টনি জিজ্ঞেস করল, “কোন প্রবলেম মামা?”
“ওই যে তিন তালা যদি তিরিশ ফুট উঁচু হয় তাহলে সাত তালা কতো ফুট উঁচুতে।”
“ও! সেইটা। কেন সেইটাতো সোজা।”
“তাহলে পারিস না কেন?”
“পারি নাই? টনি চিন্তা করার একটা অভিনয় করল খুবই কাঁচা অভিনয়, শুধু আমরা বুঝতে পারলাম। তারপর বলল, “নব্বই ফুট।” তারপর ভুরু কুচকে বলল, “হয়েছে?”
কাদের মামার মুখটা একটু কালো হয়ে গেল। কাদের মামা চায় কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারুক যেন সারাক্ষণ সেটা দিয়ে খোটা দিতে পারে। মুখ কালো করেই আমতা আমতা করে বলল, “যা। হয়েছে।”
টনি বলল, “মামা, তুমি সব সময় আমাদের ইন্টারেস্টিং প্রবলেম করতে চাও। এইবার আমি তোমাকে একটা প্রবলেম দিই।”
কাদের মামার মুখটা কেমন জানি বাঁকা হয়ে গেল। সেই বাঁকা মুখেই জিজ্ঞেস করল, প্রবলেম দিবি? দে।”
টনিকে আজকে সকালেই আমরা শিখিয়ে দিয়েছি। টনি মুখটা সূচালো করে বলল, “একটা গ্রামে একটা নাপিত শুধু তাদের দাড়ি শেভ করে দেয় যারা নিজেরা নিজেদের দাড়ি শেভ করে না।”
টনি থামল। কাদের মামা বলল, “তাহলে?”
টনি বলল, “নাপিত কী নিজের দাড়ি নিজে শেভ করে?”
কাদের মামা মুখটা আরো বাঁকা করে বলল, “এইটা তোর প্রবলেম?”
“হ্যাঁ।”
মামা মুখটা বাঁকা করে চিন্তা করতে শুরু করল। মামার বাঁকা মুখটা প্রথমে সোজা হয়ে গেল তারপর কেমন জানি ঝুলে গেল। তারপর মাছের মতো একবার খুলতে লাগল তারপর একবার বন্ধ হতে লাগল।
ডোরিনের আম্মু বলল, “অনেক হয়েছে। এখন যা বাথরুমে গিয়ে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নিচে চল। লাঞ্চ করতে হবে। তোর আব্বু সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।
ডোরিন আর টনি আমাদের বাথরুমে নিয়ে গেল। অনেকগুলো বিশাল বড় বড় বাথরুম। মনে হয় বাথরুমের ভিতর ফুটবল খেলা না গেলেও ব্যাডমিন্টন খেলা যাবে। টনি টান দিয়ে ধবধবে সাদা টাওয়েল বের করে আমাদের হাতে দিয়ে সাবান লোশন এগুলো দেখিয়ে দিল।
আমরা একেকজন একেকটা বাথরুমে হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে এলাম। কাদের মামা তখনো একটুখানি হা করে চিন্তা করছে। টনি বলল, “বের করেছ মামা?”
