তোমার সমাধানটি আমার পছন্দ হয়নি।
ভালো। পছন্দ যে হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। আমরা নতুন সমাধানের কথা চিন্তা করব। তবে ভিকি, এতক্ষণ আমরা যে-কথাবার্তা বললাম তা যেন তৃতীয় কোনো প্রাণী জানতে না পারে।
জানবে না।
রুনকেও বলবে না।
এতরা, আমি আমার নিজস্ব ব্যাপারগুলোর কথা ঘরে বলে বেড়াই না।
গুড। আর শোনো, যদি তোমার মনে হয় আমার পরিকল্পনাটি প্রথম শ্রেণীর তা হলে বিনা দ্বিধায় আমাকে জানাবে। বুঝতে পারছি অ্যানির নিরাপত্তার বিষয়েই তুমি বেশি চিন্তিত। অ্যানিকে আমি আমার নিজের মেয়ের মতোই দেখি, ওর নিরাপত্তার যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে বলাই বাহুল্য।
ভিকি গম্ভীরমুখে ডিনারের অর্ডার দিল। ডিনার ছিল সাদামাটা কিন্তু ডিলারশেষে প্রচুর ড্রিংকসের ব্যবস্থা হল। এবং একসময় ভিকি বলল, তুমি যে-পরিকল্পনার কথা বলহু তার পেছনে তোমার কী স্বার্থ?
আমার দুটি স্বার্থ। বন্ধুর উপকার হবে। তা ছাড়া, আমিও কিছু টাকা পাব। দশ হাজার ডলার। বিরাট কিছু নয়, তবে মন্দ নয়।
ভিকি হঠাৎ বলল, আমি রাজি আছি।
ভালো। আমি জানতাম তুমি রাজি হবে।
ভিকি উত্তর দিল না।
কোনোরকম ঝামেলা ছাড়া এতবড় একটা দান একমাত্র জুয়ার টেবিলেই পাওয়া সম্ভব। এতরা টেনে টেনে হাসতে লাগল। আরেক রাউন্ড হবে?
ভিকি জবাব দিল না।
আরেক রাউন্ড হোক। ভিকি, তোমাকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছে। ফুর্তির জন্যে কোথাও যেতে চাও? দুটি স্প্যানিশ মেয়ে আছে, আমার পরিচিত। অপূর্ব! এবং বিশেষ পারদর্শী।
ফুর্তির জন্যে আমি কখনো বাইরে যাই না।
ঠিক ঠিক। খুবই ঠিক।
এতরা হাতের ইশারায় ওয়েট্রেসকে ডাকল। সে মনে হল কিঞ্চিৎ নেশাগ্রস্ত।
জামশেদের ঘরে মৃদু নক হল
০৭.
জামশেদের ঘরে মৃদু নক হল। অন্ধকার কাটেনি এখনও। এত ভোরে কে আসবে? জামশেদ ঘড়ি দেখল, ছটা বাজতে এখনও দশ মিনিট বাকি।
কে?
আমি। আমি অ্যানি।
কী ব্যাপার?
আমি তোমাকে শুভ জন্মদিন জানাতে এসেছি।
কিসের শুভ জন্মদিন? জামশেদ বিরক্তমুখে গায়ে রোব জড়াল। দরজা খুলল অপ্রসন্ন মুখে।
অ্যানি হাসিমুখে একটা প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সে ক্ষীণস্বরে বলল, ভেতরে আসব?
না।
অ্যানি ইতস্তত করতে লাগল। জামশেদ ভারীস্বরে বল, আমার জন্মদিন কবে তা আমি কেন আমার বাবা-মাও জানেন না।
কিন্তু আমি যে তোমার কাগজপত্রে দেখলাম ৪ঠা জুলাই তোমার জন্মদিন।
একটা-কিছু লিখতে হয় সেজন্যেই লেখা। বুঝতে পারছ?
পারছি।
হাতে ওটা কী, জন্মদিনের উপহার?
হুঁ
ঠিক আছে, দাও।
অ্যানি মৃদুস্বরে বলল, তোমার জন্মদিন কবে তা কেউ জানে না কেন?
