বিনয় বলল, ‘লা-পোয়েদের এই সময় জেফ্রি পয়েন্টে আসার কথা। আমি কিন্তু ওদের বোটে কয়েকটা দিন ঘুরে ঘুরে কী করে ‘শেল’ তোলে দেখতে চাই। নিজের চোখে না দেখলে, শুধু শুনে এসব লেখা যায় না। লা-পোয়েদের বোটে ওঠার আসল উদ্দেশ্যটা যে ঝিনুকের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া সেটা গোপনই রাখল।
বিশ্বজিৎ বললেন, ‘নিশ্চয়ই ওদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখবেন। একটা দুর্দান্ত এক্সপেরিয়েন্স হবে।‘
.
পরদিন পড়ন্ত বেলায় জেফ্রি পয়েন্টে পৌঁছে গেল বিনয়।
শেখরনাথ তাদের ঘরেই ছিলেন। বিনয়কে দেখে খুবই খুশি। বললেন, ‘যাক, তুমি এসে গেছ। খুব ভাল। তোমার লেখালেখির কাজ শেষ করে এসেছ তো?
বিনয় হাসল। –’শেষ কি আর হয়। আমাদের মতো রিপোর্টারদের লিখেই যেতে হয়। আপাতত পাঁচটা লেখা তৈরি করে বিশ্বজিৎবাবুর কাছে দিয়ে এসেছি। উনি কলকাতায় আমার অফিসে পাঠিয়ে দেবেন। তা সেটলমেন্টের নতুন খবর কিছু আছে?’
শেখরনাথ হাসলেন।–’না, লক্ষ্মণ নবদ্বীপের ওপর তান্ডব চালাবার পর সব গতানুগতিক চলছে। জাবোয়রাও আর হামলা চালায় নি। আপাতত শান্তি। তবে জোর করে তো কিছু বলা যায় না। কোন দিক থেকে কখন যে আবার ঝঞ্ঝাট শুরু হবে,কে জানে। হঠাৎ কিছু মনে পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।’দিন তিনকে হল লা-পোয়েরা এসে তোমার জন্যে ওয়েট করছে। তুমি নাকি ওদের সঙ্গে সমুদ্র থেকে ‘শেল’ তোলা দেখতে যাবে?’
বিনয়ের সারা শরীরে উত্তেজনা খেলে গেল। না, তাকে ফেলে চলে যায়নি লা-পোয়ে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মনে ভরে গেল। বলল, হ্যাঁ, আপনাকে বোধ হয় বলেছিলাম, ওদের নিয়ে কিছু লিখব।
‘গুড।’ বলে হাঁকাহাঁকি করে লা-পোয়েকে ডাকিয়ে আনালেন শেখরনাথ।–’এই যে তোমার পত্রকারজি চলে এসেছেন।‘
লা-পোয়ে বিনয়কে জিগ্যেস করল, ‘কবে আমাদের সঙ্গে যেতে পারবেন?’
‘আপনারা যেদিন বলবেন—’ বিনয় বলল।
‘কালই বেরিয়ে পড়তে চাই। তিন রোজ আপনার জন্যে ইন্তেজার করেছি। আর এখানে থাকা যাবে না। কাম-কাজ বন্ধ হয়ে আছে।‘
শেখরনাথ উৎসাহ দিলেন।–‘হ্যাঁ হ্যাঁ, কালই বেরিয়ে পড় বিনয়। ক’টা দিন ওদের সঙ্গে ঘুরে এসে এক্সপিরিয়েন্সটা লিখে ফেল। তোমাদের কাগজের রিডাররা নতুন অজানা একটা ওয়ার্ল্ডের সন্ধান পাবে।‘
.
পরদিন সকালে অবনীমোহনের দু’টো চিঠি আর দু-একটা জামাকাপড়, টুকিটাকি দরকারী কিছু জিনিস ব্যাগে পুরে লা-পোয়েদের মোটর বোটে উঠে পড়ল বিনয়। অবনীমোহনের চিঠি পড়লে ঝিনুকের সব ক্ষোভ, সব যাতনা এবং অভিমান দূর হয়ে যাবে কি? তাকে ক্ষমা করত পারবে ঝিনুক?
শেখরনাথ, পুনর্বাসনের কর্মীরা এবং উদ্বাস্তুরা সবাই সমুদ্রের ধারে চলে এসেছিল।
একসময় মোটর বোট শব্দ করে স্টার্ট দিল। উদ্বাস্তুরা সোনালি বালির সৈকতে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, ‘দুগ্গা, দুগ্গা, ভালায় ভালায় ঘুইরা আহেব (আসুন)।’
বিনয়ের চকিতে মনে পড়ল, একদিন সন্ধেয় রাজদিয়ার পুকুরঘাট থেকে অসুস্থ, অপ্রকৃতিস্থ, ধর্ষিত ঝিনুককে বাঁচাতে রাজেক মাঝির নৌকোয় উঠে অকূলে ভেসে পড়েছিল। আজ সেই ঝিনুকের জন্যই জেফ্রি পয়েন্টের বেলাভূমি থেকে লা-পোয়েদের মোটর বোটে আরও একবার অথৈ সমুদ্রে ভাসল।
.
[‘কেয়াপাতার নৌকো’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’এর পরবর্তী তৃতীয় খণ্ড ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ সমাপ্ত]
ভালো ছিল
এর আগে– অনেক দিন আগে কেয়া পাতার নৌকা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, তখন বয়স ছিল কুড়ি একুশ, এখন বাষট্টি , ঠিক তেমনই আগ্রহ নিয়ে উপন্যাসটি শেষ করলাম। কম্পিউটারাইজড প্রিন্টের জন্য কিছু মুদ্রন প্রমাদ থাকলেও ভীষন ভালো লাগলো। প্রফুল্ল রায়ের লেখা খুব ভালো লাগে। তবে শেষটা জানা গেল না।পরনতি কি হল জানার জন্য মনটা উতলা হয়ে থাকলো।