ভিকির চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।
জিনিসটা যে এরকম দাঁড়াবে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল। তোমার ঐ বেকুব বডিগার্ড যেভাবে গুলি ছুঁড়ছিল তাতে অ্যানির মারা পড়ার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। ভাগ্যক্রমে গুলি লাগেনি।
ভিকি উঠে দাঁড়াল।
কী ব্যাপার, যাচ্ছ নাকি?
হুঁ
বসো আরো খানিকক্ষণ।
না।
পুলিশের কাছে সব খুলে বলবে বলে ঠিক করেছ নাকি?
আমি কিছুই ঠিক করিনি।
ভিকি বাড়ি ফিরে গেল না। একা একা ঘুরে বেড়াল দীর্ঘ সময়। তারপর হঠাৎ কী মনে করে চলে গেল হাসপাতালে। অসময়ে তাকে হাসপাতালে ঢুকতে দেবার কথা নয়, কিন্তু আশ্চর্য, সে জামশেদের সঙ্গে দেখা করতে চায় শুনেই তাকে ঢুকবার পাশ দেয়া হল।
লবিতে যে-পুলিশ অফিসার বসে ছিল সে এগিয়ে এল, আপনি নিশ্চয়ই ভিকি?
হ্যাঁ।
জামশেদের সঙ্গে দেখা করবার জন্যে এসেছেন?
হ্যাঁ।
তার আগে কি আমি আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
আমি খুব ক্লান্ত। আমি কোনো আলোচনায় এই মুহূর্তে যেতে চাই না।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। পরে কথা বলব। আমি অ্যানি অপহরণের তদন্তকারী দলের একজন সদস্য।
ও
যান, আপনি ভেতরে চলে যান। জামশেদ সতেরো নম্বর কেবিনে আছে। ভালোই আছে।
ধন্যবাদ।
ভিকি মৃদুস্বরে বলল, এখন কি শরীর ভালো?
জামশেদ মাথা নাড়ল। ভালো।
আমি আগেও একবার এসেছিলাম। তোমার তখন জ্ঞান ছিল না।
আমি জানি। আমি খবর পেয়েছি।
হাসপাতাল থেকে কবে ছাড়া পাবে?
আরো সপ্তাহখানেক লাগবে।
তারপর কী করবে কিছু ঠিক করেছ?
ভিকি চুপচাপ হয়ে গেল।
জামশেদ তাকে নীরবে লক্ষ করতে লাগল। ভিকি একসময় বলল, তোমার এখানে সিগারেট খাওয়া যেতে পারে? কেউ কোনো আপত্তি করবে না তো?
নাহ।
ভিকি সিগারেট ধরাল। টানতে লাগল অপ্রকৃতিস্থর মত।
জামশেদ বলল, তুমি মনে হচ্ছে এখনও কোনো খবর পাওনি।
কিসের খবর?
তুমি বাড়ি ফিরে যাও।
কী হয়েছে?
জামশেদ বলল, একটা খারাপ সংবাদ আছে তোমার জন্যে
অ্যানি কি মারা গেছে?
হ্যাঁ।
কখন খবর পাওয়া গেল?
আধ ঘণ্টা আগে।
ভিকি উঠে দাঁড়াল।
জামশেদ বলল, অ্যানির ডেডবডি পাওয়া গেছে একটি গাড়ির লাগেজ কেবিনে।
ও
ভিকি, আমি একটি কথা তোমাকে বলতে চাই।
বলো।
তোমার সঙ্গে কিছুদিন হয়তো আমার দেখা হবে না। আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে শরীর সারাবার জন্যে অনেক দূরে কোথাও যাব। তারপর আবার ফিরে আসব।
ও।
ফিরে আসব প্রতিশোধ নেবার জন্যে। আবার আমাদের দেখা হবে।
ভিকির চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। জামশেদ তাকিয়ে রইল। তার চোখ পাথরের চোখের মতো। সে-চোখে ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা এইজাতীয় অনভূতির কোনো ছায়া পড়ে না। সে মৃদুস্বরে দ্বিতীয়বার বলল, আমি আবার ফিরে আসব।
১২.
