দরজা খুলেছে। ইমন দেখল। দরজার পাশে মা, মায়ের পাশে মিতু। মিতু এখানে কোথেকে এল। এত রাতে মিতুরতো এ বাড়িতে থাকার কথা না। মিতু লোকটার সঙ্গে কথা বলছে। মিতু এগিয়ে আসছে। না মিতু না, পাশের বাড়ির মেয়েটা। মেয়েটার নাম মনে পড়ছে না, তবে ম দিয়ে শুরু—ময়না, মায়া, মেরী, ও হ্যাঁ মুন্নী, মেয়েটার নাম মুন্নী।
মুন্নী এসে ইমনের হাত ধরল। ইমন বলল, মুন্নী কেমন আছ?
মুন্নী বলল, জ্বি আমি ভাল আছি। আসুন আপনি ঘরে আসুন।
দূর থেকে দেখে আমি ভাবলাম তুমি মিতু। মিতু হচ্ছে আমার মামাতো বোন।
জ্বি আমি জানি। আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন না—আসুন।
বেবীটেক্সীর ভাড়া দিতে হবে। মুন্নী তোমার কাছে টাকা আছে? লোকটা বলল, বেবীটেক্সীর ভাড়া আপনাকে দিতে হবে না। আপনি ঘরে যান।
সুরাইয়া হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি কোন কথা বলতে পারছেন না। ইমন মাকে দেখে সহজ গলায় বলল, তুমি এখনো জেগে আছ কেন মা? মুন্নী আছে-ও যা করার করবে। তুমি শুয়ে পড়।
সুরাইয়া বললেন, তুই কি খেয়ে এসেছিস?
ইমন হাসি হাসি মুখে বলল, তুমি যা সন্দেহ করছ, তাই খেয়েছি। এখন তুমি নিশ্চয়ই বিরাট বক্তৃতা শুরু করবে—তোর বাবা এই জিনিস কোনদিন ছয়ে দেখেনি। মা শোন, বাবা এই জিনিস ছুঁয়ে দেখেনি বলে যে আমিও ছুঁয়ে দেখব না। তাতো না। একেক মানুষ একেক রকম। এই মেয়েটা দেখতে মিতুর মত হলেও এ মিতু না। এর নাম মুন্নী।
মুন্নী বলল, খালা আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি দেখছি।
সুরাইয়া চলে যাচ্ছেন। তিনি নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। মুন্নী ইমনকে বাথরুমে নিয়ে গেল। কঠিন গলায় বলল, আপনি ট্যাপের নিচে বসুন। আমি ট্যাপ ছেড়ে দিচ্ছি। খুব ভাল করে সাবান মেখে গোসল করুন। আপনার সারা গায়ে বমি।
ঠান্ডা লাগছেতো।
ঠাণ্ডা লাগলেও কিছু করার নেই। আমি বাথরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি গায়ের সব কাপড় খুলে গোসল করুন। আমি লুঙ্গি দিয়ে যাচ্ছি। গোসল শেষ হলে লুঙ্গি পরে আমাকে ডাকবেন। আমি আপনাকে বিছানায় শুইয়ে দেব।
তুমি এই ব্যাপারটা মিতুকে বলবে না। মিতু শুনলে খুব রাগ করবে। ও ভয়ংকর রাগী।
আমি মিতুকে কিছুই বলব না।
মুন্নী তুমি কি গান জান?
না।
শোভন ভাইয়া খুব ভাল গান জানে। পুরো গান অবশ্যি কোনটাই জানে না। দুই লাইন, চার লাইন।
আপনি খুব ভাল মত সাবান ডলে গোসল করুন।
লাইফবয়ের এডের মত করে?
হ্যাঁ।
মুন্নী!
জ্বি।
মিতু গত চার মাস ধরে আমার সঙ্গে কথা বলে না।
হয়ত কোন কারণে রাগ করেছেন। রাগ কমে গেলে কথা বলবেন।
ও কারো উপর রাগ করে না।
তাহলে হয়ত কোন কারণে উনার অভিমান হয়েছে।
মিতু খুবই ভাল মেয়ে। তোমার চেয়েও ভাল।
আমিতো বলিনি। আমি ভাল মেয়ে।
তুমি না বললেও মা বলেন। মার খুব ইচ্ছা তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে দেন।
আপনি রাজি হচ্ছেন না?
