তুই তো দাদার কথা বলছিস; আর তোর দাদা বলেন, জানো মনিকা, আমার স্থির বিশ্বাস অনু গতজন্মে আমার ছোট বোন ছিল। তা না হলে অমন পাগলের মতো কী আমাকে এত শ্রদ্ধা করতে বা ভালবাসতে পারে?
হ্যাঁ, তা হতে পারে। তবে এটা আমিও বিশ্বাস করি, আমার সঙ্গে দাদার কোন না কোন একটা বিশেষ যোগাযোগ, বিশেষ সম্পর্ক ছিল।
অনুপমা না থেমেই বলে, আমার যখন টাইফয়েড হল, তখন দাদা যা করেছেন, তা কোন পাতানো দাদা করতে পারে না। আর ওই হতভাগা ছেলেটা আমার কষ্ট দেখে কি কান্নাই কাদত!
তুই ভুলে যাস কেন, শান্ত তো তোরও ছেলে।
একশ’ বার ও আমার ছেলে।
মনিকা একটু হেসে বলেন, দেখতে দেখতে ছেলেমেয়ে দুটো কত বড় হয়ে গেল!
হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। আর শান্ত যত বড় হচ্ছে তত হ্যান্ডসাম হচ্ছে। তোর পেটের মেয়েটাকে কি চোখে পড়ে না?
মনিকা না থেমেই বলেন, মৌ-য়ের মতো সুন্দরী মেয়ে তো খুবই কম চোখে পড়ে। ওর চোখ-মুখের কোন তুলনা হয় না। তাছাড়া ওর চোখ দুটো
এমন যে মনে হয় সবসময় হাসছে।
বাবা! ওকে তোর এত সুন্দরী মনে হয়?
তুই যেন গাছ থেকে পড়লি?
তুই বোধহয় মনে করিস, মৌ-এর মতো সুন্দরী মেয়ে ভূ-ভারতে নেই।
আমি মোটেও তা ভাবি না; তবে মৌ যে অত্যন্ত সুন্দরী, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
একটু চুপ করে থাকার পর অনুপমা একটু হেসে বলেন, তবে ছেলেমেয়ে দুটোকে দেখে মনে হয়, ভবিষ্যতে ওরা আমাদের সম্পর্কটা বজায় রাখবে।
মনিকাও একটু হেসে বলেন, হ্যাঁ, তা রাখবে বলেই তো মনে হয়।
.
০৪.
শান্ত মৌ-কে নিয়ে বাড়ির বাইরে আসতেই ড্রাইভার বিদ্যুৎবেগে নিজের সিট ছেড়ে বেরিয়ে এসে পিছন দিকের দরজা খুলে দাঁড়ায়।
বিমলবাবু বলেন, হারে শান্ত, তুই ক’দিন কলকাতায় থাকবি?
ভাল কাকা, সেটা কাল বুঝতে পারব, তবে তিন-চারদিন নিশ্চয়ই থাকতে হবে।
অনুপমা দেবী বলেন, তুই আমার কাছে কবে খাবি?
শান্ত হাসতে হাসতে বলে, আমার ভাল মাতৃদেবী হুকুম,করলেই আমি তার প্রসাদ গ্রহণ করব।
ওর কথা শুনে ওরা স্বামী-স্ত্রী না হেসে পারেন না।
গাড়িতে ওঠার আগেই শান্ত বলে, ভাল মা, মৌ-এর জন্য চিন্তা করো না; ওকে বোধহয় রাত্রে খাইয়ে-দাইয়েই দিয়ে যাব।
তোর সঙ্গে যাচ্ছে, চিন্তার কী আছে? তবে দশটা-সাড়ে দশটার, বেশি রাত করিস না; আজকাল বেশি রাত পর্যন্ত জাগতে পারি না। এ99)
না, না, অত রাত হবে না।
গাড়ি স্টার্ট করতেই শান্ত ড্রাইভারকে বলে, হোটেল চলিয়ে।
ড্রাইভার মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
শান্ত বাঁ হাত দিয়ে মৌ-য়ের ডান হাতটা চেপে ধরতেই দু’জনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসে। সে হাসিতে দু’জনেরই খুশি ঝরে পড়ে; কারুর মুখেই কোন কথা নেই কিন্তু মনে মনে দুজনেই কত কথা বলে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে মৌ বলে, আর্মি নাইন থেকে টেনে উঠতে না উঠতেই তুমি কলকাতা থেকে চলে গেলে।
আমি চলে যাবার আগের দিনের কথা তোর মনে আছে?
