জানি।
যাও মা, ঘুরে আসো। বেশ লাগবে তোমার। মনে হবে কেন যে আগে আসতে চাইনি!
.
রাত দশটার পর জামশেদ দরজা বন্ধ করে দেয়। আজকেও করে দিয়েছে। সুটকেস খোলা হয়েছে। হুইসকির পেটমোটা বোতল বের হয়েছে। বোতলের মুখ খোলবার আগেই দরজায় আলতো করে টোকা পড়ল।
কে?
কোনো উত্তর নেই। জামশেদ বোতলটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলল।
কে?
কোনো উত্তর নেই। জামশেদ দরজা খুলে দেখে ঘাসের স্লিপার পায়ে দিয়ে অ্যানি দাঁড়িয়ে আছে শুকনোমুখে।
কী ব্যাপার?
আমি তোমার সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই।
না।
কথাটা সকালে বললে হয় না?
এসো, ভেতরে এসে বলো।
অ্যানি নিঃশব্দে ভেতরে এল। জামশেদ দেখল মেয়েটির চোখ ফোলা। নিশ্চয়ই দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদছে।
কী বলবে বলো।
কাল সন্ধ্যায় এতরা চাচা আমাকে একটা জাহাজে নিয়ে যাবে। সেখানে সারারাত ধরে সার্কাস-টার্কাস হবে।
অ্যানি দম নেয়ার জন্যে থামল। জামশেদ কিছুই বলল না।
আমি সেখানে যেতে চাই না।
ও।
ঐ লোকটা ভালো না। আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি। আমি আগের মতো ছোট না।
তুমি তোমার বাবা-মাকে বলেছ?
বলেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি?
তুমি কি বলেছ এতরা চাচা লোকটি খারাপ?
না।
অ্যানি ফুঁপিয়ে উঠল। জামশেদ ভারী গলায় বলল, যাও, ঘুমুতে যাও। অনেক রাত হয়েছে। নাও, এই তোয়ালেটা দিয়ে চোখ মোছো।
অ্যানি চোখ মুছে শান্তস্বরে বলল, শুভ রাত্রি, মিঃ জামশেদ।
শুভ রাত্রি।
.
এতরা এসে পড়ল পাঁচটার মধ্যেই। তার গায়ে চমৎকার একটা সার্জের কোট। পিঠে বাটিকের কাজ-করা চামড়ার একটা ব্যাগ।
অ্যানি, তৈরি তো?
রুন বলল, হ্যাঁ, তৈরি হচ্ছে। আর ঝামেলার কথা বল কেন, হঠাৎ করে বলছিল সে যাবে না। তার নাকি ভালো লাগছে না।
কী আশ্চর্য, ভালো লাগছে না কেন? কোথায়, অ্যানি কোথায়?
সাজগোজ করছে।
যাচ্ছে তো এখন?
হ্যাঁ, যাচ্ছে।
যাক, তাও ভালো।
অ্যানি লাল রঙের একটি ম্যাক্সিজাতীয় ড্রেস পরেছে। ড্রেসটির জন্যেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক অ্যানিকে বেশ বড় বড় লাগছে। পনেরো-ষোলো বছরের তরুণীর মতো। রুন অবাক হয়ে বলল, বাহ, চমৎকার লাগছে তো? গালে কি তুমি রুজ দিয়েছ, অ্যানি?
নাহ।
রুজ ছাড়াই গাল এমন লাল দেখাচ্ছে? আশ্চর্য তো! এতরা, দ্যাখো, আমার মেয়েকে দ্যাখো। পরীর মতো লাগছে না?
হ্যাঁ, তা লাগছে। মেয়ে মায়ের মতোই হয়েছে।
গেটের পাশে জামশেদ দাঁড়িয়ে ছিল। এতরা অ্যানিকে নিয়ে গেটের কাছে আসতেই সে বলল, মিঃ এতরা, অ্যানিকে যে তুমি জাহাজে নিচ্ছ, সেখানকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা সম্পর্কে আমি তো কিছু জানি না।
তোমার জানার কোনো দরকার আছে কি?