কাদের মামা বলল, “না, মানে প্রবলেমটা ইন্টারেস্টিং
টনি বলল, না পারলে চেষ্টা করতে হবে না। তোমাকে আরেকটা প্রবলেম দিতে পারি, এবারে একটু সোজা দেখে–”।
ডোরিনের আম্মু এবারে তার ছেলেমেয়েদের ছোট একটা ধমক দিয়ে বলল, “অনেক হয়েছে। এখন নিচে যা, আমরা আসছি।”
আমরা তখন নিচে রওনা দিলাম। ঘর থেকে বের হয়ে টনি আনন্দে হি হি করে হাসতে লাগল। সারা জীবন কাদের মামা তাদেরকে জ্বালাতন করে গেছে, আজকে তার একটা প্রতিশোধ নেওয়া গেছে।
রেস্টুরেন্টে মাহবুব মামার পাশে বসল। মামা তখন মাহবুবকে ছুরি কাটা দিয়ে খাওয়া শিখিয়ে দিল। আমিও শিখে নিলাম। নিয়মটা খুবই সোজা, ছুরি যদি ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সেটা ধরতে হবে ডান হাতে এবং সেটা দিয়ে কোনো খাবার মুখে ঢোকানো যাবে না। এছাড়া আর কোনো নিয়ম নাই যা ইচ্ছা তাই করা যাবে, যেভাবে খুশি খাওয়া যাবে।
মামা শিখিয়ে দেবার পর আমি চোখের কোণা দিয়ে এদিকে সেদিকে তাকালাম, বেশ কয়েকজন বিদেশি মানুষ আছে তারা সবাই মামার নিয়ম মানছে। দেশি বেশ কয়েকজন মানুষ আছে যাদের কথাবার্তা ভাব ভঙ্গী বিদেশিদের মতো, তারাও মামার নিয়ম মেনে খাচ্ছে।
তবে মামা নিয়ম কানুন শিখিয়ে দিলেও নিজে কিন্তু হাত দিয়ে মাখিয়ে গপগপ করে খাচ্ছে। তার দেখা দেখি আমরাও! খেতে খেতে মামা বলল, হাত দিয়ে মাখিয়ে না খেলে তার নাকি পেট ভরে না! বিয়ে বাড়ির মতো টেবিলে খাবার দিয়ে যাচ্ছে না। লাঞ্চ টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে যার যেটা ইচ্ছা যত ইচ্ছা খাবার নিয়ে আসছে। আমি আর মামা আবার কবে ভালো করে খেতে পারব কে জানে তাই দুইজনই আচ্ছা মতন খেয়ে নিচ্ছিলাম। খাওয়া শেষ করে আমি টেবিলে রাখা দই মিষ্টি আনতে গেলাম। একটা বাটিতে করে বেশ খানিকটা দইয়ের উপর দুই দুইটা রসগোল্লা বসিয়ে আনছি, ঠিক যখন দুইজন বিদেশির টেবিলের পাশ দিয়ে হেঁটে আসছি তখন হঠাৎ করে একজন বিদেশির কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম, মানুষটা পরিষ্কার বলল, ইউরেনিয়াম’ এর আগে পিছে আরো অনেক কিছু বলছে কিন্তু শুধু এই শব্দটা আমি বুঝতে পেরেছি।
মানুষ দুইটা কি নিয়ে কথা বলছে আরেকটু ভালো করে শোনার জন্য আমি আমার হাতের চামুচটা ইচ্ছে করে নিচে ফেলে দিলাম। তারপর সেই চামুচটা তোলার জন্য নিচু হয়ে শোনার চেষ্টা করলাম মানুষ দুটো ইউরেনিয়াম নিয়ে কী বলছে। ব্যাটাদের উচ্চারণ বোঝা যায় না মনে হলো, টু থার্টি ফাইভ’ ‘রেডিও একটিভিটি’ এই দুটো শব্দও শুনতে পেলাম।
চামুচ তুলতে তো আর খুব বেশি সময় লাগে না, যদি দশ মিনিট ধরে হাতড়ে হাতড়ে চামুচ তুলতেই থাকি তাহলে শুধু এই দুজন মানুষ নয় অন্যরাও চিন্তায় পড়ে যাবে। তাই চামুচটা তুলে নিজের টেবিলে ফিরে এলাম। কিন্তু এই বিদেশি মানুষগুলো এখানে এসে ইউরেনিয়াম নিয়ে কেন কথা বলছে সেটা নিয়ে চিন্তার মাঝে পড়ে গেলাম।
আমার পাশে ডোরিন বসেছে। আমি গলা নামিয়ে তাকে বললাম, “ডোরিন তুমি কী বিদেশিদের ইংরেজি বুঝো?”
“বুঝি। কেন?”
“ঐ যে দুইটা সাদা চামড়ার বিদেশি বসে আছে দেখেছ?”
ডোরিন মাথা ঘুরিয়ে দেখে বলল, “হ্যাঁ দেখেছি। কেন, কী হয়েছে?”