বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

মৌ – নিমাই ভট্টাচার্য

Mou by Nimai Bhattacharya

হ্যাঁ, ঘণ্টা খানেক আগেই ফিরেছি। কাল সকালে জলপাইগুড়ি গিয়ে দু’টো-আড়াইটের মধ্যে শিলিগুড়ি ফিরে সাড়ে চারটের প্লেনে কলকাতা রওনা হব।

তার মানে কাল সন্ধের মধ্যেই ফিরে আসবি?

হ্যাঁ, মা।

ওদিকে বিধাতাপুরুষ যে আমাদের সবার অজ্ঞাতে, অলক্ষে জমা-খরচের হিসেব লিখে চলেছেন, তা আমরা জানতে পারি না। পূর্ণিমার চাঁদও ক্ষয় হতে হতে অমাবস্যার অন্ধকারে পৃথিবী ডুবে যায়, যাবেই কিন্তু অন্ধকারও অনন্তকাল রাজত্ব করতে পারে না। আবার আকাশে চাঁদের দেখা পাওয়া যায়, যাবেই। এইভাবেই ঘুরে চলে আমাদের সুখ-দুঃখের কালচক্র।

ভোরের আলো ফুটলেও তখনও মৌ অঘোরে ঘুমুচ্ছে।

হঠাৎ অনুপমা দেবীর বিকট চিৎকার, ওরে মৌ, তোর বাবার কী হল? কথা বলছে না কেন?

ঐ চিৎকার শুনেই মৌ বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে ছুটে যায় মা-বাবার ঘরে।

অনুপমা দেবী হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ওরে, তোর বাবার কী হল? ও মৌ, তোর বাবা কথা বলছে না কেন?

দু’হাত দিয়ে বাবার মুখখানা ধরে মৌ-ও পাগলের মতো চিৎকার করে, বাবা! ও বাবা! বাবা!

মা-মেয়ের কান্নাকাটি আর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন ঠিক পাশের বাড়ির ডা. চ্যাটার্জী আর তার স্ত্রী।

প্রথমে নাড়ি, তারপর চোখের মণি দেখেই ডা. চ্যাটার্জী মাথা নেড়ে বলেন, মৌ, তোর বাবা অনেক আগেই চলে গিয়েছেন।…

জ্যেঠু, কী বলছেন আপনি?

ম্যাসিভ সেরিব্রালে মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়েছে অন্তত ঘণ্টা চারেক আগে।

অনুপমা দেবী কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করেন, মানুষটা চলে গেল অথচ আমি টের পেলাম না! ও চলে যাবার পরও আমি ওর পাশে চার ঘণ্টা ঘুমোলাম কী করে?

দেখতে দেখতে প্রতিবেশীদের ভীড়ে ঘর-বাড়ি ভর্তি। কেউ সান্ত্বনা দেন অনুপমা দেবীকে, কেউ কেউ সান্ত্বনা দেন মৌ-কে। কেউ কেউ বলেন, এ তো মহা ভাগ্যবানের মৃত্যু; নিজে না ভুগে, কাউকে কোন কষ্ট না দিয়ে দাদা চলে গেলেন। এর চাইতে ভাল মৃত্যু আর কি হয়!

কান্নাকাটি করতে করতেই মৌ কোনমতে খবরটা জানায় শান্তকে; শান্ত বলে, আমি নেক্সট ফ্লাইটেই আসছি।

কয়েক মিনিট পর মৌ ওর বাবার টেলিফোনের খাতাটা ডাক্তার জ্যেঠুর মেয়ে সায়নীর হাতে দিয়ে বলে, এর মধ্যে বাবার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী আর প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের টেলিফোন নম্বর আছে; তুই এদের খবরটা জানিয়ে দে।

আমি এক্ষুনি বাড়ি গিয়ে সবাইকে ফোন করছি।

তারপর?