সেদিনের কথা সারাজীবনেও ভুলতে পারব না।
মৌ মুহূর্তের জন্য থেমেই বলে, সেদিন তুমি কী কাণ্ডটাই করেছিলে; আমি লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়েছিলাম।
শান্ত একটু হেসে বলে, সেদিন কী করেছিলাম?
কী করো নি?
মৌ হাসতে হাসতেই বলে, সেদিন তুমি চুমু খেতে খেতেই ব্লাউজের বোতাম খুলে আমার বুকে পর্যন্ত হাত দিয়েছিলে। সেদিন যেমন লজ্জা, তেমনই ভয় করছিল।
আর কিছু না?
মজাও লেগেছিল।
তুই বরাবরই সুন্দরী। তারপর তুই যত বড় হয়েছিস, তত বেশী সুন্দরী হয়েছিস। চোদ্দ-পনের বছর বয়সেই পদ্মের পাপড়ির মতোই তোর শরীরে যৌবন ফুটে উঠেছে। তাইতো যাবার আগের দিন তোকে একটু ভাল করে আদর না করে পারিনি।
আই. আই. এম, এ পড়ার সময় তোমাদের ব্যাচ-এ নিশ্চয়ই অনেক মেয়ে ছিল।
হ্যাঁ, প্রায় অর্ধেকই মেয়ে ছিল।
তাদের মধ্যে ক’জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়?
সকাল ন’টা থেকে সাড়ে পাঁচটা-ছ’টা পর্যন্ত আমাদের এমনভাবে কাটাতে হতো যে সব ছেলেমেয়ের মধ্যেই যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
তার মানে তোমার হাত থেকে অন্তত কয়েকটি মেয়ে নিষ্কৃতি পায়নি। তাইতো?
শান্ত হো হো করে হেসে ওঠে।
.
গাড়ি তাজ বেঙ্গলে পৌঁছায়।
এ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেই শান্ত দুহঁত দিয়ে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে ওর মাথার উপর মুখখানা রেখে বলে, আ! কি শান্তি!
মৌ-ও দু’হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।
মৌ, তুই আগের মতোই আমাকে ভালবাসিস তো?
আগের থেকে এখন তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি।
সত্যি?
হ্যাঁ, সত্যি।
কিন্তু কেন এখন বেশি ভালবাসিস?
আগে যখন তোমাকে কাছে পেয়েছি, তখন তোমাকে সত্যি ভাল লাগত; মনের মানুষকে ভালবাসার স্বাদ-আহ্লাদ বা আনন্দের গুরুত্ব তখন ঠিক বুঝতে পারতাম না।
এখন?
মৌ একটু হেসে বলে, এখন দেহ-মন আগের চাইতে অনেক পরিণত হয়েছে; তাইতো মনের মানুষকে ভালবাসতে আদর করতে খুব ইচ্ছা করে। খুব ইচ্ছা করে আদর পেতে, ভালবাসা পেতে।
শান্ত দু’হাত দিয়ে ওর মুখখানা ধরে বলে, প্লীজ আমাকে একটু আদর কর।
সত্যি আদর করব?
হ্যাঁ, প্লীজ।
মৌ দু’হাত দিয়ে ওর মুখখানা ধরে মনের সুখে চুমু খায়। তারপর জিজ্ঞেস করে, তোমার ভাল লেগেছে? খুশি হয়েছ?
শান্ত একটু হেসে বলে, হ্যাঁ ভাল লেগেছে কিন্তু আরেকবার চুমু খেলে খুব খুশি হব।
মৌ আবার ওকে খুব ভাল করে চুমু খায়।
কী খুশি হয়েছ তো?
হ্যাঁ, খুশি হয়েছি তবে মাঝে মাঝে চুমু না খেলে খুশি ভাব চলে যাবে।