ভয়ের কিছু নেই। স্বপ্ন স্বপ্নই।
হোক স্বপ্ন। তুমি আজকেই চলে আসবে।
আমি আসতে পারছি না। টাকার কোনো ব্যবস্থা করতে পরিনি।
কবে আসবে?
দেখি।
টেলিফোন রেখে দেয়ার আগে ভিকি বলল, বড় ঝামেলায় পড়ে গেছি। তুমি কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে পার নাকি, রুন?
আমি, আমি কোত্থেকে করব?
তোমার তো অনেক গয়নাটয়না আছে।
রুন জবাব না দিয়ে টেলিফোন রেখে দিল।
ভিকি ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেলল।
রুন আজ কিছু কেনাকাটা করবে বলে ভেবে রেখেছিল। কিন্তু মত বদলালো। দুঃস্বপ্ন দেখার পর তার আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছিল না। সে ঠিক করল আজ সারাদিন সে ঘরেই থাকবে। আজ রান্না করলে কেমন হয়? অনেক দিন কোনো রান্নাবান্না করা হয়নি। কিন্তু রান্না করার ইচ্ছাটা স্থায়ী হল না। রুন টিভি খুলে টিভির সামনে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর টিভি দেখতেও ভালো লাগল না। সমস্ত দিন ঘরে বসে থাকাটা এমন ক্লান্তির ব্যাপার তা তার জানা ছিল না। দুপুরের দিকে অতিষ্ঠ হয়ে সে এতরাকে টেলিফোন করল, এতরী, তুমি কি সন্ধ্যার পর আসতে পার?
নিশ্চয়ই পারি। কী ব্যাপার?
ব্যাপার কিছু নয়, গল্পগুজব করা যাবে।
বাইরে কোথাও খেতে চাও? বনভিলে চমৎকার একটা রেস্টুরেন্ট আছে।
না, আজ আমি কোথাও বেরুব না ঠিক করেছি।
এতরা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ভিকি ফেরেনি?
নাহ।
কবে ফিরবে জান?
আমি ঠিক জানি না। কাল ফিরতে পারে।
ভিকি তো শুনলাম দারুণ ঝামেলায় পড়েছে।
কী ঝামেলা?
ওর একটা সিল্ক কারখানা শুনলাম বন্ধ হয়ে গেছে।
রুন অবাক হয়ে বলল, কই, আমি তো কিছু জানি না!
তোমাকে কিছু বলেনি?
না। আচ্ছা আমি এসে বলব।
রুনের একটু মন-খারাপ হল। ভিকি তা হলে সত্যি সত্যি বড়রকমের ঝামেলায় পড়েছে। তাকে সাহায্য করা উচিত। রুন ইচ্ছা করলেই তা পারে। মোটা অঙ্কের টাকা রুনের আছে। তার নিজস্ব টাকা। এবং টাকা যে আছে তা ভিকি নিজেও জানে না। রুনের বাবা বলে দিয়েছিল, কিছু-কিছু জিনিস স্বামীদের জানাতে নেই। একটি হচ্ছে স্ত্রীদের ব্যাংক-ব্যালেন্স! তোমার টাকাটা হচ্ছে তোমার দুঃসময়ের জনো, ভিকির দুঃসময়ের জন্য নয়।
রুন বলেছিল, কিন্তু বাবা, ধরো, ভিকি একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ল, তখন?
তখন তুমি ওকে ছেড়ে চলে আসবে।
বাবার কথা এখন মনে না রাখলেও চলবে। বাবা মারা গেছে, কাজেই খবরদারি করবার জন্যে ছুটে আসবে না। রুন তার ব্যাংকে টেলিফোন করল, আমি মোটা অঙ্কের কিছু টাকা তুলতে চাই।
কতদিনের মধ্যে
এক সপ্তাহ।
ক্যাশ হলে পারা যাবে না।
ক্যাশ নয়, ক্রসড চেক করে দিলে হবে। পারা যাবে?
কোন কারেন্সি?
ইতালিয়ান হলেই হবে। পারা যাবে?