আধ ঘণ্টার মধ্যেই আসতে শুরু করেন বিমলবাবুর পুরনো সহকর্মী আর ছাত্র-ছাত্রীরা। সবার চোখেই জল। ক’জন ঘনিষ্ঠ ছাত্রী জড়িয়ে ধরেন অনুপমা দেবী আর মৌ-কে।

প্রতিবেশী সুভাষবাবু বলেন, দাদা শুধু কাউকে কষ্ট দিলেন না, অন্যদের যাতে কাজকর্মে ক্ষতি না হয়, সেজন্য মারা গেলেন রবিবার ভোরে।

সঙ্গে সঙ্গে দু’ চারজন বলেন, হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন।

এগারটা বাজতে না বাজতেই শান্ত এসে হাজির। ও কাঁদতে কাঁদতে অনুপমা দেবীকে জড়িয়ে ধরে বলে, মা-বাবার পর ভাল কাকাও ফাঁকি দিয়ে চলে গেল; এবার তুমিও যাও। তোমরা সবাই চক্রান্ত করে পালাতে শুরু করেছ।

অনুপমা দেবী ওকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ওরে শান্ত, তোর ভাল কাকা আমার সঙ্গে এমন সর্বনাশা রসিকতা কেন করলেন বলতে পারিস?

.

তারপর?

তারপর আর কি? পাড়ার লোকজনই অন্তিম যাত্রার উদ্যোগ-আয়োজন করেন। বিমলবাবু জামাই সেজে জনা চারেকের কাঁধে উঠতেই অনুপমা দেবী মূর্ছা গেলেন; মৌ-ও মাথা ঘুরে পড়ে যেতে যেতে ক’জনে তাকে ধরে ফেলে। তবুও মৌ-কে যেতে হয় বাবার পিছন পিছন।

তারপর?

পঞ্চভূতে বিলিন হল বিমলবাবুর মরদেহ।

.

অনুপমা দেবী যেন তাঁর বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তার মুখে কোন কথা নেই বললেই হয়। সব সময় শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। অনেক অনুরোধ-উপরোধ করেও এক চামচের বেশি ভাত তার মুখে ওঠে না।

আর?

হঠাৎ কখনও কখনও খুব জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রায় আপন মনেই বলেন, তুমি চলে যাবার আগে একবার ডাকলেও না?

আবার কখনও কখনও বলেন, আমি এমন অপদার্থ স্ত্রী যে তুমি চলে যাবার পরও তোমারই পাশে অঘোরে ঘুমুলাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা! আমার মতো স্ত্রীকে নিয়ে তুমি এত বছর ঘর করলে কী করে?

.

তবু সূর্য ওঠে, অস্ত যায়। কখনও চাঁদের আলো, কখনো আবার অমাবস্যার অন্ধকার। স্কুল-কলেজ অফিস-আদালত যথারীতি আগের মতোই চলছে। মানুষজনও তাদের নিত্যকর্ম করে চলেছে। না, কোথাও ছন্দপতন হচ্ছে না, হবেও না।

শান্ত ফিরে গিয়েছে। মৌ-কেও আবার কাজ শুরু করতে হয়েছে। তবে মা-কে দেখার জন্য দুটি নার্স পালা করে দেখাশুনা করছে। এছাড়া পাড়ার মেয়ে-বউরা হরদম আসা-যাওয়া করছেন।

শান্ত রোজই ফোন করে। তাছাড়া প্রত্যেক শনিবার বা রবিবার এসে ভাল মা-কে দেখে যাচ্ছে। ডা. চ্যাটার্জী প্রত্যেক দিন অনুপমা দেবীর পালস্ দেখছেন, প্রেসার দেখছেন, স্টেথোর চেস্ট পিস ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছেন বুক-পিঠ। ক’দিন অন্তর ই-সি-জি হচ্ছে।

ডা. চ্যাটার্জীকে গম্ভীর দেখেই মৌ বলে, জ্যেঠু, মা-কে কেমন দেখলেন?

উনি যে বিশেষ ভাল নেই, তা তো তুই বুঝতে পারছিস। তবে ওকে ঠিক মতো খাওয়াতে পারলে ভাল হয়।

অনেক অনুরোধ-উপরোধ করেও তো মা-কে বেশি খাওয়ানো যাচ্ছে না; তবে সিস্টাররা খুবই দেখাশুনা করছেন।

ওরা খুব ভাল বলেই তো আমি তোর মা-কে দেখাশুনার জন্য লাগিয়েছি। যাইহোক ওষুধ পত্তর তো খাচ্ছেন; লেট আস হোপ ফর দ্য বেস্ট।

Page 24 of 30
Prev1...232425...30Next
Previous Post

লেটার বক্স – নিমাই ভট্টাচার্য

Next Post

ম্যারেজ রেজিস্টার – নিমাই ভট্টাচার্য

Next Post

ম্যারেজ রেজিস্টার - নিমাই ভট্টাচার্য

ব্যাচেলার - নিমাই ভট্টাচার্য

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In