আমি প্রায় লাফিয়েই উঠলাম, গ্র্যান্ড! তোমার ব্রেনটা আজকাল দারুণ ওয়ার্ক করছে।
লতিকা হাসল, সেটা বোধহয় সঙ্গগুণে।
আমিও হেসে ফেললাম, যা বলেছ। তাহলে আসছে সপ্তাহে একটা শুভ দিন দেখে পার্সোনালের সাইন বোর্ডটা পাল্টে দাও
আচ্ছা
.
১৬.
আজ একটা দুর্দান্ত ঘটনা ঘটে গেল।
হে মহান জনগণ, আগেই জানিয়েছি আলাপ হবার পর থেকে আজকাল রোজই শমিতার সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে। সে-ই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আমাকে ক্লাবে, হোটেলে, সুইমিং পুলে কিংবা জুয়ার আড্ডায় চরকির মতো ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায়। আজ সে নিয়ে গিয়েছিল রেস কোর্সে।
আগেও আর একদিন রয়াল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবের মাঠে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল শমিতা। কিন্তু রেসের র আমি জানি না। নেহাত ওর গায়ে জোঁকের মতো আমার লেগে থাকতে হবে তাই সঙ্গে সঙ্গে যেতে হয়।
আগের দিনও লক্ষ্য করেছি, আজও দেখলাম, হাজার খানেক টাকা সে হেরেছে। টাকা গচ্চা যাওয়া ছাড়া এর মধ্যে কী ফান বা চার্ম আছে বুঝতে পারি না। আজ বললাম, রেস খেলতে তোমার ভালো লাগে?
শমিতা বলল, দারুণ।
এর মধ্যে কী আছে?
এক্সাইটমেন্ট অ্যান্ড কিক। লাইফটা আমার খুবই বোরিং। তার মধ্যে একটু এক্সাইটমেন্ট না থাকলে স্রেফ মরে যাব। বলে একটু থামল শমিতা। তারপর আবার বলল, রেসের ঘোড়াগুলো যখন ছোটে সেই সময়টা আমার দারুণ উত্তেজনার মধ্যে কাটে। এই উত্তেজনার জন্যেই আমি এখানে আসি।
কথা বলতে বলতে আমরা মেম্বারদের জন্যে সংরক্ষিত স্ট্যান্ড থেকে নেমে আসছিলাম। হঠাৎ সামনে কার দিকে চোখ পড়তে থমকে দাঁড়িয়ে গেল শমিতা। তার দৃষ্টি লক্ষ্য করে তাকাতেই দেখতে পেলাম স্ট্যান্ডটার নীচে ঘাসের লনে সাতাশ-আটাশ বছরের একটা ছোকরা-সাড়ে ছফুটের মতো হাইট, রোদে পোড়া টাফ চেহারা, চওড়া মাসকুলার বুক, ষাঁড়ের মতো ছড়ানো কাধ, পরনে বুকখোলা স্পোর্টস গেঞ্জি আর ট্রাউজার, চোখে সানগ্লাস
জিগ্যেস করলাম, কে ও?
একটা সেক্সি বিস্ট। অনেকদিন কলকাতায় ছিল না। আবার দেখছি এসে হাজির হয়েছে। বলেই আমার হাত ধরে টানল শমিতা, চলো, অন্যদিক দিয়ে যাই—
শমিতার মতো মেয়ে যাকে ভয় পায় সে নিশ্চই বিস্টই হবে।
অসংখ্য মানুষ আর গ্যালারির ফাঁক দিয়ে আমরা কোণাকুণি নামতে লাগলাম। কিন্তু এত করেও তাকে এড়ানো গেল না। নীচে নামতেই দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আমাদের দিকে চোখ রেখে রেখে সে এখানে চলে এসেছিল। সে বলল, কী ব্যাপার–ডাকলাম, শুনতে পাওনি?
কই না তো–শমিতা ঠান্ডা গলায় বলল।
আমি ভাবলাম অ্যাভয়েড করলে বুঝি—
অ্যাভয়েড করব কেন? তারপর, কবে আমেরিকা থেকে ফিরলে?
