ও।
তুমি কি কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছ?
না।
চার্চে যাবার কথা মনে আছে?
আছে, আছে।
এতরা টেলিফোন নামিয়ে রাখল।
১৪.
রিনালো পুলিশের হমিসাইডের লোক। অনেক ধরনের বিকৃত মৃতদেহ দেখে তার অভ্যৈস আছে। তবুও ফসিলার লাশের সামনে সে ভ্রু কুঁচকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রইল। খুনটা করা হয়েছে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায়। হাতের তালুতে পেরেক বসিয়ে দেবার ব্যাপারটি তাঁকে ভাবাচ্ছে। মাফিয়াদের দলগত বিরোধ শুরু হল? হলে মন্দ হয় না। নিজেরা নিজেরা খুনোখুনি করে মরুক। কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নাও হতে পারে। ফসিলোর হাতে বসানো পেরেক দেখে মনে হয় কেউ তার কাছ থেকে কথা আদায় করতে চেয়েছে। কিন্তু ফসিলো এমন কোনো ব্যক্তি নয় যায় কাছে মূল্যবান খবর আছে। সে ভিকানডিয়ার একজন অনুগত্য ভৃত্য মাত্র।
রিনালো নোটবই খুলে দুটো পয়েন্ট লিখে রাখল। এক, পেট্রোল পুলিশকে সতর্ক করে দিতে হবে। যদি এই খুনটা মাফিয়াদের দলগত বিরোধ থেকে হয়ে থাকে তা হলে অল্প সময়ের মধ্যে বেশকিছু খুনোখুনি হবে। দুই, ভিকানডিয়ার কাছে যত টেলিফোন এখন থেকে যাবে ও আসবে সবগুলি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এটা খুব জরুরি। দলের কেউ মারা পড়লে বসদের টেলিফোনের সংখ্যা খুব বেড়ে যায়। অধিকাংশ কলই হয় অর্থহীন ধরনের। তবু তার মধ্যেও অনেক খবরাখবর থাকে।
রিনালো সন্ধ্যার দিকে ভিকানডিয়ার ভিলায় টেলিফোন কল। রিনালোকে জানানো ইল ভিকানডিয়া ঘরে নেই। কোথায় আছে তাও জানা নেই। রিনালো বলল, আমি হমিসাইডের একজন ইন্সপেক্টর, আমার নাম রিনালো।
ও। আপনি ধরুন, দেখি উনি আছেন কি না।
ভিকনিডিয়ার মধুর গলা পাওয়া গেল সঙ্গে সঙ্গে। কে বলছেন?
আমি রিনালো, হমিমাইড ইন্সপেক্টর।
বড় আনন্দিত হলাম। কিন্তু কী করতে পারি আপনার জন্যে?
ফসিলো মারা গেছে শুনেছেন?
কোন ফসিলো?
এঞ্জেল ফসিলো।
মারা গেছে? আহা! মৃত বড় কুৎসিত জিনিস, মিস্টার রিনালো।
তা ঠিক। খবরটা কি আপনি আমার কাছ থেকেই প্রথম শুনলেন, না আগেই শুনেছেন?
আগেই শুনেছি।
ভিকানডিয়া, আপনি কি এই ধরনের আরো মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন?
মৃত্যু একটি বাজে ব্যাপার, মিস্টার রিনালো। কিন্তু আমরা সবাই মারা যাই। তা-ই নয় কি?
আপনি আমার কথায় জবাব দেননি। এই ধরনের আরো মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন কি?
আশা ও আশঙ্কা এই দুটো জিনিস নিয়েই তো আমরা সবাই বাঁচি।
রিনালো টেলিফোন নামিয়ে রাখল। এই ধরনের কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া মুশকিল। এদিক দিয়ে ক্যানটারেলার কথাবার্তা সহজ স্বাভাবিক। বাড়তি দার্শনিকতা নেই। প্রশ্নের জবাব দিতে কোনোরকম দ্বিধা নেই।
ক্যানটারেলা, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড কি আরো হবে?
মনে হয় না, মিঃ রিনালো। এটা দলগত কোনো বিরোধ নয়।
আপনি কি এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত?
মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। বস ভিকামডিয়ার বয়স হয়েছে। তিনি এখন সবরকম বিরোধ এড়িয়ে চলেন।
কারো সঙ্গেই তার কোনো বিরোধ নেই বলতে চান?
বিরোধ নেই তা নয়, তবে যে-কটা বড় ফ্যামিলি এখন আছে তাদের সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো।
তা হলে আপনার ধারণা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বড় ফ্যামিলির স্বার্থ জড়িত নয়?
সেরকমই ধারণা। অবিশ্যি আমার ধারণা ভুলও হতে পারে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আরকিছু জিজ্ঞেস করবার নেই আপনার?
আপাতত না।
ভালো কথা, মেয়েমানুষের ব্যাপারে আপনার উৎসাহ আছে? আমার জানামতে কয়েকটি মেয়ে আছে, সঙ্গিনী হিসেবে ওদের তুলনা নেই। ভারতীয় মেয়ে। জানেন তো ভারতীয় মেয়েরা কেমন মধুর স্বভাবের হয়।
এইসব বিষয়ে আমার তেমন কোনো উৎসাহ নেই।
বলেন কী! পুলিশে চাকরি করলেই একেবারে শুষ্কং কাষ্ঠং হতে হবে এমন তো কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া যেসব মেয়ের কথা বলছি ওর লাইসেন্সড গার্লস। বেআইনি কোনো ব্যাপার নেই।
রিনালো টেলিফোন নামিয়ে রাখল। একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে এইজাতীয় কথাবার্তা বলার ব্যাপারে ওদের কোনো দ্বিধাসংকোচ নেই এটাই আশ্চর্য। তার চেয়েও বড় আশ্চর্য এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দাঁড় করানো যায় না। কেউ ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। প্রমাণ জোগাড় করা যাবে না। এরা আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরের একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়ে পড়েছে।
রিনালো ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেলল।
১৫.
মেয়েটির নাম নিমো। বয়স সতেরো-তেরো হবে কিন্তু দেখায় আরো কম। রাত দশটার মতো বাজে। এমন কিছু রাত নয়, কিন্তু চারদিক চুপচাপ হয়ে গেছে। অঞ্চলটি শহরের উপকণ্ঠে। লোকচলাচল কম। বাংলা প্যাটার্নের এই বাড়িটির চারদিকে উঁচু দেয়াল। দুজন রক্ষী পাহারা দেয় পালা করে। এই বাড়িটির সঙ্গে বাইরের যোগাযোগ নেই বললেই হয়। কিন্তু নিমোকে সে ব্যাপারে খুব একটা উদ্বিগ্ন মনে হয় না। এরকম বন্দিজীবন মনে হয় তার ভালোই লাগছে।
খুটখুট করে টোকা পড়ল দরজায়।
নিমো বলল, কে? কোনো জবাব পাওয়া গেল না। উইয়ি এসে গেছে নাকি? উইয়ি সাধারণত রাত এগারোটার দিকে এসে বাকি রাতটা কাটায়। আজ একটু সকাল সকাল এসে পড়ল নাকি? নিমো আবার বলল, কে, উইয়? খুট খুট করে দুবার শব্দ হল কিন্তু কেউ জবাব দিল না। রক্ষীদের কেউ এসেছে কি? কিন্তু ওদের কি এত সাহস হবে? উইয়ির কঠিন আদেশ আছে যেন এতরা বাড়ির কম্পাউন্ডের ভেতর না ঢোকে। সে আদেশ অমান্য করবার সাহস ওদের হবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে সবারই কি একটু আধটুআদেশ অমান্য করতে ইচ্ছে করে না? নিমোর তো সবসময়ই ইচ্ছে করে। আচ্ছা, রক্ষীদের কেউ যদি হয় তা হলে দরজা খোলামাত্র ভয়ানক অবাক হবে। ওরা নিশ্চয়ই স্বপ্নেও ভাবেনি সম্পূর্ণ নগ্নদেহের একটি মেয়ে দরজা খুলে দেবে। এরকম দৃশ্য শুধু স্বপ্নেই দেখা যায়। বাস্তবে দেখা যায় না। নিমো হাসিমুখে দরজা খুলে দিল।