নিশ্চয়ই ঠিক মতো পড়াতে পারবে।
তারপর রাধা হাসতে হাসতে বলে, তোমাকে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে; তবে বাঁ হাতে কিছুই পরলে না?
বাঁ হাতে কিছু পরতে আমার ভাল লাগে না; ডান হাতে ঘড়ি আছে, তাই যথেষ্ট।
.
পৌনে ন’টা বাজতেই মৌ কলেজে পৌঁছে প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করে।
সিস্টার, গুড মর্নিং।
গুড মর্নিং ডক্টর মিস চৌধুরী।
দু পাঁচ মিনিট কথাবার্তা বলার পরই ঘণ্টা বাজে; তবে ওটা ওয়ার্নিং বেল। ফাঁইন্যাল বেল বাজতেই প্রিন্সিপাল সিস্টার জোনস্ মৌ-কে নিয়ে সেকেন্ট ইয়ার ক্লাসে যান।
ওরা দু’জনে ক্লাসে ঢুকতেই সব মেয়ে উঠে দাঁড়ায়। সিস্টার জোনস্ ওদের বসতে বলার ইঙ্গিত করেই বলেন, আই হ্যাভ টু ইনট্রোডিউস ইওর নিউ ইকনমিক্স লেকচারার ডক্টর মিস মহুয়া চৌধুরী। ডক্টর চৌধুরী স্টুডেন্ট লাইফে অত্যন্ত কৃতি ছাত্রী ছিলেন। গবেষণা করেছেন ভারত বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর কেজরিওয়ালের অধীনে এবং ওর গবেষণার থিসিস বিচার করেছেন অন্য দু’জন বাদে অক্সফোর্ডের প্রফেসর ম্যাক্সওয়েল। তাহলেই তোমরা বুঝতে পারছ, তোমাদের নতুন লেকচারার কী অসাধারণ গুণী। যাইহোক আমার স্থির বিশ্বাস, ডক্টর চৌধুরীকে লেকচারার হিসেবে তোমাদের খুবই ভাল লাগবে আর তোমরা খুবই উপকৃত হবে।
এই কথাগুলো বলেই সিস্টার জোনস্ চলে যান।
মৌ একটু হেসে বলে, মাই ডিয়ার স্টুডেন্টস, আজ আমার জীবনের এক স্মরণীয় দিন। দীর্ঘদিন আমি তোমাদেরই মতো ছাত্রী ছিলাম আর আজ আমি প্রথম ছাত্রীদের পড়াবার সুযোগ পেলাম। সেজন্য আমি বোধহয় সারা জীবনেও তোমাদের কথা ভুলতে পারব না। তোমরা আমাকে বন্ধু মনে করলে আমি খুশি হব।
মৌ একটু থেমে বলে, আজ আমি জানব তোমরা কি পড়ছ এবং সেই মতো কাল থেকে আমি তোমাদের পড়াতে শুরু করব। আজ আমি তোমাদের সবার সঙ্গে পরিচিত হতে চাই।
…ইয়েস, হোয়াট ইজ ইওর নেম…আমি চৈতালী, আমি গার্গী, আমি মধুরিমা, আমি লিলি, আমি সায়ন্তনী, আমি ফিরোজা, আমি শ্রাবণী, আমি ডরোথী…
ঘণ্টা পড়তেই মৌ বলে, আমি আবার বলছি, আমার সঙ্গে তোমাদের সম্পর্ক যত ইনফর্মাল হবে, আমরা উভয়েই তত বেশি উপকৃত হব।
মৌ ক্লাস থেকে বেরুবার উদ্যোগ নিতেই ছাত্রীরা ওকে ঘিরে ধরে সমস্বরে বলে, ম্যাম, আপনাকে আমাদের দারুণ ভাল লেগেছে। সায়ন্তনী একটু হেসে বলল, আপনার সুন্দর মুখে সুন্দর হাসি দেখেই আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। অন্য মেয়েরাও কত কি বলে; সবার মুখেই খুশির হাসি। মৌ নিজেও খুশির হাসি হাসতে হাসতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে।
.
