এ রকম নাম আমি কখনও শুনিনি।
প্রায় দশ মিনিট নিজের সম্বন্ধে এবং তিনি যে শমিতার দায়দায়িত্ব আমার হাতে তুলে দিয়েছেন সে সম্বন্ধে বলবার পর মনোবীণা একটু একটু চিনতে পারলেন যেন। বেশ রুক্ষ স্বরেই বললেন, তা এত রাতে কী?
তাকে জানালাম, শমিতাকে আমার এখানে আনতে হয়েছে। কেননা সে বাড়ি যেতে চাইছে না।
মনোবীণা বললেন, সো হোয়াট? আপনাকে রেসপনসিবিলিটি দেওয়া হয়েছে। যা ভালো বুঝবেন করবেন—
না, ব্যাপারটা আপনাকে জানানো দরকার। তাই
কিছু দরকার নেই। মাঝরাত্রে এভাবে আর যেন বিরক্ত করবেন না। লাইনটা ঝড়াৎ করে কেটে দিলেন মনোবীণা।
আমি ফিরে এসে দেখলাম, শমিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। সেই বিকেল থেকে হুইস্কি আর বাংলা মদ ছাড়া আর কিছুই পেটে পড়েনি তার। খাবার জন্যে তাকে অনেক ডাকাডাকি করলাম কিন্তু শমিতার ঘুম ভাঙানো গেল না।
সুতরাং চার্লিকে আর আমি পাশের ঘরে খেয়ে সেখানেই পাশাপাশি বিছানা পেতে নিলাম। আর তখনই চাাকে জিগ্যেস করলাম, তোমার মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ কেন? অ্যাকসিডেন্টে পড়েছিলে নাকি?
চার্লি খাড়া উঠে বসল, দারুণ উত্তেজিতভাবে বলল, ইট ইজ ফর ইউ লর্ড।
কেন, আমি কী করলাম?
চৌরঙ্গীর রেস্তোরাঁর কাছে প্রক্সি দিতে পাঠিয়েছিলে! যদি জানতাম ওখানে ডরোথি বসে আছে, ও গড, আমি কিছুতেই যেতাম না; জানো তোমার বদলে আমি গেছি শুনেই প্লেট কাপ ছুঁড়তে আরম্ভ করল। তারপর ফর্ক-টক দিয়ে অ্যাটাক করল। সেই জন্যেই আমার এই হাল।
শুনে দারুণ হাসতে লাগলাম। হাসির তোড়ে আমার শরীর বেঁকে যেতে লাগল। চার্লির ব্যাপারটা খুবই দুঃখের, সেই সঙ্গে ভীষণ মজারও।
চার্লি এক পলক আমাকে দেখল। তারপর ভয়ানক রেগে গিয়ে আমার দিকে পিছন ফিরে আবার শুয়ে পড়ল। বলল, ডোন্ট লাফ লর্ড ইটস নট ফান; লাইফ অ্যান্ড ডেথের কোশ্চেন। শি ইজ এ টাইগ্রেস-ইয়েস, এ টাইগ্রেস।
আমি হাসতেই লাগলাম।
.
১১.
পরের দিন বেশ সকালেই ঘুম ভেঙে গেল। চোখ ফেলতেই লক্ষ্য করলাম যে ঘরে আমি শুই, সেখানে নেই। আরো দেখলাম আমার দেড় ফুট দূরে ময়লা চিটচিটে বিছানায় কুকুরের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমোচ্ছে চার্লি।
একটু ভাবতেই কাল রাতের সব ঘটনা মনে পড়ে গেল। ধড়মড় করে উঠে প্রথমে গেলাম পাশের ঘরে। নিজের বিছানার দিকে তাকাতেই আচমকা ফোর ফর্টি ভোল্টের বিদ্যুৎ আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে গেল যেন। শমিতা ডানদিকে ঈষৎ হেলে শুয়ে আছে। তার হট প্যান্টের কটি বোতাম খোলা, নাভির অনেকটা জায়গা উন্মুক্ত। শার্ট এবং ব্রার হুক আলগা করে দেবার জন্যে সোনার দ্বীপের মতো তার দুটি বুক বেরিয়ে এসেছে। ঘুমের ঘোরেই হয়তো ব্রা-টা খুলে ফেলেছে শমিতা।
মণিমোহন মল্লিকের কথা আমার মনে পড়ে গেল। শমিতার ন্যুড ছবি তুলে দেবার দায়িত্ব সে আমাকে দিয়েছে। হে মহান জনগণ, আমার পেক্ষ সেটা কি সম্ভব? আফটার অল আমার শরীরে ভদ্দরলোকের কিঞ্চিৎ রক্ত তো রয়েছে। তাড়াতাড়ি একটা পাতলা চাদরে শমিতার শরীর ঢেকে দিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।
আধ ঘণ্টা বাদে ফিরে এসে দেখি চার্লি কখন যেন উঠে পড়েছে। বিছানা-টিছানা গুটিয়ে এখন সে চা বানাচ্ছে। ও ঘরে শমিতাও উঠে বিছানায় বসে অবাক হয়ে চারদিক দেখছিল। আমি সোজা তার কাছে চলে এলাম। বললাম, গুড মর্নিং। কাল রাত্রে ভালো ঘুম হয়েছে?
