মৌ আলতো করে ওকে একটা থাপ্পর মেরে হাসতে হাসতে বলে, আমার সঙ্গে মজা হচ্ছে, তাই না?
শান্ত হঠাৎ কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে হাসতে হাসতে বলে, এবার তোমাকে আমি আদর করব।
মৌ কিছু বলার আগেই ও ওকে চুমু খেতে খেতেই ব্লাউজ খুলে বুকে হাত দিতে শুরু করে। না, শান্ত ওখানেই থামে না…
আঃ! কী করছ?
শান্ত তখন ওকে প্রাণভরে পাবার জন্য পাগল হয়ে উঠেছে; মৌ-ও তখন আত্মহারা হয়ে উঠেছে। পরিপূর্ণভাবে পাবার নেশায় দু’জনেই জ্বলে উঠেছে।
আগুন নিভতেই শান্ত ওর বুকের উপর লুটিয়ে পড়ে; মৌ চোখ বুজেই দু’হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। পনের-কুড়ি মিনিট দু’জনেই প্রায় বেহুঁস হয়ে ওইভাবে থাকে।
তারপর শান্ত বলে, মৌ!
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মৌ ওর দিকে তাকায়।
রাগ করেছ?
মৌ আলতো করে মাথা নেড়ে বলে, না।
খুশি হয়েছ? ভাল লেগেছে?
শান্তদা, আমিও রক্তমাংসের মানুষ; খিদে-তৃষ্ণার মতো আমারও কামনা-বাসনা আছে। প্রিয় মানুষের কাছে এই আদর ভালবাসা আর আনন্দ পাবার স্বপ্ন দেখে সব মেয়েরা।
তাহলে তোমার ভাল লেগেছে, কী বল?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ভাল লেগেছে কিন্তু আমরা ঠিক করলাম কী?
মৌ, আমরা ছোটবেলা থেকেই দুজনে দুজনকে ভালবাসি। তারপর আস্তে আস্তে যত বড় হয়েছি, দু’জনে দু’জনকে তত বেশি কাছে চেয়েছি। আজ আমরা দু’জনেই যথেষ্ট বড় হয়েছি বলেই তো…
শান্ত কথাটা শেষ করে না।
আমি কী তোমাকে সত্যি আনন্দ দিতে পেরেছি?
হ্যাঁ, মৌ, সত্যি তুমি আমাকে আনন্দ দিয়েছ।
যাক অন্তত একটা সান্ত্বনা পেলাম আমি তোমাকে আনন্দ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা মৌ, আমি কী তোমাকে আনন্দ দিতে পেরেছি?
আমি কী করে অস্বীকার করব, তুমি আমাকে আনন্দ দাওনি?
মৌ আলতো করে ওকে চুমু খেয়ে বলে, সত্যি তুমি দারুণ আনন্দ দিয়েছ।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর দুজনে দু’জনের গলা জড়িয়ে শুয়ে থাকে। দু’জনের মুখেই হাসি; কারুর মুখেই কোন কথা নেই।
কী হল হাসছ কেন?
হাসছি এই কথা ভেবে যে ছেলের নাম শান্ত, সে কত অশান্ত হয়ে পাগলামী করতে পারে, তাই ভেবে হাসছি।
তুমি কী কম পাগলামী করেছ?
আমি আবার কখন পাগলামী করলাম?
না, না, তুমি পাগলামী করো নি; তুমি ধীরস্থির ধ্যানমগ্ন ছিলে।
মৌ হাসতে হাসতে বলে, আমি যদি পাগলামী করে থাকি, তার জন্য তুমি দায়ী।
হ্যাঁ, আমি সানন্দে স্বীকার করব আমি দায়ী।
শান্ত একটু পরেই বলে, তুমি ঘুমোবে না?
আজ জীবনে প্রথম তোমাকে এভাবে জড়িয়ে শুয়েছি; ঘুমিয়ে সময়টা নষ্ট করব কেন?
ওর কথা শুনে শান্ত না হেসে পারে না।
তোমার ঘুম পাচ্ছে?
শান্ত একটু হেসে বলে, তোমার মতো আগ্নেয়গিরির পাশে শুয়ে কোন পুরুষের ঘুম আসতে পারে?
অসভ্য কোথাকার! আমি আগ্নেয়গিরি?