অনেকগুলি ভাইবোন আমরা–কার কবে জন্ম এসব নিয়ে মাথা ঘামার সময় আমার মা’র ছিল না।
কজন ভাইবোন?
জামশেদের ভ্রূ কুঞ্চিত হল। সে একবার ভাবল জবাব দেবে না। কিন্তু জবাব দিল।
ন’জন। দুটি বোন।
তুমি কনম্বন?
চার। আরকিছু জিজ্ঞেস করবে?
অ্যানি হালকা স্বরে বলল, জন্মদিনে এমন রাগি গলায় কথা বলছ কেন?
তোমাকে তো বলেছি আজ আমার জন্মদিন নয়।
তুমি তো জান না কবে সেটা। এমন তো হতে পারে আজই সেই দিন।
তাতে কিছু আসে যায় না।
অ্যানি অস্পষ্টভাবে হাসল।
কী এনেছি তোমার জন্যে খুলে দেখবে না?
জামশেদ পাকেট খুলে ফেলল।
এটা একটা ভিডিও গেম। তুমি তো একা একা থাকতে পছন্দ কর, সেজন্যে কিনেছি। একা একা খেলতে পারবে। কী করে খেলতে হয় আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব।
ঠিক আছে।
তুমি হাতমুখ ধুয়ে আসো, আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। আজকে আমি তোমার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করব।
জামশেদ কিছু বলল না।
অ্যানি হাসিমুখে বলল, আমাদের দুজনের ব্রেকফাস্ট আজ এখানে দিয়ে যাবে। এবং তোমার জন্মদিন উপলক্ষে আজ খুব চমৎকার ব্রেকফাস্ট তৈরি হচ্ছে।
জামশেদ হাতমুখ ধুতে গেল। বাথরুম থেকে বেরুতেই চোখে পড়ল ভিকি লনে একা একা হাঁটছে। এত ভোরে ভিকি কখনো ওঠে না। জামশেদের মনে হল, ভিকি যেন একটু বেশিরকম বিচলিত। জামশেদের সঙ্গে ভিকির একবার চোখাচোখি হল। ভিকি বাঁ হাত উঠিয়ে কী যেন বলল ঠিক বোঝা গেল না।
সাত কোর্সের একটি স্প্যানিশ ব্রেকফাস্ট তার টেবিলে অত্যন্ত চমৎকারভাবে সাজানো। অ্যানি কফিপট থেকে কফি ঢালছে। জামশেদ ছোট একটা নিশ্বাস ফেলল। অ্যানি বলল, তুমি কিন্তু একবার বলনি, থ্যাঙ্ক ইউ।
থ্যাঙ্ক ইউ।
এর মধ্যে একটা জিনিস আমার তৈরি। কোনটি বলতে পারবে?
তুমি রান্না করতে পার?
না। মারিয়া বলে দিয়েছে আমি রান্না করেছি।
জামশেদ কফির পেয়ালায় চুমুক দিল।
অ্যানি আবার বলল, আজ কিন্তু তুমি রাগ করতে পারবে না। আজ আমার সঙ্গে গল্প করতে হবে।
জামশেদ জবাব দিল না।
অ্যানি একটু গম্ভীর হয়ে বলল, আমি জানি তুমি আমাকে একটুও পছন্দ কর না। আমি এলেই বিরক্ত হও। তবু আজ আমি অনেকটা সময় তোমার ঘরে বসে থাকব।
ঠিক আছে।
এবং তোমাকে নিয়ে বিকেলে মলে শপিং করতে যাব। আমি বাবাকে বলে রেখেছি।
অ্যানির কথা শেষ হবার আগেই দরজায় ছায়া পড়ল। ভিকি এসে দাঁড়িয়েছে। মিঃ জামশেদ, শুভ জন্মদিন।
জামশেদ শুকনো স্বরে বলল, ধন্যবাদ।
অ্যানি তোমার জন্মদিন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই হৈচৈ করছিল।
জামশেদ ঠাণ্ডাস্বরে বলল, তুমি কি ভেতরে এসে আমাদের সঙ্গে এক কাপ কফি খাবে?
না ধন্যবাদ। আমি তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।
নিশ্চয়ই।
জামশেদ ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ভিকি বারান্দার এক প্রান্তে সরে গেল। সিগারেট ধরাল একটি