অ্যানি চাপাস্বরে বলল, ওরা এসে পৌঁছায় সবার শেষে।
আপাতদৃষ্টিতে এরকম মনে হয়। সত্যিকার অর্থে ওরাই কিন্তু জয়ী।
অ্যানি জবাব দিল না।
জামশেদ বলল, সমুদ্রের দিকে যেতে চাও, অ্যানি? ওখানে বালির উপর বসে আইসক্রিম খাওয়া যেতে পারে। কী, চাও যেতে?
চাই।
এসো, আজকের দিনটি আমরা খুব ফুর্তি করে কাটাই। মিউজিয়ামে গেলে কেমন হয়?
মিউজিয়াম আমার ভালো লাগে না।
তা হলে চলো চিড়িয়াখানায় যাওয়া যাক। চিড়িয়াখানা ভালো লাগে?
লাগে।
যাবে?
অ্যানি তাকিয়ে দেখল, বুড়ো ভালুকের পাথরের মতো চোখ দুটি কোন এক আশ্চর্য উপায়ে তরল হয়ে যেতে শুরু করেছে।
.
ভিকি পরপর দুরাত ঘুমাতে পারেনি। এক সপ্তাহের মধ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হবে। সিল্কের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তু। তিন-পুরুষের একটা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেয়া যায় না। এর জন্যে অনিদ্রায় কাতর হতে হয়।
রুন দেখল, ভিকি রাত নটার দিকে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করে আনতে বলছে।
কোথায় যাচ্ছ?
একটা কাজে যাচ্ছি।
টাকার জোগাড় করতে?
না। ওটা আর জোগাড় হবে না।
আশা ছেড়ে দিয়েছ মনে হচ্ছে?
ভিকি জবাব দিল না। রুন বলল, একটা কাজ করলে কেমন হয়? আমাকে ভালো একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাও-না!
ভিকি নিঃশব্দে টাইয়ের নট বাঁধতে লাগল।
কী, কথায় জবাব দিচ্ছ না যে? চলো-না সমুদ্রের ধারে যে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে গিয়ে লবস্টার খেয়ে আসি।
ভিকি ক্লান্ত স্বরে বলল, রুন, তুমি বুঝতে পারছ না আমি একটা দারুণ সমস্যার মধ্যে আছি। এমন হতে পারে যে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে লবস্টার আর কোনোদিনই আমরা খেতে পাব না।
রুন হাসিমুখে বলল, কিন্তু এমন তো হতে পারে যে হঠাৎ করে তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
আমার বেলা হঠাৎ করে কিছু হয় না।
একেবারে আশা ছেড়ে দেয়া ঠিক না।
চলো যাই। রুন ভিকির হাত ধরল।
প্লিজ, রুন! আমাকে বিরক্ত কোরো না। খুব খারাপ সময় যাচ্ছে।
সময় ভালোও তো হয়ে যেতে পারে। কথা শোনো আমার।
ভিকি কোনো কথা শুনল না। বিরক্তমুখে নিচে নেমে গেল। তার বেশ মাথা ধরেছে। রুনের ন্যাকামি শুনতে এতটুকুও ভালো লাগছে না।
.
এতরা চোখ কপালে তুলে বলল, এ কী চেহারা হয়েছে তোমার?
ভিকির চেহারা সত্যি সত্যি খারাপ হয়েছে। বুড়োটে দেখাচ্ছে। চোয়াল ঝুলে পড়েছে। চোখের দৃষ্টিও নিষ্প্রভ। এতরা সরু গলায় বলল, একেবারে ভেঙে পড়েছ মনে হচ্ছে?
তা ভেঙেছি। সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?
না। তোমার যা ইচ্ছে তা খুব অস্বাভাবিক। তুমি কোনো সমাধানের দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকাচ্ছ।
সমাধান কিছু নেই।
এতরা মিটিমিটি হাসল। হাসিমুখেই বলল, চমৎকার একটা ডিনারের অর্ডার দাও। সেইসঙ্গে জার্মান কিছু হোয়াইট ওয়াইন আনতে বলো। তোমাকে সমাধান দিচ্ছি।
ভিকির কোনো ভাবান্তর হল না। সে সিগারেট ধরিয়ে ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে রইল। এতরা খানিকটা ঝুঁকে এসে বলল, প্রথম শ্রেণীর সমাধান আছে আমার কাছে, ঠাণ্ডা মাথায় শুনতে হবে।
বলো, শুনি।
বলছি। তার আগে নার্ভগুলি ঠাণ্ডা করাবার জন্যে এক পশলা মার্টিনি হোক। মার্টিনি উইথ অলিভ।
এতরা হাতের ইশারায় ওয়েট্রেসকে ডাকল।
কী তোমার সমাধান?
বলছি। শর্ত হচ্ছে সবটা বলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। প্রথমে কোনো সাড়াশব্দ না করে শুনবে ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
তা হলে শুরু করছি।
এতরা লম্বা একটা চুমুক দিল মার্টিনিতে। নিচুস্বরে বলতে শুরু করল, তুমি নিশ্চয়ই জান, ইংল্যান্ডের একটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি অদ্ভুত অদ্ভুত সব ইনস্যুরেন্স পলিসি বিক্রি করে। জান তো?
জানি।
ওরা ইদানীং একটা নতুন ইনস্যুরেন্স পলিসি বিক্রি করতে শুরু করেছে। ধনী বাবা-মারা তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ইনস্যুরেন্স করছেন।
তা-ই নাকি? জানতাম না তো!
ইনস্যুরেন্স করার পর যদি ইনস্যুর-করা ছেলেমেয়েরা কিডন্যাপ হয় তা হলে কিডন্যাপারদের দাবি অনুযায়ী সব টাকা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দিয়ে দেয়। বুঝতে পারছ?
পারছি।
এতরা আরেকটি ভবল মার্টিনির অর্ডার দিয়ে বলল, এতক্ষণ যা বললাম তা হচ্ছে তোমার সমস্যার সমাধান।
তার মানে?
ব্যস্ত হয়ো না। বুঝিয়ে দিচ্ছি।
ভিকি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এতরা সহজ ভঙ্গিতে বলতে লাগল, তুমি অ্যানির জন্যে ঐ একটি পলিসি কিনবে। এক মিলিয়ন ডলারের একটি পলিসি। তারপর কিছু দুষ্টলোক অ্যানিকে চুরি করে এক মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করবে। ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এক মিলিয়ন ডলার দেবে তা তো বুঝতেই পারছ। সেখান থেকে পাঁচ লাখ ডলার পাবে তুমি, আর বাকিটা যাবে কিডন্যাপের ব্যবস্থা যারা করবে তাদের হাতে।
ভিকি নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল।
এতরা হাসিমুখে বলল, পরিকল্পনা দায়িত্বে যারা থাকবে তারা সবাই খুব বিশ্বাসী। আমার নিজের লোক বলতে পার।
ভিকি কোনো জবাব দিল না।
অবিশ্যি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কিছু বিধিনিষেধ আছে। যেমন পলিসি বিক্রি করবার আগে ওদের দেখাতে হবে যে তুমি তোমার মেয়ের নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা করেছ। যেমন, ওর জন্যে চব্বিশ ঘণ্টার বডিগার্ড আছে। বাড়িতে পাহারাদার কুকুর আছে। বুঝতে পারছ?
ভিকি কিছু বলল না, চুপচাপ বসে রইল।
এতরা বলল, ডিনারের অর্ডার দেয়া যাক, কী বল? এমন মনমরা হয়ে গেলে কেন?