হ্যাঁ, তা আমি জানি।
এই যে ভাল কাকা টানাটানির কথা বললেন; কথাটা শুনে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। বারবার মনে হচ্ছে, আমি এত টাকা মাইনে পাই কিন্তু কেন এতকাল ভাল মা-ভাল কাকাকে প্রত্যেক মাসে দু পাঁচ হাজার টাকা। পাঠাইনি? ওরা তো আমাকে সন্তান জ্ঞানেই চিরকাল স্নেহ করেছেন।
তুমি সত্যি বড় ভাল। তোমার কথাগুলো শুনে আমার যে কি গর্ব হচ্ছে তা ভাবতে পারবে না।
আমাকে নিয়ে গর্ব করতে হবে না; তুই শুধু দেখবি আমি মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে অমানুষ না হই।
তোমার বিবেক আছে। তাইতো তুমি কোনদিনই অমানুষ হতে পারবে না।
.
হোটেলে ফিরে আসার পর কফি খেতে খেতে ওরা কথা বলে।
শান্ত একটু হেসে বলে, তুই ভাবতে পারবি না, মাঝে মাঝে কিছু মানুষ আমাকে কি ডেঞ্জারাস প্রলোভনের ফাঁদে ফেলতে চায়।
ওরা প্রলোভন দেখায় কেন।
ব্যবসার স্বার্থে, অনেক টাকা লাভ করার লোভে।
তোমার সঙ্গে ব্যবসার কী সম্পর্ক?
কফির কাপে লম্বা চুমুক দিয়ে শান্ত বলে, আসল কথা হচ্ছে আমাদের জনসন অ্যান্ড হ্যারিসন কোম্পানীর তৈরি কোন না কোন জিনিষ ভারতবর্ষের অন্তত আশি ভাগ মানুষ ব্যবহার করে।
হ্যাঁ, তা বলতে পারো।
সারা বছরে আমরা আশি হাজার কোটি টাকার জিনিষ বিক্রি করি; এই মাল বিক্রি করার দায়িত্ব আমাদের চারজনের। আমার দায়িত্ব আঠারো হাজার কোটি টাকার মাল বিক্রি করার।
মৌ একটু হেসে বলে, বাবা! শুনেই তো আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে।
না, না, মাথা ঘুরে যাবার মতো ব্যাপার না। আমাদের কোম্পানীর এত ভাল সুনাম যে আমাদের তৈরি কোন কিছু সম্পর্কেই মানুষের কোন অভিযোগ নেই।
তা ঠিক।
এখন আসল সমস্যার কথা বলি। ধরো উত্তরবঙ্গ আর সিকিমে চার হাজার কোটি টাকার জিনিষ বিক্রির টার্গেট। বেশ কিছু ব্যবসাদার চার হাজার কোটি টাকার র্জিনিষ বিক্রির এজেন্সী নিতে চায়।
একজন ব্যবসাদারই সব জিনিষ বিক্রির এজেন্সী চায়?
হ্যাঁ।
কিন্তু কেন?
যাতে চার শ’ কোটি টাকা লাভ করতে পারে।
মাই গড!
শান্ত একগাল হেসে বলে, ওহে সুন্দরী, এই এজেন্সী পাবার জন্য ব্যবসাদাররা আমাকে কত রকমের প্রলোভন দেখায়, তা তুই ভাবতে পারবি না।
মৌ-ও একটু হেসে বলে, শুনি, কী ধরনের প্রলোভন দেখায়।
কোন ব্যবসাদার দু’এককোটি টাকা ব্রিফকেসে ভর্তি করে পাঠায়, কেউ দিতে চায় দিল্লী, বোম্বে বা ব্যাঙ্গালোরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। বিদেশে বেড়াবার সব খরচ, ছেলে-মেয়ের বিয়ের খরচ বা বিদেশে পড়াশুনা করার সব খরচ ও আরো কত কি।
আর কী দেবে?
হ্যাঁ, আরো দেবার আছে। শুনবি, আরো কী দিতে চায়?
