আজ সন্ধেবেলা নানা ক্লাব ঘুরে শমিতা পার্ক স্ট্রিটের সেই বড় হোটেলটায় আমাকে নিয়ে এল। এসেই হুইস্কির অর্ডার দিল।
যে সব জায়গায় শমিতা বিলে সই করে মদ খায় সেই জায়গায় বার-এ জল-মেশানো হুইস্কি সার্ভ করতে বলে দিয়েছি।
যাই হোক ড্রিংক এসে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে গেলাসে চুমুক দিতে দিতে বললাম, তোমার সঙ্গে কদিন ধরে মিশছি। নাউ উই আর গুড ফ্রেন্ডস-এটা বলা যেতে পারে তো?
শমিতা হাসল, অফ কোর্স
তাহলে একটা কথা বলব?
শিওর।
তুমি বড় বেশি ড্রিংক করো
তাই নাকি। তবে তো তুমি আমার মাকে দেখোনি। শি ড্রিংকস লাইক ফিশ। এনিওয়ে তুমি যা বলছিলে বলে ফেলো। তবেফর গডস্ সেক, সারমন-টারমন দিও না।
আমি একটু হাসলাম, সারমন দেব আমি! হাসালে। কিন্তু একটা কথা আমার মনে হয়–তুমি তোমার লাইফটা টোটালি ওয়েস্ট করছ।
আই হ্যাভ গট এভরি রাইট টু ওয়েস্ট ইট।
চমকে উঠলাম, মানে!
শমিতা উত্তর দিল না। কোনও কথাও বলল না। পনেরো মিনিটের মধ্যে সটাসট আরো তিন পেগ খেয়ে ফেলল। অর্ধেক জল মেশানো থাকলেও বাকি অর্ধেকটা তো হুইস্কি। পাঁচ পেগে আড়াই পেগ হুইস্কি তার পেটে চলে গেছে। শমিতার মুখ লালচে হয়ে উঠতে লাগল।
আমি হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি বললাম, তোমার আপত্তি থাকলে শুনতে চাই না। আই মিন কোনও ভাবে তোমাকে হার্ট করলাম নাকি?
একটুও না–শমিতা হাসল। বলল, আমার লাইফের কথা বলতে হলে নিজেকে একটু প্রিপেয়ার করে নিতে হবে। তাই পাঁচ পেগ হুইস্কি টেনে মুডটাকে ঠিক করে নিলাম। নাউ আই মে স্টার্ট
আমি চুপ করে রইলাম। শমিতা বলতে লাগল, আমার মাকে দেখেছ?
বললাম, দেখেছি
শমিতা সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকাল, কী করে দেখলে?
বা রে, রোজই তো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসছি। তখন দেখেছি–আরে তাই তো। শমিতা বললে, মাকে তো দেখেছ; সেই লোকটাকে দেখোনি? অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম, কার কথা বলছ?
দ্যাট ম্যান-মানে অরিন্দম সান্যাল?
অরিন্দম সান্যালকে নিশ্চয়ই দেখেছি। একটু চুপ করে থেকে বললাম, তোমাকে পৌঁছে দিতে গিয়ে তাকেও দেখেছি। তোমার বাবা তো?
আমার কথা শেষ হল কি হল না, তার আগেই হে মহান জনগণ, একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেল। এই পাঁচ-তারা-মার্কা হোটেলের বারকে চমকে দিয়ে শমিতা চেঁচিয়ে উঠল, ওই স্কাউড্রেল সান-অফ-এ বিচটাকে আমার বাবা বলছ! আমি বোস আর ও সান্যাল। হাউ দ্যাট স্ট্রিট ডগ ক্যান বি মাই ফাদার?
হে মহান জনগণ, এই কথাটা আমিও অনেকবার ভেবেছি। মনোবীণা সান্যালের মেয়ে শমিতা বোস হয় কী করে? যাই হোক, শমিতার দিকে তাকিয়ে বললাম, কিন্তু তোমার মা তো বললে মিস্টার সান্যাল তার হাসব্যান্ড
তার হাসব্যান্ড হতে পারি কিন্তু আমার বাবা নয়
আমার মাথায় চরকি খেলে যেতে লাগল। বললাম, তবে?
