সুইমিংপুলটা নীল রংয়ের টাইলস দিয়ে তৈরি করেছে তাই মনে হচ্ছে পানিটাই বুঝি নীল। সুইমিং পুলের এক পাশে ডাইভ দেওয়ার জায়গায় মোষের মতো বড় একটা মানুষ লাল রংয়ের ছোট আর টাইট একটা জাঙ্গিয়া পরে সেখান থেকে একটা ডাইভ দিল মনে হলো তার ধাক্কায় সুইমিংপুলের সব পানি বুঝি উপরে উঠে গেল। আমরা পানিটা হাত দিয়ে দেখলাম যথেষ্ট ঠান্ডা। মাহবুব পানিটা শুঁকে বলল ওষুধের গন্ধ। নদী আর হাওড়ের এতো সুন্দর পানি থাকতে মানুষ ঠান্ডা ওষুধের গন্ধে ভরা পানিতে লাল জাঙ্গিয়া পরে কেন সাঁতার কাটতে চায় কে জানে।
সুইমিং পুলটা দেখে আমরা মাঠে চলে এলাম। সেখানে পাশাপাশি অনেকগুলো টেনিস কোর্ট। টনি বলল, “চল টেনিস খেলি।”
আমি বললাম, “টেনিস কেমন করে খেলে আমি জানি না।”
ডোরিন বলল, “এর মাঝে জানার কী আছে? বলকে র্যাকেট দিয়ে পিটাবে।”
মাহবুব বলল, “তা ঠিক। আমরা তো কম্পিটিশনে খেলব না।”
ডোরিন বলল, “দাঁড়াও, আমি টেনিস র্যাকেট আর বল নিয়ে আসি।”
আমরাও ডোরিনের সাথে টেনিস বল আর র্যাকেট আনতে গেলাম। একটা আলমারীর ভিতর র্যাকেট আর বল সাজানো আছে। আমরা বেছে বেছে হালকা দেখে চারটা র্যাকেট আর কয়েকটা টেনিস বল নিয়ে এলাম।
টেনিস কোর্টে এসে আমরা খেলার চেষ্টা করতে থাকলাম। বলগুলিকে মারতে অনেক শক্তি লাগে। প্রায় সবগুলি বলই নেটে আটকে যেতে লাগল, কিন্তু তাতে আমাদের উৎসাহ মোটেও কমল না। টেনিস খেলতে খেলতে এক সময় আমরা টেনিস বল দিয়ে একজন আরেকজনকে মারতে গুরু করলাম এবং আবিষ্কার করলাম টেনিস খেলা থেকে এই খেলাতেই মজা অনেক বেশি। টেনিস কোর্টে র্যাকেট রেখে আমরা ছোটাছুটি করতে করতে এক সময় মনি কাঞ্চনের পিছনের দিকে চলে এলাম। জায়গাটা গাছপালা দিয়ে ঢাকা এবং অনেক নিরিবিলি। বড় বড় ঘাস এবং ঝোঁপ ঝাড়। সেখানে ডোরিন একবার তার টেনিস বল দিয়ে আমাকে মারল এবং বলটা মাটিতে ড্রপ খেয়ে লাফিয়ে উপরে উঠে একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেল! আমরা বলটা আর খুঁজেই পেলাম না। জলজ্যান্ত একটা বল কেমন করে চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে আমরা বুঝতেই পারলাম না।