মেয়েরা সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে তাদের নতুন লেকচারারকে নিয়ে আলোচনা।…
শ্রাবণী বলে, সী ইজ সো বিউটিফুল!
লিলি বলে, সোজা কথায় সী ইজ চার্মিং!
ফিরোজা বলে, মাই গড! কি দারুণ ফিগার!
সায়ন্তনী বলে, যেমন রূপ তেমনি রুচিসম্পন্ন।
চৈতালী বলে, আমি বলব, সী কেম, সী স-অ, সী কংকার্ড!
অন্য মেয়েরাও কত কি বলে।
অধ্যাপিকা হিসেবে প্রথম দিন খুবই ভাল কাটল মৌ-এর।
.
বাড়ি ফিরতেই রাধা জিজ্ঞেস করে, কলেজ কেমন লাগল?
মাসি, কলেজের পরিবেশ এত ভাল যে কি বলব।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, মাসি।
ছাত্রীদের কেমন লাগল?
খুব ভাল লেগেছে।
ছাত্রীরা নিশ্চয়ই তোমাকে পেয়ে খুশি?
মৌ হাসতে হাসতে বলে, তাইতো মনে হল।
সপ্তাহ দুয়েক পড়াবার পরই ছাত্রীরা বলতে শুরু করল, ম্যাম, আপনার পড়াবার স্টাইল একেবারে আলাদা।
পড়াবার স্টাইল আলাদা হলেই ভাল হবে, তার কোন অর্থ নেই; আসল কথা হচ্ছে, আমার পড়াবার স্টাইল তোমাদের ভাল লাগছে কি না বা ব্যাপারটা বুঝতে সাহায্য করছে কিনা।
হ্যাঁ, ম্যাম, খুব ভাল লাগছে। আমাদের কাছে যা কঠিন মনে হয়, তা আপনি অল্প কথায় খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেন।
যাক, শুনে ভাল লাগল।
মৌ সঙ্গে সঙ্গে বলে, তোমরাও আমাকে টুকটাক প্রশ্ন করবে।
ওর কথা শেষ হতে না হতেই মনীষা জৈন উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ম্যাম হোয়াট ইজ ইনফ্লেশন? মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপারটা কী?
জি. ডি. পি অর্থাৎ গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাকশন। সোজা কথায় আমাদের দেশে মোট যা উৎপন্ন হয়, অ্যাম আই ক্লিয়ার?
ইয়েস ম্যাম।
এবার চিন্তা করো দেশে কি কি উৎপন্ন হয়। আমাদের এই কৃষি প্রধান দেশে সব চাইতে বেশি টাকার জিনিষ উৎপন্ন হয় কৃষিতে।
ম্যাম, স্টীল, সিমেন্ট, ফার্টিলাইজার না?
না।
মৌ মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, ধান, গম, বজরা, তৈলবীজ, শাকসজি, ফলমূল, তামাক, ডাল, ওষুধ তৈরির গাছপালা ইত্যাদি ইত্যাদি হচ্ছে কৃষিজাত দ্রব্য। আমাদের দেশে সব মিলিয়ে যা উৎপন্ন হয়, তার পঁচাত্তর আশি ভাগ আয়ই আসে কৃষিজাত দ্রব্য থেকে।
দু’চারটি মেয়েকে হাসতে দেখে বলে, তোমরা ভাবতে না পারলেও এটাই সত্যি, এটাই বাস্তব।
ও একটু থেমে বলে, এরপর আছে কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র-মাঝারি-ভারী শিল্প আর সার্ভিস সেক্টর অর্থাৎ ভারতের লোকজন যা কাজ করে এর টোটাল যোগফল প্লাস কৃষিজাত দ্রব্যের টোটাল যোগফল অর্থাৎ সব মিলিয়ে যত টাকার জিনিষ উৎপাদন হয় তাই হল গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাকশন।
অ্যাম আই ক্লিয়ার?
ইয়েস, ইয়েস, ইউ আর ক্লিয়ার।
মনে করো, আমাদের দেশে গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাকশন এর মূল্য হচ্ছে, দশ হাজার কোটি টাকা। এবার যদি কেন্দ্রীয় সরকার মোট দশ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়ে, তাহলে কোন ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি হয় না।