হ্যাঁ, তা ঠিক।
আপনাকে স্থানীয় ব্যাংকগুলো লোন দিচ্ছে না কেন, মিঃ ভিকি?
ভিকি সরাসরি কোনো জবাব দিতে পারল না। লরেন্স অলিভার হাসিমুখে বলল, আমার মনে হয় পিওর সিল্ক থেকে আপনার সরে আসা উচিত। পিওর সিল্কের বাজার ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।
ভিকি চুপ করে রইল। লরেন্স অলিভার বলল, আপনাদের যে পরিবারিক নামাক আছে তার ওপর নির্ভর করেই আমরা আপনাকে লোন দিতে রাজি আছি, তবে আপনাকে পিওর সিল্ক থেকে সরে আসতে হবে।
ভিকি ক্লান্তস্বরে বলল, তা সম্ভব নয়।
সম্ভব নয় কেন?
মিঃ লরেন্স, সিল্ক ব্যবসা আমাদের অনেক দিনের ব্যবসা। আমার দাদা ছিলেন রাস্তার ছোকরা। সিল্ক ব্যবসা করেই তিনি কোটিপতি হয়েছিলেন। তিন-পুরুষের সেই ব্যবসা আমি নষ্ট করব তা হয় না।
লরেন্স অলিভার মৃদু হাসল।
আপনি হাসছেন কেন?
হাসছি কারণ আপনি ব্যবসার জন্যে ফিট নন। আপনি সেন্টিমেন্টাল।
সেন্টিমেন্টাল হওয়া কি খুব দোষের? ভিকি চুপ করে গেল।
আমি দুঃখিত যে কিছু করতে পারছি না। তবে আপনি যদি ব্যবসার ধারা বদলাতে চান তা হলে আমরা সঙ্গে দেখা করবেন। আমি নিশ্চয়ই সাহায্য করব।
ভিকি মৃদুস্বরে বলল, তা সম্ভব নয়।
.
রুন ত্রিশ হাজার লিরা দিয়ে নতুন একটা ড্রেস কিনেছে। অনেকটা জাপানি কিমানোর মতো দেখতে। হালকা সবুজ রঙের ওপর নীল নকশা। ঘরে আনার পর তার মনে হল, ঘন সবুজের ওপর ঘন নীল নকশার যে ড্রেসটি ছিল সেটিও সন্ধ্যাবেলার জন্যে চমৎকার। রুন সেটাও কিনে আনল। একই ডিজাইনের উপর আরো দুটো ড্রেস ছিল। সে দুটোও কিনে ফেলবে কি না এই বিষয়ে সে ঠিক মনস্থির করতে পারল না। সবগুলি কিনে ফেলবার পেছনে সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে তা হলে তাকে দেখে অন্য কেউ একই ডিজাইনের পোশাক সঙ্গে সঙ্গে কিনতে পারবে না। আর না কেনার পেছনে যুক্তি হচ্ছে, ভিকি রাগ করবে।
ভিকি অবিশ্যি রাগ করল না, ভাবলেশহীন চোখে তাকিলে দেখল। রুন হালকা গলায় বলল, খরচ একটু বেশি পড়ে গেল, কিন্তু দ্যাখো-না, এত চমৎকার ডিজাইন রোজ রোজ পাওয়া যায় না। আর সবুজ রঙের গাম্ভীর্যটুকু দ্যাখো। চোখ ফেরানো যায় না। তুমি খুশি হয়েছ তো?
হ্যাঁ, হয়েছি।
না, ঠিক খুশি হওনি। একটু রাগ তোমার মধ্যে আছে। কিন্তু আমি ড্রেসটা গায়ে দিয়ে আসি, দেখবে কী অদ্ভুত লাগে। ভালো কথা, ঐ লোকটা তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। খুব নাকি জরুরি।
কোন লোকটা?
আমাদের বডিগার্ড। ওর নাম মনে থাকে না আমার।
কী চায় সে?
আমি জানি না। আমাকে কিছু বলেনি।
বেশ, ডাকো।
.
