বুঝতেই পারলাম ইনি ডক্টর দেবতোষ বোস। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, তোর মা চিঠি দিয়েছিল; তুই আসবি। চল্ মা, ভেতরে চল্-আমার দিকে ফিরে বললেন, তোমার নাম তো রাজীব।
বললাম, আজ্ঞে হ্যাঁ।
এসো–
কিছুক্ষণ পর আবেগের ঢেউটা থিতিয়ে এলে একটা ঘরে শমিতা আর আমি মুখোমুখি বসলাম। সে বলল, এই জন্যেই তুমি আমাকে বম্বে এনেছিলে?
হ্যাঁ–আস্তে মাথা নাড়লাম, শুধু তাই না, তুমি যাতে তোমার বাবার কাছে আসতে পারো সেইজন্যেই তোমার সঙ্গে এতদিন মিশেছি, বন্ধুত্ব করেছি।
তোমার কথা বুঝতে পারছি না।
মনোবীণা সান্যাল আমার ওপর শমিতার কী দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং কীভাবে আমি তা পালন করেছি খুব সংক্ষেপে সে-সব জানিয়ে বললাম, পিতা এবং কন্যার পুনর্মিলন হয়ে গেছে। এবার আমার একজিটের পালা। আজই আমি চলে যাব শমিতা।
শমিতা হতবাক, আজই!
হ্যাঁ।
কেন, কদিন থেকে যাও না।
না, তার উপায় নেই। কলকাতায় আমার অনেক কাজ রয়েছে।
তবে আবার কবে তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে?
আর দেখা না হওয়াই ভালো।
কেন?
তুমি আমাকে জানো না শমিতা–আমি একজন
একজন কী?
প্রতারক। তোমার জীবনে আমার ছায়া না পড়াই ভালো।
শমিতা বিষণ্ণ চোখে তাকাল, তুমি যাই হও, আমার তাতে দরকার নেই। তুমি আমার ফ্রেন্ড; আমি–আমি তোমাকে ভালোবাসি-
এই কথাটা চিরদিন মনে রাখব। আমি করুণ ভাবে হাসলাম।
.
২৩.
দুদিন পর কলকাতায় ফিরে সোজা অফিসে চলে এলাম। কে জানত, পুলিশ ফাঁদ পেতে রেখেছে। অফিসে পা দিতে না দিতেই সেই ফাঁদে পড়ে গেলাম। চোখে পড়ল আমাদের তিনটে ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ পাস্ট-প্রেজেন্ট-ফিউচার, ন্যাশনাল ডিকেটটিভ কনসার্ন এবং প্ল্যানসের দরজায় তালা ঝুলছে। তার মানে পুলিশই ওগুলো সিল করে দিয়েছে। এটা কার কাজ বুঝতে পারছিলাম। মণিমোহন মল্লিক তার কথা রেখেছেন।
আমাকে ধরে পুলিশ সোজা হাজতে পুরে দিল। আমার বিরুদ্ধে হাজার গন্ডা চিটিংবাজির অভিযোগ রয়েছে। হে মহান জনগণ, এ সব অভিযোগের একটাও মিথ্যে নয়।
সকালে ধরা পড়েছিলাম। কোত্থেকে কীভাবে খবর পেয়ে বিকেলে লতিকা আমাকে দেখতে এল।
লোহার গরাদের ওধারে দাঁড়িয়ে একটা কথাও বলতে পারছিল না লতিকা। তার ঠোঁট থরথর করে কাঁপছিল আর চোখ জলে ভরে যাচ্ছিল। হে মহান জনগণ, মেয়েটা সত্যিই মরেছে। আমার মতো মানুষকে ভালোবাসার কোনও মানে হয়! হাত বাড়িয়ে লতিকার একটা হাত ধরে বললাম, কেঁদো না লতিকা, কেঁদো না। এখান থেকে নিশ্চয়ই একদিন বেরুতে পারব। তখন নতুন করে আবার জীবন শুরু করা যাবে।
লতিকার চোখের জল গালের ওপর দিয়ে ঢলের মতো নামতে লাগল।
হে মহান জনগণ, একবার মাত্র একবারই আমি প্রতারণা করতে চাইনি, চিটিংবাজি কতে চাইনি। আর ওই কারণে আজ আমাকে এখানে—এই হাজতে চলে আসতে হয়েছে।
আমার কথা তো শুনলেন। আপাতত এখানেই শেষ করা যাক। নমস্কার।