তোমার মধ্যে যে আগুন দেখেছি সে আর কী বলব?
আঃ! তুমি চুপ করো।
শান্ত হাতের ঘড়ি দেখে বলে, সাড়ে চারটে বাজে, চা-কফি খাবে?
আড়াইটের সময় খেয়ে উঠেছি। এখন আর চা-কফি খাব না।
একটু কেনাকাটা করতে হবে; এখন বেরুবে?
হ্যাঁ, বেরুতে পারি।
তাহলে উঠে পড়ো।
হ্যাঁ, উঠছি।
.
গড়িয়াহাটের দোকানে ঢুকেই শান্ত বলে, আমার স্ত্রীর জন্য বেশ ভাল দুতিনটে সিল্কের শাড়ি দেখান তো।
মৌ ওর দিকে তাকাতেই শান্ত দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়।
সেলসম্যান বেশ কিছু ভাল ভাল শাড়ি শো-কেসের উপর ছড়িয়ে দিয়ে বলেন, স্যার, দেখুন তো পছন্দ হয় কিনা।
শান্ত দু’চারটে শাড়ি দেখেই বলে, বা! বেশ ভাল তো। ও এবার পাশ ফিরে বলে, মৌ, দেখ তো কোনটা কোনটা তোমার পছন্দ।
সব শাড়িগুলোই আমার পছন্দ; সবগুলোই কিনে দাও।
ওর কথায় শুধু শান্ত না, সেলসম্যানও হেসে ওঠেন।
এবার মৌ বলে, আমার তো শাড়ির দরকার নেই; যাইহোক আমি একটা শাড়ি নিচ্ছি।
কোনটা তোমার পছন্দ!
এইটা।
গুড।
সেলসম্যান শাড়িটি আলাদা করে রাখতেই শান্ত বলে, মৌ প্লীজ আর একটা শাড়ি নাও।
দোকানে যেসব শাড়ি ঝোলানো ছিল, তার মধ্যে একটা শাড়ি দেখিয়ে মৌ বলে, এরকম শাড়ি দেখান তো।
সেলসম্যান ওইরকম শাড়ির বাণ্ডিল বের করেন, মৌ ওই বাণ্ডিলের একটা শাড়ি পছন্দ করে।
শান্ত বলে, সত্যি ভারী সুন্দর শাড়ি।
এবার শান্ত বলে, আমার মায়ের জন্য একটা ভাল সিল্কের শাড়ি চাই; সাদা খোলের ভাল বর্ডার দেওয়া শাড়ি।
হ্যাঁ, বুঝেছি।
মায়ের জন্য সিল্কের শাড়ি পছন্দ করার পর শান্ত বলে, এবার মায়ের জন্য একজোড়া ভাল তাঁতের শাড়ি চাই।
হ্যাঁ, মায়ের জন্য তাঁতের শাড়ি পছন্দ করার পর শান্ত বলে, এবার এক জোড়া ভাল ধুতি চাই।
হ্যাঁ, তাও হল।
স্যার, আর কিছু চাই?
না।
শান্ত সঙ্গে সঙ্গে পার্স থেকে একটা ডেবিট কার্ড বের করে সেলসম্যানের হাতে দেয়।
যাইহোক সই-টই করে ডেবিট কার্ড ফেরত নেবার পর শান্ত কাপড়ের প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে।
মৌ ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, এবার কি কিনতে হবে?
তুমি যা বলবে।
এত কাপড়-চোপড় কেনার দরকার ছিল?
এতদিন পর কলকাতা এলাম, ভাল মা-ভাল কাকাকে কি কিছু দিতে ইচ্ছে করে না আমার? ওরা কি আমার কেউ না?
কথাটা বলতে বলতে শান্তর গলা ধরে আসে; দুটো চোখ ছলছল করে।
মৌ ওর একটা হাত চেপে ধরে বলে, সরি শান্তদা, কথাটা বলা আমার ঠিক হয়নি।
মৌ, আমি দেবতা না; নিছক রক্ত-মাংসের মানুষ। তবে অমানুষ না। আমি আমার মা-বাবাকে হারিয়েছি, এখন এই পৃথিবীতে তোমরা তিনজন ছাড়া আমার আর কোন আপনজন নেই।