ভিকি মন দিয়ে ওর কথা শুনল। লোকটি ঘরের চারদিকের দেয়াল তিনফুট উঁচু করতে চায়, একটি কুকুর রাখতে চায়।
মিঃ ভিকি, তোমার বাড়ি খুবই অরক্ষিত। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তবে তোমার বাড়িতেই ঘটবে।
জামশেদ, তুমি একটা কথা ভুলে যাচ্ছ। আমার মেয়েকে কেউ কিডন্যাপ করবে না। তোমাকে আমি রেখেছি শুধু আমার স্ত্রীকে খুশি করবার জন্যে। তুমি তার কাছে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠার প্রতীক।
এই কথা তুমি কিন্তু আমাকে আগে বলনি।
এখন বললাম। এখন থেকে জেনে রাখো
ও।
এখানে থাকতে তোমার কেমন লাগছে?
জামশেদ জবাব দিল না।
ভিকি বলল, অ্যানি অবিশ্যি খুব খুশি। তোমাকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে।
জামশেদ অবাক হয়ে তাকাল। তাকে পছন্দ করবার তেমন কোনো কারণ নেই। বরং অপছন্দই হবার কথা।
তোমাকে ও কী বলে ডাকে জান? বুড়ো ভালুক।
বুড়ো ভালুক?
তোমাকে নাকি ওর বুড়ো ভালুকের মতো লাগে।
আমার মেয়েটিকে কেমন লাগে তোমার চমৎকার না?
শিশুদের আমি ঠিক পছন্দ করি না, মিঃ ভিকি। ওদেরকে কখনোই ভালো লাগে না।
তা-ই বুঝি?
হ্যাঁ
পছন্দ না করার কারণ কী?
আছে হয়তো কোনো কারণ। আমি ঠিক জানি না। কারণ নিয়ে কখনো ভাবিনি।
০৪.
রুন দারুণ বিরক্ত হল।
একজন লোক আগ্রহ করে নিতে চাইছে, কিন্তু মেয়ে যাবে না। এর মানে কী? কতরকমের মজার ব্যবস্থা আছে। সারারাত জেগে সার্কাস-টার্কাস দেখবে, তা না, অ্যানি মুখ গোজ করে আছে।
কেন যাবে না, অ্যানি?
আমার ভালো লাগে না।
ভালো না লাগার কী আছে এখানে।
বললাম তো আমার কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না।
সার্কাস দেখতে তোমার ভালো লাগে না?
অ্যানি চুপ।
পুতুলনাচ দেখতে ভালো লাগে না?
কোনো জবাব নেই।
তার ওপর প্যান্টোমাইম আছে।
অ্যানি টেনে টেনে বলল, তুমি যদি যাও তা হলে আমি যাব না।
রুন বিরক্ত স্বরে বলল, আমি তোমার কোনো অজুহাত শুনতে চাই না। তুমি যাবে এবং হাসিমুখে যাবে। একটা লোক এত টাকা খরচ করে টিকিট এলেছে, না, সে যাবে না! দিনরাত ঘরে বসে থেকে এটা তোমার হয়েছে।
মা, আমি কোথাও যেতে চাই না।
এ ব্যাপারে আমি আর কথা বলতে চাই না। তুমি তোমার কাপড় গুছিয়ে রাখো। সন্ধ্যাবেলা এতরা চাচা তোমাকে তুলে নিয়ে যাবে।
অ্যানি তার বাবাকে গিয়ে ধরল, বাবা, আমি ঐ জাহাজে যেতে চাই না।
কেন মা?
আমার ভালো লাগছে না।
শরীর খারাপ?
না, শরীর ঠিকই আছে?
তা হলে কি মন-খারাপ? মন-খারাপ হলে তো যাওয়াই উচিত। তা হলে মন ভালো হবে। তা ছাড়া বহু টাকা খরচ করে তোমার এতরা চাচা টিকিট কেটেছেন। সেটা দেখতে হবে না?
আমার একটুও ইচ্ছা করছে না বাবা।
ইচ্ছে না করলেও আমাদের অনেক কিছু করতে হয়। তুমি না গেলে তোমার মা খুব রাগ করবেন। তোমার মা রাগ করলে কী অবস্থা হয় তা তো তুমি জানোই। জানো না?