দেখি হাত কাছে আন। সাবানের গন্ধ আছে কি-না দেখি।
ইমন হাত এগিয়ে দিল। মা গন্ধ শুকলেন। মনে হল তিনি সাবানের গন্ধ পেয়েছেন। কারণ কিছু বললেন না। সাবানের গন্ধ পাওয়ার কথা না। সে হাতে সাবান মাখে নি। কচ্ছপ ঘাটা ঘাটি করেছে। মনে হয় কচ্ছপের গায়ে সাবানের গন্ধ আছে। কচ্ছপ শুকে দেখতে হবে।
সুরাইয়া বলল, তোমার বোনটা দেখতে কি রকম হয়েছে? কার মত হয়েছে?
ইমন ভয়ে ভয়ে বলল, ছোট বাচ্চাদের মত হয়েছে।
বোকার মত কথা বলছ কেন? ছোট বাচ্চাতো ছোট বাচ্চার মতই হবে। বুড়োদের মত হবে নাকি? দেখতে কার মত হয়েছে? তোমার মত, না আমার মত, নাকি তোমার বাবার মত?
জানি না মা।
জানবে না কেন? দেখতে হয়েছে অবিকল তোমার বাবার মত। তোমার বাবার নাক অনেকটা চাপা। এই দেখ এর নাকিও চাপা! চাপা না?
ইমন বুঝতে পারছে না, নাক চাপা কি চাপা না। তার কাছেতো নাকটা সুন্দরই লাগছে। তারপরেও বলল, হুঁ।
সুরাইয়া ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এখন তোমাকে আমি কি বলব। মন দিয়ে শুনবে। আমরা এই বাড়িতে থাকব না।
ইমন ভয়ে ভয়ে বলল, কোথায় যাব?
তোমার বড় মামার বাড়িতে গিয়ে থাকব। তোমার বড় মামা তার বাড়ির একটা ঘর আমাকে দিয়েছেন। একটা ঘরইতো আমাদের জন্যে যথেষ্ট। কি, যথেষ্ট না?
হুঁ।
এ রকম মুখ শুকনা করে ই বলছি কেন? বড় মামার বাড়িতে থাকতে তোমার অসুবিধাটা কি? আর যদি অসুবিধা থাকেও কিছু করার নেই। তোমার বাবার কোন খোঁজ নেই–কাজেই তোমাদের কপাল ভেঙ্গেছে। আমাদের জীবন কি ভাবে কাটবে জান? আজ এই বাড়ি, কাল ঐ বাড়ি।
ইমন ভয়ে ভয়ে বলল, এই বাড়িতে কেন থাকবনা মা?
এই বাড়িতে থাকব না, কারণ তোমার ছোট চাচার কোন চাকরি বাকরি নেই। এতদিন সংসার চলেছে গ্রামের বাড়ির ধানী জমি বিক্রি করে। এই ভাবে আর কতদিন চলবে? তাছাড়া তোমার ছোট চাচা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। চোখ লাল করে আমার দিকে তাকায়। তার এত সাহস কেন হবে? যেখানে তোমার বাবা কোনদিন আমার দিকে চোখ লাল করে তাকায় নি–সেখানে সে তাকাবে কেন?
বড় মামার বাসায় কবে যাব মা?
এক সপ্তাহের মধ্যেই যাব। তোমার বই খাতা তুমি নিজে সব গুছিয়ে নেবে। ঐখানে গেলে তোমার ভালই লাগবে। খেলার সঙ্গি-সাথী পাবে। তোমার বড় মামার দুই ছেলে আছে। টোকন আর শোভন। ওদের সঙ্গে খেলবে। এখানে একা একা থাক, তোমার বড় মামা তোমাকে পছন্দও করেন। করেন না?
