বিশেষ করে আরো যাদের নেওয়া হয়েছে তারা হল অ্যাস্ট্রোলজার, তান্ত্রিক, অবধূত, পিশাচসিদ্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ছাড়া কপাল দেখে, নাক দেখে, কুঁচকি দেখে, কণ্ঠা দেখে ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে–এমন মহাপুরুষও আছে ডজন ডজন। কিন্তু আমরা শোম্যানশিপ আর পাবলিশিটির ব্যাপারটা ভালো করেই জানি। ওটা ছাড়া এ-যুগে কোনও বিজনেস বা প্রফেসান চালানো প্রায় অসম্ভব।
তাই খবরের কাগজে পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচারের নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছি, হাজার হাজার হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিলি করছি, পোস্টারে পোস্টারে কলকাতার দেয়াল ঢেকে দিচ্ছি। বিজ্ঞাপনে, হ্যান্ডবিলে, পোস্টারে, সর্বত্র লেখা আছে–আমরা হিমালয়ের ত্রিকালজ্ঞ মহাপুরুষকে দিয়ে সব রকম প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকি। বিশেষ করে রেসে কোন ঘোড়া জিতবে, আপনি বম্বের ফিল্মস্টার হতে পারবেন কিনা, সেলস্-ট্যাক্স ইনকাম-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েও আপনি রেহাই পাবেন কিনা, ব্ল্যাক টাকার পাহাড় জমিয়েও পার পাবেন কিনা এবং ইলেকসানে জিততে পারবেন কিনা–এই চারটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমাদের বিশেষত্ব। প্রতি প্রশ্নের উত্তরের জন্য দক্ষিণা মাত্র পঞ্চাশ টাকা। প্রশ্ন এবং দক্ষিণা জমা দেবার পর দু-মাস অপেক্ষা করতে হয়। কারণ হিমালয়ের ঐশী শক্তিসম্পন্ন ত্রিকালজ্ঞ মহাপুরুষের কাছে লোক পাঠিয়ে প্রশ্নের উত্তর আনতে এই সময়টা তো লাগবেই। সুতরাং আপনারা দু-মাস পরের যে বিষয় জানতে চান সে সম্বন্ধে এখনই প্রশ্ন করুন এবং ফি পাঠান।
হে মহান জনগণ, দু-মাস সময় কেন নিয়েছি বুঝতেই পারছেন। এর মধ্যে প্রশ্ন গণনার জন্যে কিছু টাকা অ্যাডভান্স পেয়ে গেলেই দুম করে পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচারের গণেশ উল্টে দেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া আমাদের এই অ্যাস্ট্রোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টটাতে রাতারাতি গ্ল্যামার আনার জন্যে আরো কিছু প্ল্যান-ট্যান নিয়েছি। অজয় আর বিমল বাদে অন্য যে ছেলেগুলোকে এই ডিপার্টমেন্টে জুড়ে দিয়েছি তারা অফিসে বসে না। তাদের দেওয়া হয়েছে নানারকমের ফিল্ডওয়ার্ক। তারা নামকরা ফিল্মস্টার, লিডার, বিজনেসম্যান, ডাক্তার, ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইত্যাদির পারিবারিক এবং গোপন খবর অর্থাৎ তারা স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে কোথায় কার সঙ্গে ঘোরে, কোন মেয়ের সঙ্গে মেশে–এসব খবর নিয়ে আসে। আর আমি করি কী প্রত্যেকের ঠিকানায় সেই সব তথ্য ভরে চিঠি পাঠাই। সেই চিঠিতে আরো লিখিখবরের কাগজে আপনার যে ছবি বেরিয়েছে সেই ছবিতে আপনার কপাল দেখে আমার এসব মনে হয়েছে।
আমি কপাল দেখে ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারি। যদি আপনার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক এই সব তথ্য সত্যি হয়, তাহলে সামনে আপনার ভয়ানক বিপদ। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আজই আড়াইশো টাকা পাঠান। হিমালয়ের ত্রিকালজ্ঞ মহাপুরুষের কাছ থেকে মন্ত্রসিদ্ধ মাদুলি আনিয়ে আপনাকে পাঠাব।
হে মহান জনগণ, প্রফেসান বা বিজনেস যা-ই বলুন না–এই নতুন ডাইভার্সিফিকেসনের ফল দারুণ হয়েছে। রেস, ইলেকসানের রেজাল্ট, ব্ল্যাকমানি ইত্যাদি সম্বন্ধে প্রতিদিন ডাকে গাদা গাদা প্রশ্ন এবং সেই সঙ্গে ফি-এর টাকা আসছে। আর ফিল্মস্টার, ডাক্তার, প্রফেসর ইত্যাদিদের কাছ থেকে মাদুলি বাবদ অজস্র টাকা। এভাবে চললে দু-মাসের মধ্যেই কয়েক লাখ টাকা আমাদের হাতে এসে যাবে।
.
