কিন্তু বারবার তার চোখ ভিজে উঠতে লাগল। রাত কত হয়েছে কে জানে! ঘরে কোনো ঘড়ি নেই, কোনোরকম সাড়াশব্দও আসছে না। নিশ্চয়ই জনমানবশূন্য কোনো জায়গা। বাড়িতে একা একা নিজের ঘরে ঘুমুতেও ভয় লাগত তার। মাঝরাতে যুবার ঘুম ভাঙত ততবার ডাকত–মারিয়া, মারিয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত না মারিয়া সাড়া দিচ্ছে ততক্ষণ তার ঘুম আসত না। মনে হত নিশ্চয়ই খাটের নিচে ভূতটুত কিছু লুকিয়ে আছে।
আশ্চর্য, সেরকম কোনো ভয় লাগছে না। লোকগুলো চলে যাবার পর বরং অনেক কম লাগছে। বেঁটে লোকটা সারাক্ষণ কীভাবে তাকাচ্ছিল তার দিকে। বেশ কয়েকবার গায়ে হাত দিয়েছে। ভাবখানা এরকম যেন অজান্তে হয়েছে। একবার অ্যানি বলে ফেলল, আপনার হাত সরিয়ে নিন।
বেঁটে লোকটা হাত সরিয়ে নিল, সঙ্গের দুজন হেসে উঠল হা হা করে। বেঁটে লোকটা তখন অত্যন্ত কুৎসিত একটা কথা বলল। এমন কুৎসিত কথা কেউ বলতে পারে?
পাশের ঘরে টেলিফোন বাজছে। কেউ ধরছে না। আবার বাজছে আবার বাজছে। চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল অ্যানি। অদ্ভুত একটি স্বপ্ন দেখল সে। যেন জামশেদ এসেছে এ-ঘরে। তার হাতে ভয়ালদর্শন একটি অস্ত্র। জামশেদ বলছে, মামণি অ্যানি, তুমি শুধু একটি একটি করে মানুষ আমাকে চিনিয়ে দিবে। তারপর দ্যাখো আমি কী করি। আমি হচ্ছি জামশেদ। বন্ধুরা আমাকে কী ডাকে জান? বুড়ো ভালুক। আমি ভালুকের মতোই ভয়ংকর–হা হা হা।
অ্যানির ঘুম ভেঙে গেল। অ্যানি অবাক হয়ে দেখল দরজা খুলে এতরা চাচা ঢুকছেন। এটাও কি স্বপ্ন? না, স্বপ্ন নয় তো! সত্যি সত্যি তো এতরা চাচা! অ্যানি দেখল এতরা চাচার হাসিহাসি মুখ। এতরা চাচা অ্যানির মুখের টেপ খুলে দিয়ে নরম গলায় বললেন, কী, চিনতে পারছ তো?
অ্যানি ফুঁপিয়ে উঠল।
খুব ঝামেলা গেছে, না? ইস, হাতে দেখি দাগ বসে গেছে! কাঁদে না। দুষ্টু মেয়ে, কাঁদে না।
এতরা কাছে টেনে নিল অ্যানিকে। ভয়ের আর কিছুই নেই। সব ঝামেলা মিটেছে।
আপনি কি আমাকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন?
তোমার কী মনে হয়?
অ্যানি এতরার কাঁধে মাথা রাখল।
তোমাকে ছাড়িয়ে নিতেই এসেছি।
বলতে বলতে এতরা অ্যানির বুকে তার বাঁ হাত রাখল। অ্যানি কয়েক মুহূর্ত কিছু বুঝতে পারল না। এতরা চাচা কি ডান হাতে তার জামার হুক খোলার চেষ্টা করছে?
অ্যানি সরে যেতে চেষ্টা করল কিন্তু তার আগেই এতরা তাকে প্রায় নগ্ন করে ফেলল। অ্যানি বুঝতে পারছে একটা রোমশ হাত তার প্যান্টির ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।
প্যান্টি খুলে ফেলতে এতরাকে মোটেই বেগ পেতে হল না। সে নরম স্বরে বলল, তোমাকে একটুও ব্যথা দেব না। দেখবে ভালোই লাগবে তোমার।
অ্যানি চিৎকার বা কিছুই করল না। সে তার অসম্ভব সুন্দর নগ্ন শরীর নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। এতরা যখন টেনে তাকে তার কোলে বসাল তখন শুধু সে ফিসফিস করে তার মাকে ডাকতে লাগল।
ভিকি টেলিফোনে প্রায় কেঁদে ফেলল
১১.