ইমন বুঝতে পারছে না তার বড় মামা তাকে পছন্দ করেন কি-না। তার বড় মামার চেহারাটা রাগি রাগি। চশমা পরেন। চশমার ফাঁক দিয়ে তাকান। কেমন করে জানি তাকান। তিনি বাসায় এলেই ফুলের গন্ধ পাওয়া যায়। সেই গন্ধে গা কেমন জানি ঝিম ঝিম করে। পরে সে জেনেছে এটা ফুলের গন্ধ না। জর্দার গন্ধ। বড় মামা পান খান না-শুধু শুধু জর্দা খান। তিনি যখনই এ বাসায় আসেন এক প্যাকেট বিসকিট নিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলেন-ইমন নিয়ে যা। ইমন বিসকিট নিয়ে যায়, কিন্তু তার কোন আনন্দ হয় না, কারণ বিসকিট তার পছন্দ না। শুধু চায়ে ড়ুবিয়ে বিসকিট খেতেই তার ভাল লাগে। অন্য সময় ভাল লাগে না। বিসকিট খাবার জন্যে কেউতো আর তাকে চা বানিয়ে দেবে না। সে ছোট মানুষ। কলেজে যখন পড়বে তখনই সে শুধু চা খেতে পারবে।
সুরাইয়া বললেন, কথার জবাব দিচ্ছিস না কেন? তোর বড় মামা তোকে পছন্দ করে না?
হুঁ।
মুখ এমন শুকনা করে ইহঁ বলছি কেন? মনে হচ্ছে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। যাও, এখন সামনে থেকে যাও। সারাক্ষণ ভোতা মুখ দেখতে ভাল লাগে না।
ইমন মার ঘর থেকে বের হল। বড় মামার বাড়িতে কি কচ্ছপ দুটা নিতে দেবে? মনে হয় দেবে না। কচ্ছপ দুটা এ বাড়িতেই রেখে যেতে হবে। মাকে একবার বলে দেখলে হয়। অবশ্যি বললেও লাভ হবে না। বড় মামার ছেলে টোকন আর শোভন হয়ত তার কাছ থেকে কেড়ে কচ্ছপ দুটা নিয়ে নেবে। একটা লাভ হয়তো হবে রাতে মার সঙ্গে ঘুমুতে পারবে। তাদের একটা ঘর দেয়া হবে। তারা সবাই সেই ঘরেই থাকবে। এখানে বেশীর ভাগ সময় তাকে ছোট চাচার সঙ্গে ঘুমুতে হয়। সে যখন ঘুমুতে যায়। তখনো ছোট চাচা বাইরে। একা একা ঘুমুতে তার খুবই ভয় লাগে। তবে অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে যখন সে দেখে ছোট চাচা ঘুমুচ্ছেন তখন তার খুবই ভাল লাগে। সে যদি খুব নরম গলাতেও ডাকে-ছোট চাচা! তাহলেও ছোট চাচা উঠে বসেন, গম্ভীর গলায় বলেন, কি হয়েছেরে হার্ড নাট। বাথরুমে যাবি?
হুঁ।
আয় যাই। ঠিক সময় ডাক দিয়েছিস আমারো বাথরুম পেয়েছে। ছোটটা। তোর কি বড়টা না-কি?
আমারও ছোটটা।
চল যাই। কে আগে যাবে তুই না। আমি? বড় থেকে ছোট না ছোট থেকে বড়?
তুমি যা বলবে তাই।
তাহলে তুই বরং আগে যা। কোলে করে নিতে হবে না-কি?
হুঁ।
বাথরুম থেকে ফেরার পর ঘুম না। আসা পর্যন্ত ছোট চাচা গল্প বলেন। তাঁর গল্পের কোন আগা মাথা নেই, শুরু নেই শেষ নেই। তবু ঘুম ঘুম চোখে শুনতে এত ভাল লাগে। ছোট চাচার সব গল্পই শুরু হয় মাঝখান থেকে
তারপর ব্যাঙটা বলল, পানিতে থেকে থেকে আমার সিরিয়াস সর্দি হয়েছে। নাক ঝাড়তে ঝাড়তে অবস্থা কাহিল। অষুধ পত্র কিছু দিয়ে আমাকে বাঁচান ডাক্তার সাহেব। তবে আপনার কাছে একটা রিকোয়েষ্ট তেতো অষুধ দেবেন না। মিষ্টি অষুধ দেবেন। আবার বেশি মিষ্টিও দেবেন না। অষুধ বেশি মিষ্টি হলে আমার বাচ্চারা মেঠাই ভেবে খেয়ে ফেলবে।
ডাক্তার বলল, অষুধ দেব। তবে আমি খুবই অবাক হচ্ছি। কারণ ব্যাঙের কখনো সর্দি হয় না বলে বই পত্রে পড়েছি। আপনার কি সত্যি সর্দি হয়েছে?