রাত প্রায় দুটোর দিকে এতরার শোবার ঘরের টেলিফোন বেজে উঠল। এত রাতে অকাজে কেউ ফোন করে না, নিশ্চয়ই জরুরি কিছু। এতরা বিছানা ছেড়ে উঠে এল। সে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। টেলিফোনের শব্দে জেগেছে।
হ্যালো, আমি এতরা, কাকে চান?
আপনাকেই চাই।
আপনি কে বলছেন?
ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া গেল না। কিন্তু গলার আওয়াজ শুনে মনে হয় বিদেশী কেউ। ভাঙা-ভাঙা ইতালিয়ান বলছে।
হ্যালো, কে আপনি?
আমি কে সেটা জানা কি খুব প্রয়োজন তারচে বরং কীজন্যে টেলিফোন করেছি সেটা বলে ফেলি।
আমাকে কিছু বলতে হলে আগে আপনার পরিচয় দিতে হবে। রাতদুপুরে এভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায় না। কে আপনি?
ওপাশের লোকটি সে-প্রশ্নের জবাব দিল না। অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলল, বারো বছরের অ্যানি নামের কোনো মেয়েকে চেনেন?
আপনি কে?
বারো বছরের ঐ মেয়েটির খুব রহস্যময়ভাবে মৃত্যু হয়েছে।
কে আপনি?
আমি ঐ মেয়েটির একজন বন্ধু। আমার নাম জামশেদ। চিনতে পারছেন?
এতরা একবার ভাবল টেলিফোন নামিয়ে রাখে। কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? লোকটি আবার টেলিফোন করবে।
রহস্যময় কিছু তো আমি জানি না। মেয়েটি মারা পড়েছে কিডন্যাপারদের হাতে। এবং আমি যতদূর জানি ওর মৃত্যুর জন্যে তুমি বহুলাংশে দায়ী। তুমি ছিলে মেয়েটার দেহরক্ষী। তুমি তাকে রক্ষা করতে পারনি। ঠিক না?
ঠিক।
আজ তার মৃত্যুর পর বন্ধু সেজেছ এবং রাতদুপুরে টেলিফোন করে আমাকে বিরক্ত করছ?
তা অবিশ্যি করছি। এবং করার একটি কারণ আছে।
কী কারণ?
কারণ হচ্ছে–আমার ধারণা মেয়েটির মৃত্যুর সঙ্গে তোমার যোগ আছে। হ্যালো, টেলিফোন রেখে দিচ্ছ নাকি?
না।
আমি তোমাকে এর জন্যে খানিকটা শাস্তি দিতে চাই।
তুমি কোত্থেকে টেলিফোন করছ?
কেন, পুলিশে খবর দিতে চাও? সেটা মনে হয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। শোনো এতরা–।
এতরা টেলিফোন নামিয়ে রাখল। লোকটা নিশ্চয়ই আবার টেলিফোন করবে। পুলিশকে বলা দরকার যাতে পুলিশ কলটি কোত্থেকে করা হচ্ছে তা ধরতে পারে। পাবলিক বুথ থেকে করা হলে ধরা যাবে না। তবে জানা যাবে কলটি কোন এরিয়া থেকে আসছে।
এতরা নাম্বার ডায়াল করল তবে পুলিশের কাছে নয়। হাসপাতালে। সিটি হসপিটাল।
রিসিপশান, আমি একজন রুগি সম্পর্কে জানতে চাই। আমি খুবই উদ্বিগ্ন।
এক্ষুনি জেনে দিচ্ছি।
ওর নাম জামশেদ। বিদেশী।
বেড নাম্বার এবং কেবিন নাম্বার?
সেটি ঠিক বলতে পারছি না।
ঠিক আছে, ধরে রাখুন। ডিউটি রেজিস্টার দেখে বলছি।
এতরা টেলিফোন কাঁধে নিয়েই নিজের জন্যে একটি মার্টিনি বানাল। ওদের নাম খুঁজে বের করতে সময় লাগবে।