ভিকি টেলিফোনে প্রায় কেঁদে ফেলল। হ্যালো এতরা, হ্যালো।
শুনছি।
কই ওরা তো আমার অ্যানিকে ছাড়ছে না!
এত অস্থির হচ্ছ কেন?
অস্থির হব না, কী বলছ তুমি!
শোনো ভিকি, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে এখন। সমস্ত ব্যাপারটাই জট পাকিয়ে গেছে, বুঝতে পারছ না?
-আমি বুঝতে পারছি না।
ঠিক আছে, তুমি ক্যাফে ইনে চলে আস। টেলিফোনে সব বলা যায় না।
অ্যানি বেঁচে আছে তো?
আরে তুমি বলছ কী এসব
ভিকি এবার গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করল।
হ্যালো ভিকি, তুমি চলে আসো কাফে ইনে। আমি থাকব সেখানে। ভালো কথা, রুন কেমন আছে? সে নিশ্চয়ই খুব বিচলিত?
ওকে ট্রাংকুলাইজার দিয়ে রাখা হয়েছে।
ঠিক আছে, তুমি চলে এসো।
ক্যাফে ইন বেন্টিলা পোর্ট-লাগোয়া ছোট্ট একটি কফি শপ। সারাদিন কফি এবং পটেটো চিপস বিক্রি হয়। সন্ধ্যার পর দু-তিন ঘণ্টার জন্যে ফ্রায়েড লবস্টার পাওয়া যায়। ভিড় হয় সন্ধ্যার পর। বসার জায়গা পাওয়া যায় না।
ভিকি এসে দেখল, এতরা একটা ছোট্ট কামরা রিজার্ভ করে তার জন্য বসে আছে। এতরার মুখ চিন্তাক্লিষ্ট। ভিকি এসে বসল, কিন্তু দীর্ঘ সময় কোনো কথা বলতে পারল না। এতরা বলল, কিছু খাবে হট সস দিয়ে লবস্টার চলবে? মেক্সিকান রেসিপি। চমৎকার!
ভিকি ঠাণ্ডা গলায় বলল, আমার মেয়ে কোথায়?
তুমি এমনভাবে জিজ্ঞেস করছ যাতে মনে হয় তোমার মেয়েকে আমি লুকিয়ে রেখেছি।
তুমি জান না সে কোথায় আছে?
আমি কী করে জানব?
সে কোথায় আছে তার কিছুই জান না?
না। তবে তোমাকে বলেছি ওদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে।
ভিকি ক্লান্তস্বরে বলল, আমি সমস্ত ব্যাপারটা পুলিশকে জানাতে চাই।
সেটা তোমার ইচ্ছা। একটা কথা আমার মনে হয় তুমি ভুলে যাচ্ছ, মূল পরিকল্পনাতে তুমিও আছ। পুলিশ তা ঠিক পছন্দ করবে না। এবং সবচেয়ে অপছন্দ করবে তোমার স্ত্রী রুন।
এতরা একটি সিগারেট ধরাল। আড়চোখে ভিকির দিকে তাকিয়ে বলল, ধরো এখন যদি তোমার মেয়ের কিছু হয় পুলিশ সবার আগে ধরবে তোমাকে।
আমার মেয়ের কিছু হয় মানে?
কথার কথা বলছি। কিছুই হবে না, মেয়ে ঘরে ফিরে আসবে। তুমি বৃথাই এতটা ভেঙে পড়ছ।
ভিকি চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
এতরা বলল, মনে হচ্ছে মূল পরিকল্পনার একটু অদলবদল হয়েছে। ওদের তিনটা লোক মারা গেছে। বাছা-বাছা লোক। এটা তো মূল পরিকল্পনায় ছিল না। ওদের দিকটা তো তোমাকে দেখতে হবে। সমস্ত ব্যাপারটা জট পাকিয়ে গেছে।