হ্যাঁ। মানে
চাদরটা দেবার সময় আমার ফিগার আপনি দ্যাখেননি?
সাঁতার-না-জানা মানুষের মতো গভীর জলে ডুবতে ডুবতে কী বলতে যাচ্ছিলাম, চার্লি এসে বাঁচিয়ে দিল। সে আমাদের জন্যে চা নিয়ে এসেছে।
শমিতাও আর ওই ব্যাপারটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন করল না। চা খেয়ে বাথরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এসে বলল, এবার বাড়ি যাব।
বললাম, এখনই যাবেন!
হ্যাঁ। সকালেই আমি স্নান করি। বাড়ি গিয়ে স্নানটা করতে হবে
দুম করে নিজের অজান্তেই বলে বসলাম, এখানেও তো জল আছে
শমিতা বলল, কিন্তু শাওয়ার নেই। শাওয়ার ছাড়া আমার আবার স্নান করে আরাম হয় না।
হে জনগণ, পৈতৃক প্রপার্টি হিসেবে পাওয়া এই চল্লিশ টাকার ভাড়া বাড়িতে শাওয়ার কোথায় পাব? আমি চুপ করে রইলাম।
শমিতা এবার উঠে পড়ল। বলল, আমার গাড়িটা কোথায়?
বললাম, নীচে রয়েছে।
চলুন, একটু দেখিয়ে দেবেন।
শমিতাকে সঙ্গে করে নীচের রাস্তায় এলাম। গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে শমিতা বলল, আপনার এই বাড়িটার অ্যাড্রেস যেন কী?
বাড়ির নম্বর এবং রাস্তার নাম বললাম।
শমিতা বলল, ঠিকানাটা মনে করে রাখলাম। ড্রিংক-ট্রিংক করে রাত্রে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে না করলে কিন্তু এখানে চলে আসব।
উইদাউট হেজিটেসন।
একটু চুপ করে থেকে এক পলক আমাকে দেখল শমিতা। তারপর বলল, আই হ্যাভ স্টার্টেড লাইকিং ইউ। তারপর আমি কিছু বলার আগেই শমিতা গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে আবার বলে উঠল, আবার কখন দেখা হচ্ছে?
বললাম, আপনিই বলুন।
সন্ধের সময় পার্ক স্ট্রিটে চলে আসুন। বলে একটা হোটেলের নাম করল শমিতা। আমি ঘাড় হেলিয়ে দিলাম, যাব।
শমিতা চলে গেল। আমি বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে আবার ছাদের দিকে উঠতে লাগলাম। তেতলার ল্যান্ডিং-এর কাছে আসতেই ডরোথির চিৎকার কানে এল, ইউ স্কাউনড্রেল ব্রুট–
চমকে তাকিয়ে দেখি ডরোথি তাদের ফ্ল্যাটের সামনের প্যাসেজটায় দাঁড়িয়ে আছে। ডরোথিকে দেখে দাঁত বার করে হাসলাম। কেননা পালাবার আর উপায় নেই; আমি একটা ফঁদে পড়ে গেছি যেন।
হাসিতে গলল না ডরোথি। বরং আরো ক্ষেপে উঠল, কাল রেস্তোরাঁয় কাকে পাঠিয়েছিলে? সান অফ এ বিচ একটা থার্ড ক্লাস চোরকে পাঠাতে তোমার লজ্জা করল না?
বারকতক ঢোক গিলে বললাম, মানে আমি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম। ভাবলাম তুমি একা-একা বসে থাকবে। তাই চার্লিই–
কাজ চালিয়ে নিক–ডরোথি রক্ষাকালীর মতো হিংস্র হয়ে উঠল, রাসকে বিস্ট, প্ল্যান করে তুমি আমাকে ইনসাল্ট করেছ। বলেই হাতের খবর কাগজটা ছুঁড়ে মারল।
টক করে কাগজটা লুফে নিতে নিতে বললাম, বিশ্বাস করো, মা দুর্গার দিব্যি, তোমাদের যীশুর দিব্যি-ইনসাল্ট করার কোনও ইচ্ছে ছিল না।
নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিতে দিতে ডরোথি, বলল, তোমার সঙ্গে আজ থেকে অল রিলেসান কাট অফ। সোয়াইনি, ব্রুট
হে মহান জনগণ, চার্লির জন্যে ডরোথির হাত থেকে বোধহয় চিরকালের জন্যে রক্ষা পাওয়া গেল। মনে মনে তার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে বললাম–চার্লি হেন্ডারসন, যুগ যুগ জিয়ো–বলেই সিঁড়ি টপকে টপকে ছাদে চলে এলাম।
.
