আর একটী উপদেশ শ্ৰবণ করুন; -“ধৰ্ম্ম কম্পম ব্যাপারে কাহারও প্রতি অত্যাচার করিও না; যদি সে ইসলাম ধৰ্ম্ম গ্রহণ করে তবে বুঝিও আল্লাহ তাহাকে সৎপথ প্রদর্শন করিয়াছেন, আর যদি ধৰ্ম্ম স্বীকার না করে তবে আর কি করা-তোমার কাজ ত কেবল উপদেশ দান ও প্রচার করাই ছিল।”
আরও শ্রবণ করুন,-পয়গম্বর সাহেব কাফেরের কিরূপ বর্ণনা করিয়াছেন, “কাফের তাহারাই যাহারা ন্যায় বিচারের বিপরীত কাৰ্য্য করে; পাপী কেবল তাহারাই যাহারা ইসলাম ধৰ্ম্মের বাহিরে।” ইহাতে সুস্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে ইসলাম ধৰ্ম্মের বৃত্তি তত সঙ্কীর্ণ নহে যে কেবল পয়গম্বর সাহেবের শিষ্যবর্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিবে।
আর একস্থলে (প্রত্যাদেশ) আসিয়াছে যে “যদি তাহারা তোমাদের বিরোধী হইয়া যায় কিন্তু তোমাদের সহিত যুদ্ধ কলহ না করে আর তোমাদের সহিত বন্ধুর ন্যায় ব্যবহার করে
ভুল হাদিগকে হত্যা করা কিবা তাহাদের বশীভূত করিতে চেষ্টা করা ঈশ্বরাদেশের বিরুদ্ধ।
উপস্থিত মহোদয়গণ আপনারা কি বলিতে পারেন যে ইহা ন্যায় বিচারের কথা হইবে যে আমরা পয়গম্বর সাহেবের তাদৃশ মিলনপ্ৰয়াসী শান্তিসূচক বচনসমূহের প্রতি-যাহা সেরূপ যুদ্ধ কলহ এবং অত্যাচারের যুগে বলা হইয়াছিল, একটু মনোযোগ না করি, আর কেবল ঐ সকল বচন, যাহা তিনি কোন এক ক্ষুদ্র সৈন্যদলকে প্রবল শত্রুর সম্পমুখীন হইবার সময় উৎসাহিত করিবার জন্য বলিয়াছিলেন, সেগুলিকে ধরিয়া লই? আর আমার মতে যে কোন সেনাপতি এরূপ স্থলে থাকিতেন, তিনি এতদপেক্ষা অধিক যোগ্যতার কাজ আর কি করিতেন?
বেশ, এখন আপনারা সেই শান্তিপ্রিয়তা শিক্ষার আর একটি দৃষ্টান্ত, যাহা পয়গম্বর সাহেবের স্বকীয় ব্যবহারে দেখা যায়, একটু সমালোচনা করিয়া দেখুন ত অত্যাচার এমন কোন ছিল না, যাহা পয়গম্ববরের প্রতি করা হয় নাই,–আর তিনি তাহা ক্ষমা না করিয়াছেন; কোন নিৰ্য্যাতন এমন হয় নাই যাহা তিনি ক্ষমা করিতে প্ৰস্তুত না ছিলেন। হে ভ্ৰাতৃগণ! কোন ব্যক্তির প্রকৃত অবস্থা জানিতে হইলে তাহাকে ঠিক সেইভাবে দেখুন যে অবস্থায় তিনি বাস্তবিক থাকেন, কুসংস্কারের চশমা পরিয়া দেখিবেন না।
প্রত্যেক ধৰ্ম্মেই কিছু না কিছু দোষ জমিয়াই থাকে; সমস্ত সাধু প্রকৃতি লোকের কাৰ্যকলাপে কোন না কোন দোষ থাকেই, বিধৰ্ম্মী এবং মূখ শিষ্য একে আর বুঝিয়া থাকে। কোন ধৰ্ম্ম দেখিতে হইলে সেই ধৰ্ম্মাবলম্ববীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট এবং নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে দেখা উচিত; তাহা না করিয়া কোন নরাধমকে দেখিয়াই তাঁহাকেই দৃষ্টান্ত বলিয়া ধারণা করা অন্যায়। তবেই আমরা একে অপরকে ভ্ৰাতার ন্যায় ভালবাসিতে শিখিব এবং বন্য অসভ্যদের মত একে অপরকে ঘূণার চক্ষে দেখিব না।
