দরজার ওপাশে অপরিচিত একজন লোক রিভলভার উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নগ্নদেহের নিমোকে দেখে তার কোনো ভাবান্তর হল না। ভারী গলায় বলল, অসময়ে তোমাকে বিরক্ত করছি। খুবই লজ্জিত। কোনোরকম চেঁচামেচি করবে না।
নিমো কোনো শব্দ করল না। লোকটা ঘরে ঢুকে পড়ল। নিমো মৃদুম্বরে বলল, তোমার নাম কী?
জামস। জামশেদ।
তুমি কী চাও? আমার সঙ্গে কোনো টাকাপয়সা নেই।
আমি টাকাপয়সার জন্যে আসিনি।
তা হলে কীজন্যে এসেছ? আমার সঙ্গে বিছানায় যাবার জন্যে?
না।
নিমো দেখল লোকটা তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।
তুমি ঢুকলে কীভাবে?
ঢুকতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি।
নিমো দেখল লোকটার মুখে ছোট্ট একটা হাসি। এর মধ্যে হাসির কী আছে?
কী চাও তুমি?
তোমার কাছে উইয়ি নামের যে-লোকটি আসবে ওর মাথায় আমি বেরেটা থার্টি টুর তিনটি বুলেট ঢুকিয়ে দেব। সেজন্যেই এসেছি।
উইয়ি যে এখানে আসে তা তো তোমার জানার কথা নয়।
নিমো আবার লক্ষ করল, লোকটির মুখে হালকা একটু হাসি।
উইয়িকে মারতে চাও কেন?
ও বারো বছরের একটি মেয়েকে রেপ করে মেরে ফেরেছে। মেয়েটার নাম অ্যানি।
নিমোর মুখ সাদা হলে গেল। কী বলছে এই লোক? নিমো চাপাস্বরে বলল, উইয়ি এরকম হতেই পারে না।
তুমি কি উইয়ির স্ত্রী?
না। তবে আমরা শিগগিরই বিয়ে করব। তুমি হাসছ কেন? এর মধ্যে হাসির কী আছে
তোমার মতো বেশ কয়েকটা মেয়ে আছে উইয়ির। ওদের সবাই হয়তো জানে উইয়ির সঙ্গে তাদের বিয়ে হবে।
নিমো জবাব দিল না। লোকটি একটা সিগারেট ধরাল, আর ঠিক তখনই বাড়ির সামনে থামল বড় একটি গাড়ি। সিগারেট অ্যাশট্রেতে গুঁজে দিল লোকটি।
এই মেয়ে, শোনো। তুমি সবসময় যেভাবে দরজা খোলো ঠিক সেইভাবেই খুলবে। খোলামাত্রই চেষ্টা করবে প্রথম সুযোগেই দূরে সরে যেতে।
আর যদি দূরে না সরি? যদি উইয়িকে জড়িয়ে ধরে থাকি?
তা হলে তোমাদের দুজনকে গুলি করব।
কী ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর! কোনো সন্দেহ নেই এই লোক দুজনকে মারতে তিলমাত্র দ্বিধা করবে না। নিমো দেখল লোকটা দরজা বন্ধ করে বাঁদিকের ড্রেসিংটেবিলের কাছে সরে গেছে। উইয়ির ভারী পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। নিমোর ইচ্ছা হল প্রাণপণে চেঁচিয়ে উইয়িকে সাবধান করে। কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো স্বর বেরুল না। উইয়ি যখন দরজায় টোকা দিয়ে বলল, কোথায় আমার ময়না পাখি, দেখন হাসি। তখন সে অন্যদিনের মতোই দরজা খুলে দিল। উইয়ি ঘরে ঢুকল নিমোকে জড়িয়ে ধরে। আর সেই সময় একটা ভারী গলার স্বর শোনা গেল, ভালো আছ, উইয়ি? আমাকে চিনতে পারছ আশা করি?