যাবে। তবে আপনার একটা চিঠি লাগবে।
বেশ। চেক রেডি করে রাখুন।
আপনার ঠিকানায় পাঠাব?
না, শুধু রেডি করে রাখুন।
রুন টাকার পরিমাণ এবং ক্রসড চেকের নাম বলল। ব্যাপারটা যে এত সহজে হবে তা তার ধারণা ছিল না। সুইস ব্যাংকগুলি খুব এফিসিয়েন্ট।
এতরা এল রাত নটার দিকে। রুন হালকা গোলাপি একটা স্কার্ট পরে বসে ছিল লবিতে। এতরা হাসিমুখে বলল, আমরা যত বুড়ো হচ্ছি তুমি ততই রূপসী হচ্ছ।
রুন তরল গলায় হাসল। এতরা রুনের কাঁধে হাত রাখল। কাঁধে সে হাত স্থায়ী হল না, নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। রুম কিছু বলল না। লবি অন্ধকার, কেউ কিছু দেখছে না। এতরা হালকা গলায় বলল, ভিকি বেচারা মহাবিপদে পড়েছে।
রুন বলল, ঠিক কত টাকা হলে সে বিপদ থেকে মুক্তি পায়?
কেন জিজ্ঞেস করছ?
জানবার জন্যে। সাময়িক মুক্তি না চিরকালের জন্যে মুক্তি?
চিরকালের জন্যে মুক্তি।
অনেক টাকার ব্যাপার। ওয়ান মিলিয়ন ইউ এস ডলার।
এত টাকা?
হ্যাঁ। সে ঝামেলাটা পাকিয়েছে বড় করেই।
এতরা রুনের জামার হুক খুলতে চেষ্টা করল। রুন তেমন বাধা দিল না। একবার শুধু অস্পষ্ট স্বরে বলল, আহ্ কী করছ?
কিছুই করছি না, রুন। এতরা আরো এগিয়ে এল।
রুন বলল, ভিকি একটা অপদার্থ, তবু মনে হয় আমি ওকে পছন্দ করি।
তা হয়তো করো।
ইদানীং বেচারা ঘুমাতে পারছে না। আমি ওকে সাহায্য করতে চাই।
এতরা রুনের কথা ঠিক শুনতে পায়নি। সে জামার হুকটি খুলে ফেলেছে। জলপরীর মতো একটা অর্ধনগ্ন নারী পাশে থাকলে কথাবার্তায় মন দেয়া যায় না। এতরা সে-রাতটা এখানেই কাটাল।
০৬.
অ্যানিদের স্কুলে আজ বার্ষিক স্পোর্টস। অ্যানি তার বাবা এবং মা দুজনের জন্যে দুটি টিকিট এনেছে। ভিকি বলেছে সে যেতে পারবে না, তার প্রচুর ঝামেলা। রুন হ্যাঁ না কিছুই বলেনি। খুব সম্ভব সেও যাবে না। রোদে বসে থাকলে রুনের মাথা ধরে। তা ছাড়া যেদিন স্পোর্টস ঠিক সেদিনই হোটেল শেরাটনে গোলাপ ফুলের প্রদর্শনী হচ্ছে। এই প্রদর্শনীটি অন্য প্রদর্শনীগুলোর চেয়ে আলাদা। চিত্রতারকাদের বাড়ির গোলাপ প্রদর্শনী। এতরা দুটি টিকিট জোগাড় করেছে। বাচ্চাকাচ্চাদের দৌড়-ঝাঁপ দেখার চেয়ে হোটেল শেরাটনে যাওয়া বহুগুণে শ্রেয়। কিন্তু সেন্টিমেন্টের ব্যাপার আছে। অ্যানির এই স্পোর্টস নিয়ে খুব আগ্রহ। দু-তিন মাস আগে থেকেই বলে রেখেছে, যেতেই হবে। এখন তাকে না বলাটাই এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু রুন ঠিক করে ফেলল ব্যাপারটা ঝুলিয়ে না রেখে মিটিয়ে ফেলাই ভালো। রাতের খাবার টেবিলে রুন প্রসঙ্গটা তুলল, অ্যানি, তোমার স্পোর্টস কবে?