আমার দুঃখ হইতেছে যে সময়াভাবে আমি ইসলামের শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায় সম্বন্ধে কিছু বলিতে পারিলাম না। যদিও সে বিষয়টিও আপনাদের ভাল লাগিত কিন্তু তাহা তত প্রয়োজনীয় নয় বলিয়া আমি এস্থলে সে বিষয় পরিত্যাগ করিলাম।
প্ৰত্যেক ধর্ম্মেই বাহ্যিক অবস্থার পরে দর্শন থাকে। যদি এ সময় ইসলামের বাৰ্ত্তমান অবস্থায় আমরা তাহার স্বল্পতা দেখিতেছি, (তাহাতে বিশেষ ক্ষতি নাই) কারণ, আমরা যখন সেই সময়ে-যখন ইসলামের জ্যোতি আরম্ভ হইয়াছিল, দৃষ্টিপাত করি তাহার গুণ ব্যাখ্যার উপযুক্ত ভাষা ও শব্দ পাই না।
এখন আপনারা বিবেচনা করিয়া দেখুন, আরবীয় পয়গম্বর তের শত (১৩০০) বৎসর পূৰ্ব্বে শিক্ষার উপকারিতা সম্বন্ধে কি বলিয়াছিলেন -“বিদ্যা শিক্ষা কর; যে বিদ্যা শিক্ষা করে সে নিম্পর্মল চরিত্র হয়; যে বিদ্যার চর্চা করে সে ঈশ্বরের স্তব করে; যে বিদ্যা অন্বেষণ করে সে উপাসনা (এবাদত) করে; যে উহা শিক্ষা দেয় সেও উপাসনা করে; শিক্ষাই সুপথ প্রদর্শন করে; শিক্ষাই নিৰ্জ্জনে নিৰ্ব্বাসনে প্রকৃত বন্ধুর কাজ করে; বনবাসে সাত্মনা প্রদান করে; বিদ্যা আমাদিগকে উন্নতির মাৰ্গে লইয়া যায় এবং দুঃখে সহানুভূতি প্রকাশ করে। বন্ধু সভায় বিদ্যা আমাদের অলঙ্কার স্বরূপ; শত্ৰু সম্পমূখে অস্ত্র স্বরূপ।(8) বিদ্যার দ্বারা আল্লাহতায়ালার বিপন্ন দাস পুণ্যের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ফল প্রাপ্ত হয়।”
পয়গম্বর সাহেবের নিম্নোক্ত বচনসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে আমি ভক্তিপ্রেমে অভিভূত হইয়া পড়ি। তিনি বলিয়াছেন, “বিদ্বানের (লিখিবার) মসী শহীদ (ধৰ্ম্মৰ্থ সমরশায়ী)-দের রক্তাপেক্ষাও অধিক মূল্যবান।” ভ্রাতৃগণ! বিদ্যার গৌরব বর্ণনা। এতদপেক্ষা অধিক আর কি হইতে পারে?
হজরত আলী যিনি পয়গম্বর সাহেবের প্ৰিয় জামাতা ছিলেন, আর র্যাহার সম্পবন্ধে পয়গম্বর সাহেব বলিয়াছেন যে “আলী ইসলামে বিদ্যা জ্ঞানের দ্বার স্বরূপ।” মুসলমানদের মধ্যে হজরত আলীই প্ৰথমে এলমে-এলাহী প্রচার আরম্ভ করেন। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে হজরত আলীর যে সকল বক্তৃতা আছে তাহা পাঠের উপযুক্ত। তিনি যুদ্ধ বিগ্রহের সময়ও (যুদ্ধক্ষেত্রে) ধৰ্ম্ম বক্তৃতা (খোতবা) পাঠ করিতেন।
বিদ্যার প্রশংসা বিষয়ে আলীর রচনাবলী হইতে কয়েকটি আমি এখানে উদ্ধৃত করিতেছি :
“অন্তর আলোকিত করিবার জন্য সুশিক্ষা উজ্জ্বল রত্ন; সত্য তাহার (বিদ্যার) লক্ষ্য; ঈশ্বরতত্ত্ব (এলহাম) তাহার পথ প্রদর্শক; বুদ্ধি (সুবোধ?) তাহাকে গ্রহণ করে; বানরের ভাষায় বিদ্যায় যথোচিত প্ৰশংসা হইতে পারে না।”