আমার কথায় উত্তর না দিয়ে শমিতা জিগ্যেস করল, কাল রাত্তিরে কি আমি এই ঘরে ঘুমিয়েছি?
হ্যাঁ।
এখানে আমি এলাম কী করে?
হে মহান জনগণ, আমার শিরদাঁড়ার ভোর দিয়ে ঠান্ডা বরফ নেমে গেল। বলে কী মেয়েটা? শেষটায় আমাকে ফাঁসিয়ে দেবে না তো? বললাম, আপনার মনে পড়ছে না?
ভুরু কুঁচকে কী ভাবল শমিতা। একটু একটু করে কাল রাত্রের ব্যাপারটা যেন মনে পড়ল তার। বলল, আমি বাড়ি যেতে চাইনি; তাই আপনি এখানে নিয়ে এসেছেন–তাই না?
আমি নিজেকে খুবই স্টেড়ি রাখতে চাইছি। বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ
আচ্ছা এটা কি আপনার বাড়ি?
হ্যাঁ।
কে কে থাকে এখানে?
আমি আর আমার এক বন্ধু চার্লি।
একটু চুপ করে থেকে কী যেন ভেবে নিল শমিতা। তারপর বলল, কাল রাত্তিরে আমি কি একাই এ-ঘরে শুয়েছিলাম?
অবাক হয়ে বললাম, হ্যাঁ—
আপনি কোথায় শুয়েছিলেন?
চার্লি আর আমি ওই পাশের ঘরটায় শুয়েছিলাম।
দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াতে কামড়াতে শমিতা বলল, স্ট্রেঞ্জ! বাড়িতে নিয়ে এলেও কোনওরকম চান্স নিলেন না?
শমিতা আমাকে রেপ কেসে-টেসে ফাঁসিয়ে দিতে চায় নাকি? আমার কানের ডগা গরম হয়ে উঠল। টের পেতে লাগলাম, ব্লাড প্রেসারটা একটা বিপজ্জনক সীমায় পৌঁছে গেছে। বললাম, ইউ মে টেক মি ফর এ জেন্টলম্যান–আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দ্রুত একবার দেখে নিয়ে বলল, হয়তো তাই। তবু জেন্টলম্যান বা ব্রুট–আমাকে এ অবস্থায় পেলে কেউ ছাড়ত না। সবাই তো বলে আমার মধ্যে দারুণ সেক্স আছে; আমি দুর্দান্ত অ্যাট্রাক্টিভ; আমার ফিগার দেখলে নাকি স্ট্রোক হয়ে যায়। আপনি কী বলেন?
উত্তর দিলাম না।
শমিতা আমার দিকে ঝুঁকে চাপা গলায় বলল, আপনি তো আমার প্রায়-নুড শরীর দেখেছেন; তবু ভদ্রলোক হয়ে ছিলেন?
চমকে বললাম, কে বললে আমি দেখেছি?
সকালে উঠে আমি নিজের দিকে একবার তাকিয়েছিলাম। তা ছাড়া আমার গা একটা চাদর দিয়ে টাকা ছিল। মনে আছে কাল চাদর গায়ে দিয়ে শুইনি। এটা কে দিয়েছে? আপনি?