১৪.
একদিকে আমাদের প্রফেসানটা দুর্দান্ত চলছে। আরেক দিকে-হে মহান জনগণ, আমি সেই ক্যাঁচাকলটায় আরো ভালো করে আটকে যাচ্ছি। অর্থাৎ শমিতার ব্যাপারটা বলছি আর কী।
এই সাত-আট দিন তার সঙ্গে রোজ দেখা হয়েছে। যদিও আমিই শমিতাকে শোধরাবার দায়-দায়িত্ব নিয়েছি, আমারই তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা; তবু বলব শমিতাই আমার সে ঝামেলা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। তার মুভমেন্টের ওপর নজর রেখে আমাকে ফোন করার জন্যে এখন আর চার্লিকে পাঠাবার দরকার হয় না। পরের দিন কোথায় তার সঙ্গে দেখা হবে সেটা আগের দিনই শমিতা আমাকে জানিয়ে দেয়।
একদিন ওর সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে আন্দাজ করতে পেরেছি, আলাপটা অল্প দিনের হলেও সে আমাকে মোটামুটি পছন্দ করে। বিশেষ করে সেদিন তাকে বেহেড মাতাল অবস্থায় আমার ছাদের ঘরে নিয়ে যাবার পরও যখন কোনওরকম সুযোগ নিইনি তখন থেকেই সে আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আমাকে স্পষ্ট করে বলেই দিয়েছে, রাত্রে নেশার ঘোরে যখন পুরোপুরি আউট হয়ে যাবে তখন আমি যেন তাকে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড়ে পৌঁছে দিই। কিংবা ইচ্ছা হলে এন্টালিতে আমার সেই ছাদের ঘরেও নিয়ে যেতে পারি। এ কদিনের মেলামেশায় আমরা পরস্পরকে তুমি বলতে শুরু করেছি।
হে মহান জনগণ, সাত-আটদিন যদিও খুবই অল্প সময় তবু এরই মধ্যে শমিতা সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত কীভাবে কাটায় সেটা আমার জানা হয়ে গেছে। লক্ষ্য করেছি বারোটার আগে শমিতা বাড়ি থেকে বেরোয় না। আগের দিন যে পরিমাণ হুইস্কি বা বাংলা মাল সে টেনে যায় তার হ্যাংওভার কাটাতে কাটাতেই তার অনেক বেলা হয়ে যায়। তারপর স্নান-টান করে কোনওদিন লাঞ্চ সেরে, কোনওদিন বা না খেয়েই বেরিয়ে পড়ে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে চলে যায় ক্লাবে। হোল ক্যালকাটার সাত-আটটা ক্লাবের সে মেম্বার। এক ক্লাব থেকে আরেক ক্লাব, তারপর আরেক ক্লাব কিংবা জুয়ার আড্ডা অথবা ফিগার স্কুল-এইভাবে শাটুল-ককের মতো ঘুরতে ঘুরতে সে চলে আসে হোটেলে। সেখানে ড্রিংকের ফাঁকে ফাঁকে চলে ফ্লোর ডান্স। বাঙালি-পাঞ্জাবি-সিন্ধি-পার্শি, ইন্ডিয়ান, নন-ইন্ডিয়ান–নানা জাতের লোকের সঙ্গে তার জানাশোনা। এক নজর তাকিয়েই বুঝতে পারি সবার চোখ শমিতার দারুণ সুন্দর আর সেক্সি শরীরটার দিকে। প্রায় সবাই চায় সে আউট হয়ে গেলে তাকে পৌঁছে দেবার নাম করে কোনও প্রাইভেট অ্যাপার্টমেন্টের বেডরুমে ঢোকাতে। কিন্তু আমি তা হতে দিই না।