পরশু। এসেই তোমার খোঁজ করেছি। শুনলাম তুমি নাকি নতুন বয়ফ্রেন্ড জুটিয়েছ, তাকে নিয়ে দারুণ মাতামাতি করছ! বলেই আঙুল দিয়ে আমাকে দেখাল সে, হি মাস্ট বি দ্যাট লাকি গ্যায়–
রাইট-শমিতা বলল, আমার একটা খুব আরজেন্ট কাজ আছে এখানে চললাম; পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে। বাই
আমি তোমাকে চিনি। তোমার কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই। এতদিন পর দেখা হল—চলো আমার সঙ্গে। বলতে বলতে হঠাৎ কী মনে পড়তে উত্তেজিত হয়ে উঠল সে, জানো-দারুণ একটা খবর আছে। ইওরোপ যাবার আগে রাসেল স্ট্রিটে যে নতুন অ্যাপার্টমেন্টটা বুক করে গিয়েছিলাম কাল সেটা পেয়ে গেছি। তোমার আরেকটা সময় কাটাবার জায়গা
তার কথা শেষ হবার আগেই শমিতা বলে উঠল, প্লিজ প্রবীর, আমি আর ওয়েট করতে পারছি না। বলেই সামনের দিকে পা বাড়িয়ে দিল শমিতা।
সে অর্থাৎ প্রবীর দারুণ নাছোড়বান্দা হাত বাড়িয়ে শমিতার একটা হাত ধরে বলল। বলল, আজ তোমাকে ছাড়ছি না। এতদিন পর দেখা—
প্লিজ
নো, নেভার- দু’কাঁধ ধরে শমিতাকে নিজের দিকে ফেরাল প্রবীর, বলল, শমিতা, ইউ নো মি এভরি ওয়েল। সো
দাঁতে দাঁত চেপে তীব্র চাপা গলায় শমিতা বলল, সো হোয়াট?
আমার ইচ্ছা আমার সঙ্গে তুমি আমার নতুন অ্যাপার্টমেন্টে যাবে।
তোমার এতটা সাহস কোত্থেকে হল?
সে সাহস তো তুমিই আমাকে দিয়েছ ডার্লিং।
শমিতা তার কাঁধ থেকে প্রবীরের হাত দুটো ছুঁড়ে ফেলে আমাকে বলল, চলে এসো-
কিন্তু আরেকবার পা বাড়াতে গিয়ে শমিতাকে থামতে হল। প্রবীর আবার তার দুই কাঁধ চেপে ধরেছে। শমিতা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, ডোন্ট ক্রিয়েট সিন–
প্রবীর বলল, সিন ক্রিয়েট করার কোনও দরকারই হবে না যদি তুমি আমার সঙ্গে যাও
হে মহান জনগণ, আপনাদের রাজীব সরকার–অর্থাৎ আমি এতক্ষণ একটি কথাও বলিনি এবার আর চুপচাপ থাকা গেল না, প্রবীরকে বললাম, শমিতা যখন যেতে চাইছে না, ইনসিস্ট করছেন কেন?
প্রবীর কিন্তু স্প্যানিশ মাতাদোরের মতো আমার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ইউ সাট আপ সোয়াইন
আমার মাথায় চিড়িক করে ইলেকট্রিক শকের মতো কিছু খেলে গেল তবু যতটা সম্ভব মেজাজ শান্ত রেখে বললাম, আপনি যা বললেন তার উত্তর আমার জানা আছে। সেটি দিতে বাধ্য করবেন না।
আর একটা কথা বললে, তোমার মুখে একটা দাঁতও আস্ত থাকবে না রাসকেল–বলে উঠল প্রবীর।
হে মহান জনগণ, আমি একটা ভদ্রলোকের ছেলে; পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছর বয়স হলেও রক্তের উত্তাপ এখনও যথেষ্ট আছে। সুতরাং নিজের অজান্তে এবং প্রবীর কিছু বুঝবার আগেই তার চোয়ালে আমার একটা ঘুষি নেমে গেল। পরক্ষণেই দেখা গেল ছোকরা প্রায় পনেরো ফুট দূরে মাটির ওপর শুয়ে আছে।