উইয়ি নিমোকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত হাত ঢোকাল প্যান্টের পকেটে আর তখনই পরপর তিনবার গুলি হল।
নিমো কিছু বুঝতে পারছে না। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সে দেখছে। উইয়ির প্রকাণ্ড দেহটা খাটের পাশে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছে। বিদেশী লোকটা কী যেন বলছে তাকে। কী বলছে? সবকিছু অস্পষ্ট ধোয়াটে।
এই মেয়ে তুমি কাপড় পরে নাও। পুলিশ আসবে এক্ষুনি। ওদের সামনে এরকম ন্যাংটো অবস্থায় বের হওয়া ঠিক হবে না।
লোকটা বাতি নিভিয়ে অন্ধকারে বের হয়ে গেল। খুব ছুটাছুটি হচ্ছে বাইরে। রক্ষী দুজন দৌড়ে আসছে সম্ভবত। উইয়ির গাড়িতেও যে একজন দেহরক্ষী সবসময় থাকে সেও ছুটে আসছে। নিমোর মনে হল সে এখন প্রচুর গোলাগুলি শুনবে। কিন্তু সেরকম কিছুই শুনল না। সে কি জ্ঞান হারাচ্ছে? উইয়ির পড়ে-থাকা বিরাট শরীরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভরতি করে বমি করল। গা গুলাচ্ছে। ঘরবাড়ি কেমন যেন দুলছে। নিমো দ্বিতীয়বার বমি করল।
.
রিনালোর অফিসঘরটি ঠাণ্ডা। এয়ারকুলার আছে। তার ওপর একটি ফ্যান ঘুরছে। তবু নিমো ঘামতে লাগল।
পুলিশি ব্যাপারে নিমোর কোনো পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই। ভাসাভাসা একটি ধারণা যে পুলিশ অফিসাররা নির্দয় প্রকতির হয় এবং উলটোপালটা প্রশ্ন করে সহজেই ফাঁদে ফেলে দেয়। কিন্তু এই অফিসারের বয়স অল্প এবং সে প্রশ্ন করছে খুবই আন্তরিক ভঙ্গিতে। কফি খেতে দিয়েছে। কথা বলছে নরম গলায়, যদিও কথাগুলো শুনতে তার মোটেও ভালো লাগছে না।
তুমি কি একজন প্রোসটিটিউট?
জি না।
না বলছ কেন? তুমি তো থাকছিলে রক্ষিতার মতো। উইয়ির হাতে পড়বার আগেও অনেক পুরুষের সঙ্গে থেকেছ। থাকনি?
নিমো চুপ করে রইল।
তুমি কি জানতে উইয়ি পতিতাবৃত্তির একটা বড় অংশ পরিচালনা করে?
না।
উইয়ির সঙ্গে যেসব মেয়ে থাকে তারা পরে বিভিন্নরকম পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে বা পড়তে বাধ্য হয় এটা তুমি জানতে না?
জি না। উইয়ি আমাকে বিয়ে করবে বলেছিল।
তা কি তুমি এখনও বিশ্বাস কর?
আমার বিশ্বাস অবিশ্বাস উইয়ি বেঁচে থাকলে প্রমাণ হত। সেটা তো এখন প্রমাণ করবার কোনো পথ নেই।
যে-লোকটা উইয়িকে মা’রল সে একজন বিদেশী?
হ্যাঁ।
কী করে বুঝলে? টেনে টেনে কথা বলছিল। তার চেহারাও বিদেশীদের মতো। নামটাও সেরকম।
সে তোমাকে তার নাম বলেছে? হ্যাঁ।
কী নাম?
আমার মনে নেই।
সে বলেছে অ্যানির মৃত্যুর জন্য সে শাস্তি দিচ্ছে?
হ্যাঁ।
আচ্ছা, সে কি তার নাম জামশেদ বলেছে?
আমার মনে পড়ছে না।
লোকটার কোনো বৈশিষ্ট্য তোমার মনে পড়ে?
লোকটি খুবই ঠাণ্ডা মাথায় সমস্ত ব্যাপারটা ঘটাল। সে এতটুকুও উত্তেজিত ছিল না।
গুলি করার আগে লোকটি কোনো কথাবার্তা বলেছে?
বলেছে, কিন্তু আমার মনে নেই।