১২.
অনেকদিন পর চার্লি আর আমি আজ একসঙ্গে দিনের বেলায় বাড়িতে আছি। চার্লি বলল, লর্ড টাকা দাও; চিকেন আর সবজি-টবজি নিয়ে আসি। ফলে খাওয়া-দাওয়া সেরে অফিসে আসতে বেশ দেরি হয়ে গেল আমার।
কাচের দেয়ালের ওপারে লতিকা তার জায়গায় বসে কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলছিল। আমাকে দেখেই লাইনের ওধারের অদৃশ্য ব্যক্তিটিকে ব্যস্তভাবে বলে উঠল, একটু ধরুন, উনি এসে গেছেন। তারপর টেলিফোনটা কাচের দেয়ালের ফুটোর ভেতর দিয়ে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল, মণিমোহন মল্লিক।
মণিমোহনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলব, দু-চার সেকেন্ড ভেবে নিলাম। তারপর ফোনটা কানে লাগিয়ে বললাম, নমস্কার মিস্টার মল্লিক। বলুন–
লাইনের ওধার থেকে মণিমোহনের কণ্ঠ ভেসে এল। প্রতি-নমস্কার জানিয়ে তিনি বললেন, খবর তো আপনার কাছে। কাজটা শুরু করে দিয়েছেন?
নিশ্চয়ই। আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি; কাজটা তো করে দিতেই হবে। মনে মনে বলাম, শালা শুয়োরের বাচ্চা ইহজন্মে তুমি আমাকে দিয়ে ওই কর্ম করাতে পারবে না।
মণিমোহন বললেন, কাজের নেচারটা মনে আছে?
নিশ্চয়ই।
বলুন তো? কী রকম মনে আছে দেখি
শমিতা বোসের ন্যুড ফোটো আর বেডরুমের ছবি–এই তো?
ভেরি গুড। বেশ তারিফের সুর মণিমোহন বললেন, মনে হচ্ছে আমার কাজের জন্য রাইট লোককেই ধরেছি। ফোটোগুলো কবে পাচ্ছি?
আপনি তো আমাকে দুমাস সময় দিয়েছেন
তা দিয়েছি। তবে আগে দিতে পারলে এই কাজটা নিয়ে অতদিন আমাকে থাকতে হয় না; আমিও নিজের কাজ শুরু করে দতে পারি।
ফোটোগুলো নিয়ে কী করবেন বলুন তো স্যার?
আপনাকে সেদিনই বলে দিয়েছি এ নিয়ে কোনওরকম প্রশ্ন করা চলবে না।
নিষেধাজ্ঞাটা আমার মনে ছিল। তবু ইচ্ছা করেই কথাটা আবার জিগ্যেস করেছি। হে মহান জনগণ, আমি স্রেফ একটা চান্স নিয়েছিলাম। অসাবধানে দুম করে মণিমোহন হয়তো নিজের উদ্দেশ্যটা বলেও ফেলতে পারেন। কিন্তু লোকটার স্নায়ু-টায়ু দারুণ সজাগ।
কিন্তু আমার নামও রাজীব সরকার। তাই একটু ভেবে বললাম, স্যার, ফোটোগুলো আপনার কী কাজে লাগবে-তা নিয়ে আমার হেড-এক নেই। তবে জানতে পারলে আমার কাজের একটু সুবিধা হত। মানে আপনার পারপাস বুঝে সেই অ্যাঙ্গেল থেকে শমিতার ফোটো তুলতাম।