আছে। আমাকে বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে অ্যানির নিরাপত্তার জন্যে। কাজেই অ্যানি যেখানে যাবে আমিও সেখানে যাব।
এতরা স্তম্ভিত হয়ে গেল। বলে কী এই উজবুক। আমি একে নিয়ে যাচ্ছি এটা কি যথেষ্ট নয়?
না মিঃ এতরা, মোটেই যথেষ্ট নয়। আমি সঙ্গে যাচ্ছি।
এতরা দেখল, লোকটির কালো চোখ পাথরের মতো কঠিন। এ যাবেই সঙ্গে, এতে ভুল নেই।
অ্যানির ফ্যাকাশে ঠোঁটে যেন রক্ত ফিরে এসেছে। সে মনে হচ্ছে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসি গোপন করতে চেষ্টা করছে।
তোমাকে সঙ্গে নেয়ার জন্য কোনো বাড়তি টিকিট নেই।
তা হলে আজ যাওয়াটা বাতিল করতে হবে।
আমার মনে হয় একটা ছোট ব্যাপারকে এখানে অনেক বড় করে দেখা হচ্ছে।
আমার তা মনে হয় না মিঃ এতরা।
এতরা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকাল।
জামশেদ শান্তস্বরে বলল, চেষ্টা করলে এখনও হয়তো আরো একটি টিকিট জোগাড় করা যেতে পারে।
এত সময় আমার নেই। আমি একজন ব্যস্ত মানুষ।
তা হলে বরং অন্য কোনোদিন হবে।
এতরা জবাব দিল না।
.
ভিকি অনেক রাতে ঘুমুতে এসে দেখে রুল জেগে আছে। ব্যাপারটি অস্বাভাবিক। রুন এত রাত পর্যন্ত জাগে না। রাত জাগলে তার চোখের নিচে কালি পড়ে। এটি সে হতে দেয় না। শরীর ঠিক রাখার জন্যে অনেক কঠিন নিয়ম মেনে চলে সে।
ভিকি বলল, কী ব্যাপার, এখনও জেগে আছ যে? দেড়টা বাজে।
তোমার জন্যে জেগে আছি।
কিছু হয়েছে নাকি?
ঐ লোকটার চাকরি নট করে দাও।
কার চাকরি নট করব?
জামশেদ না কী যেন নাম-অ্যানির বডিগার্ড।
ব্যাপারটা কী?
অত্যন্ত অভদ্র ব্যবহার করেছে সে।
কার সঙ্গে? তোমার সঙ্গে?
না, এতরার সঙ্গে। এতরা ভীষণ রেগে গেছে।
ঘটনাটা খুলে বলল রুন। ভিকি গম্ভীর হয়ে বলল, এটা বলার জন্যেই তুমি এত রাত পর্যন্ত জেগে বসে আছে?
ঘটনাটা তোমার কাছে খুব সাধারণ মনে হচ্ছে? এতবড় অপমান করল সে এতরাকে। শেষ পর্যন্ত এতরা অ্যানিকে রেখে গেল।
এতরার অপমানিত বোধ করার তো কোনো কারণ নেই। লোকটি তার ডিউটি করেছে।
ডিউটি? কিসের ডিউটি?
অ্যানির নিরাপত্তার দিকে লক্ষ রাখার ডিউটি। লক্ষ রাখা—যাতে কেউ অ্যানিকে কিডন্যাপ না করে।
রুন রেগে গিয়ে বলল, কে কিডন্যাপ করবে অ্যানিকে?
আমারও তো সেই প্রশ্নই ছিল। কিন্তু তখন তুমিই আমাকে অন্যরকম বুঝিয়েছ।
বেশ, আমি ভুল করেছি।
বডিগার্ডের ভূত তোমার ঘাড় থেকে নেমেছে?
রুন জবাব দিল না।
বডিগার্ডের আর তা হলে প্রয়োজন নেই?
না।
খুব ভালো।
এখন বলো কবে তাড়াচ্ছ লোকটাকে?
বললেই তো আর হুট করে তাড়ানো যায় না। চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হলে খুব ভালো কারণ থাকতে হবে। নয়তো ইউনিয়নের ঝামেলায় পড়ব।
কিন্তু চাকরি দেবার সময় তো তুমি বলেছিলে টেম্পোরারি অ্যাপয়েন্টমেন্ট, বলনি?