আমি কখনো বিয়ে করব না। মিতুকেও এটা বলেছি। সে বিশ্বাস করে নি। তার ধারণা আমার সঙ্গেই তার বিয়ে হবে।
আমারো তাই ধারণা।
তোমার ধারণা ভুল। মিতুর বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে গেছে। একটু ঝামেলা হয়েছিল, এক শুক্রবারে পান চিনির কথা হয়েছিল। বর পক্ষের কেউ আসে নি। পরের সপ্তাহে এসেছে। মিতুকে আঙটি পরিয়ে দিয়ে গেছে।
উনি আপত্তি করেন নি?
না, মিতু খুব অন্য ধরণের মেয়ে।
বুঝতে পারছি। আপনি এখন পানি ঢালা বন্ধ করে তোয়ালে দিয়ে গা মুছুন।
আচ্ছা।
আপনি কি বাথরুম থেকে নিজে নিজে বের হতে পারবেন?
অবশ্যই পারব।
তাহলে আপনি শোবার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
নোংরা কাপড়গুলো ধুয়ে তারপর যাই।
আপনাকে কাপড় ধুতে হবে না। আপনি গা মুছে বের হয়ে আসুন।
তুমি কি খুব কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে পারবে? দুধ চিনি ছাড়া।
পারব।
তুমিতো আসলেই খুব ভাল মেয়ে। তোমার প্রসঙ্গে খুব খারাপ কথা মাকে বলেছি। এখন তার জন্যে খারাপ লাগছে। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমার সম্পর্কে কি খারাপ কথা বলেছেন।
তোমাকে কাছুয়া বলেছি।
কাছুয়াটা কি?
কাছুয়া হচ্ছে রক্ষিতা। রক্ষিতার ইংরেজি হল Kept. আমার ধারণা. আচ্ছা থাক তুমি রাগ করবে।
আপনি শোবার ঘরে যান। আমি চা নিয়ে আসছি।
মুন্নী চা বানাতে বানাতে খুব কাঁদল। চা বানানো শেষ করে চোখ মুছে কাপ নিয়ে ইমনের শোবার ঘরে ঢুকে দেখে ইমন মরার মত ঘুমুচ্ছে।
জামিলুর রহমান সাহেব আলাদা শোবার ব্যবস্থা করছেন। দোতলার একটা ঘর তাঁর জন্যে ঠিক করা হচ্ছে। ঘরে কিছু থাকবে না, শুধু একটা খাট। খাটের পাশে সাইড টেবিল। সাইড টেবিলে থাকবে পানির বোতল। তাঁর অষুধ পত্র। কাপড় চোপড় রাখার জন্যে একটা আলনা। খাটে তোষকের উপর চাদর থাকবে না। শীতল পাটি থাকবে। শীতল পাটিতে অনেক দিন ঘুমানো হয় না।
লোক লাগানো হয়েছে। তারা ঘর ধোয়া মুছা করছে। জামিলুর রহমান আজ অফিসে যান নি। বারান্দার চেয়ারে চুপচাপ বসে আছেন। ছাদে উঠে গাছে পানি দেয়া দরকার। ছাদে উঠার শক্তি সঞ্চয় করে উঠতে পারছেন না। মাথা সামান্য ঘুরছে। শীতল পাটিটা দোকানে গিয়ে নিজে পছন্দ করবেন বলে ভেবেছিলেন, এখন মনে হচ্ছে তাও পারবেন না।
ফাতেমা গ্লাসে করে ডাবের পানি নিয়ে বারান্দায় এলেন। বাড়ির পেছনে তিনটা নারকেল গাছে প্রচুর ডাব। তিনি লোক দিয়ে গত সপ্তাহে ডাব পাড়িয়েছেন। বাসায় কেউ ডাব খেতে চাচ্ছে না।
জামিলুর রহমান স্ত্রীর দিকে তাকালেন, কোন কথা না বলে গ্লাস হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে গ্লাস নামিয়ে রাখলেন। ফাতেমা বললেন, তোমার সঙ্গে আমার কিছু জরুরী কথা আছে।