হ্যাঁ, শুনতে চাই।
শান্ত হাসতে হাসতে বলে, এমন অনেক ব্যবসাদার আছে যারা তাদের সুন্দরী যুবতী স্ত্রী বা মেয়েকেও পাঠায় আমার সঙ্গে কয়েকদিন ঘুরে আসার জন্য।
এ রাম! কী বলছ তুমি?
হ্যাঁ, মৌ, সত্যি কথাই বলছি।
বউ বা মেয়েকে পাঠালে তুমি কী করো?
কখনো তাদের বকুনি দিয়ে ফেরত পাঠাই, আবার কখনো বলি তোমাদের চাইতে আমার স্ত্রী অনেক সুন্দরী, অনেক ভাল, সে আমাকে যে আনন্দ দেয়, তা তোমরা কল্পনা করতে পারবে না।
সত্যি তাই বল?
হ্যাঁ, মৌ, সত্যি তাই বলি।
শান্ত মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, যেসব ব্যবসাদাররা মেয়ে-বউ পাঠায় তাদের আমি সোজা জানিয়ে দিই, আমি তোমাদের দু’এক কোটি টাকার ব্যবসা করারও সুযোগ দেব না।
ওই কথা শুনে ওরা চলে যায়? সবাই হাত-পা ধরে ক্ষমা চায়; তাছাড়া অনেকেই কান্নাকাটি করে। তারপর ওদের ব্যবসা দাও? ওই বছর কখনই দিই না; কাউকে কাউকে দু’এক বছর পরে দিই।
মৌ ওকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকের উপর মাথা রেখে বলে, শান্তদা, তুমি কোনদিন ব্যবসাদারদের প্রলোভনের ফঁদে পা দিও না। আমি কিন্তু চিন্তায় থাকলাম।
আমি কথা দিচ্ছি, আমি যদি একদিনের জন্যও কোন মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি, তাহলে আমি আর তোকে স্পর্শ করব না।
তুমি তো জানো, মেয়েরা সব দুঃখকষ্ট সহ্য করতে পারে কিন্তু মনের মানুষের উপর অন্য কোন মেয়ের অধিকার কিছুতেই সহ্য করতে পারে না।
শান্ত আলতো করে ওকে চুম্বন দিয়ে বলে, আমি চিরকাল শুধু তোরই থাকব; আমি কোনদিনই অন্য কাউকে মুহূর্তের জন্যও ভালবাসতে পারব না। আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এবার অন্য কথা বলি।
অন্য কী কথা?
আমরা এখানে না খেয়ে এখান থেকে চারজনের খাবার নিয়ে গিয়ে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়া যাবে।
মৌ একগাল হেসে বলে, হ্যাঁ, হ্যাঁ সেই ভাল।
.
বিমলবাবু দরজা খুলে দিতেই শান্ত চিৎকার করে, ভাল মা, কোথায় গেলে? শিগগির এদিকে এসো।
অনুপমা দেবী ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, অমন চিৎকার করছিস কেন? ভাল মা কী হারিয়ে গেছে?
তা হারিয়ে যেতে পারো।
আমি কোন দুঃখে হারিয়ে যাব?
হয়তো একটা সত্যিকারের ভাল ছেলে পাবার জন্য এখান থেকে চলে গেলে।
আমার যে ছেলে আছে, সেই যথেষ্ট।
ভাল মা, আগে এগুলো ধরো।
কী আছে এতে?
আমাদের চারজনের খাবার।
তুই আবার আমাদেরও খাবার এনেছিস?
ইয়েস মাম্মী।
আবার মাম্মী বলেছিস? মাম্মী বললেই থাপ্পড় খেতে হয়, তা কী ভুলে গেছিস?
মৌ হাতের প্যাকেটগুলো নিয়ে মা-বাবার ঘরে গিয়েই গলা চড়িয়ে বলে, মা, খাবারের প্যাকেটগুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে তাড়াতাড়ি এদিকে এসো।
হ্যাঁ, মা আসছি।
.
সবাই ওই ঘরে আসতেই মৌ পরপর দুটো প্যাকেট খুলে একটু হেসে বলে, মা, শান্তবাবু এই দুটো আমাকে দিয়েছেন।