আমার কথা এবার খুব সম্ভব শমিতার কানে ঢুকল না! সে দারুণ উত্তেজিত ভাবে বলতে লাগল, আমার মা আর দ্যাট বাগার অরিন্দম সান্যাল-এই দুজনে মিলে আমার লাইফটাকে হেল করে দিয়েছে। বিলিভ মি, আই ওয়াজ নট লাইক দিস–বলেই শমিতা একসঙ্গে ডাবল পেগের অর্ডার দিল।
বুঝতে পারছিলাম শমিতা তার লাইফের সব কথা আজ আমাকে বলবে। আমি চুপচাপ বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
হুইস্কি এসে গিয়েছিল। এক চুমুকে ডবল পেগ শেষ করে আরক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে সত্যি সত্যি শুরু করে দিল শমিতা। থেমে থেমে ভেঙে ভেঙে কখনো হিস্টিরিয়ার রোগীর মতো হাত-পা ছুঁড়ে, কখনো ভয়ানক উত্তেজিত ভাবে, আবার কখনও বিষাদের গলায় সে যা বলে গেল তা এইরকম।
শমিতার বাবার নাম দেবতোষ বোস। তিনি একটা ইউনিভার্সিটিতে লিটারেচারের অধ্যাপক ছিলেন। দারুণ ডেডিকেটেড মানুষ। ইউনিভর্সিটি, ছাত্র-ছাত্রী, পড়াশোনা, নানা রকম সেমিনার–এইসব নিয়েই প্রায় সারাক্ষণ ডুবে থাকতেন। স্ত্রী মনোবীণা আর মেয়ে শমিতাকে নিয়ে তাঁর ছিল খুবই ছোট্ট ফ্যামিলি। নিজের পড়াশোনা এবং কাজকর্মের মধ্যেও স্ত্রী এবং মেয়েকে যতটা সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া যায়, দিতেন। কিন্তু মনোবীণা তাতে খুশি নন। অধ্যাপকের স্ত্রীর ম্যাড়মেড়ে প্যানপেনে লাইফ তার পছন্দ নয়। তিনি প্রতি মুহূর্তে, এক্সাইটমেন্ট চান, কিক চান, হাউইয়ের মতো উড়তে চান। প্রফেসরের স্ত্রীর জীবনে এসব সুযোগ কোত্থেকে জুটবে?
কিন্তু জুটে গেল। দেবতোষ একদিন তার এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুকে বাড়ি নিয়ে এলেন। নাম অরিবন্দ সান্যাল। জানতেন না নিজের হাতে সুড়ঙ্গ কেটে কাকে এনে ঢোকালেন। এই অরিন্দম সান্যাল একটা পারফেক্ট সোয়াইন, পায়ের তলা থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত নাম্বার ওয়ান স্কাউন্ট্রেল–এমনিতে দেখতে সুপুরুষ। অনেক দিন ওয়েস্ট জার্মানিতে কাটিয়ে তখন কলকাতায় ছোটখাটো একটা কনসালট্যান্ট ফার্ম খুলেছে। চমৎকার কথা বলতে পারত, দুর্দন্ত স্মার্ট। মোট কথা, লোককে বিশেষ করে মেয়েদের আকর্ষণ করার মতো সবকিছুই ছিল তার মধ্যে। এই লোকটা ফাস্ট লাইফের নেশাটাকে তাতিয়ে তাতিয়ে একেবারে এক্সপ্লোসান ঘটিয়ে ছড়ল। তারপর একদিন সে যখন মনোবীণা আর শমিতাকে নিয়ে পালাল সেইদিন অধ্যাপক দেবতোষ বোস বুঝতে পারলেন তার বন্ধু, তার গ্রেট ফ্রেন্ড অরিন্দম সান্যাল হোল ওয়ার্ল্ডের সামনে তাকে একেবারে ন্যাংটো করে ফেলে দিয়ে গেছে। তার চারপাশ থেকে সবাই যেন ফিসিফিসিয়ে সমানে বলে গেছে, এই লোকটা নিজের স্ত্রীকে মেয়েকে সামলে রাখতে পারে না। হেঁ-হেঁ–এই লোকটা–