আমরা মনে করি, আপনি অনেক বড় দায়িত্ব নেবার উপযুক্ত।
মৌ চুপ করে চিন্তা করে।
কি হল মিস চৌধুরী।
স্যার, আমাকে কী প্রত্যেক সপ্তাহে ঐসব এলাকায় যেতে হবে?
নট অ্যাট অল; মাসে একবার করে গেলেই যথেষ্ট। তবে মাঝে মাঝে টেলিফোন করে ওখানকার ক্লায়েন্টদের একটু চাপে রাখবেন।
স্যার, মি. সরকার কী এইসব এলাকা আর দেখবেন না?
ওর কথা শুনে শান্ত শুধু হাসে।
মি. পাতিল বলেন, ও এখন কয়েক মাস নর্থ-ইস্ট নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকবে; তবে ওয়েস্ট বেঙ্গল-সিকিমও ওর দায়িত্ব।
স্যার, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি।
ভেরি গুড।
উনি সঙ্গে সঙ্গেই এক গাল হেসে বলেন, এখন থেকেই আপনি স্পেশাল প্রমোশন অফিসার ফর ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যান্ড সিকিম হলেন এবং কোম্পানীর অফিসার হিসেবে মাইনে, অ্যালাউন্স ও অন্যান্য সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
স্যার, অশেষ ধন্যবাদ।
মি. সরকার কাল আপনাকে আমাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের চিঠি দিয়ে দেবে। এর পর মি. মাথাইয়ের ডিপার্টমেন্ট আপনার নতুন এরিয়া খুব ভাল করে বুঝিয়ে দেবে।
স্যার, ওদের ব্রিফিং সত্যি খুব ভাল; তাছাড়া কাজে খুব হেলপ করে।
.
সন্ধেবেলায় মেরিন ড্রাইভের ফ্ল্যাটে ঢুকেই দু’জনে দু’জনকে জুড়িয়ে ধরে কয়েক মিনিট ধরে চুম্বন পর্ব চলে।
দু হাত দিয়ে শান্তর গলা জড়িয়ে ধরে মৌ বলে, প্রায় মাস খানেক তোমার সঙ্গে মহানন্দে কাটাবার পর এই তিন মাস যে কি করে কাটিয়েছি, তা শুধু আমিই জানি।
মৌ, বিশ্বাস কর, তোকে কাছে না পাবার জন্য আমিও নিঃসঙ্গতার জ্বালায় জ্বলে-পুড়ে মরেছি। রাতের পর রাত ঘুমোতে পারিনি।
আমারও তো একই অবস্থা। আমি আমার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে শোবার পরই শুধু কেঁদেছি। তোমাকে যতদিন কাছে পাইনি, ততদিন অন্যরকম দুঃখ ছিল কিন্তু তোমার কাছে অত আদর ভালবাসা আর আনন্দ পাবার পর এই বিচ্ছেদ সত্যি অসহ্য।
হ্যাঁ, মৌ, ঠিক বলেছিস।
একটু পরই বাঈ আসে। মৌ-কে দেখেই ও এক গাল হেসে বলে, এতদিন পর এলে কেন?
মৌ গম্ভীর হয়ে বলে, সবই আমার কপাল! আমার স্বামী চায় না, আমি এখানে বেশি আসি।
বাঈ মাথা নেড়ে বলে, না, না, তুমি ঠিক বললে না। তুমি অনেক ভাগ্যের জোরে এই রকম স্বামী পেয়েছ। তুমি চলে যাবার পর অনেকদিন ওর মুখে হাসি দেখিনি; তাছাড়া খাওয়া-দাওয়াও করতো না ঠিক মতো।
.
সন্ধের পর সেই ব্যালকনিতে বসা। আলোয় ঝলমল মেরিন ড্রাইভ যেন বিয়ের কনের মতো সালঙ্করা আর আসন্ন নব বসন্তের জন্য সারা মুখে চাপা হাসি। ওদিকে চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে। আরব সাগরের জলে উছলে পড়ছে তার খুশি। আলোয় ঝলমল ছোট্ট ছোট্ট লঞ্চগুলো যেন এক দল আত্মহারা শিশু খেলতে মত্ত; আর ছোট্ট ছোট্ট নৌকাগুলো যেন মুগ্ধ হয়ে ওদের খেলা দেখছে।
দু’জনে পাশাপাশি বসে, হাতে হাত, শান্তর বুকের উপর মাথা রেখে মৌ বলে, এই পরিবেশ আর তোমার বুকে মাথা রাখলেই যেন মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
তোকে কাছে পেলে আমিও বড় শান্তি পাই।
রাত্রে খেতে বসে শান্ত একটু হেসে বলে, মৌ, তুই অফিসার হিসেবে এবার থেকে অফিস তোকে অনেক টাকা দেবে; কী করবি অত টাকা দিয়ে?
অফিস থেকে কত টাকা পাবো?
প্রভিডেন্ড ফান্ড কাটাকুটির পরও তুই প্রায় আশি হাজার হাতে পাবি; তাছাড়া গাড়ি, টেলিফোন, বাড়ি ভাড়া, এন্টারটেনমেন্ট অ্যালাউন্স, ট্রাভেলিং অ্যালাউন্স…
মৌ একটু জোরেই হেসে উঠে বলে, থাক, থাক, আর বলতে হবে না।
ও সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে বলে, বড় বড় প্রাইভেট কোম্পানীগুলো কর্মচারী আর অফিসারদের এত বেশি মাইনে দেয় বলেই তো ওদের তৈরি জিনিসপত্রের দাম এত বেশি হয়।
তা খানিকটা হয় বৈকি।
.
খাওয়া-দাওয়ার পর মৌ ঘরে গিয়েই শাড়ি ছেড়ে নাইটি পরে।
শান্ত ঘরে ঢুকেই ওকে নাইটির বোতাম লাগাতে দেখে বলে, অফিস থেকে এসেই তো নাইটি পরতে পারো।
নাইটি হচ্ছে রাতের পোক; এই পোষাক কী বাঈ-এর সামনে পরা যায়?
শান্ত আর কোন কথা না বলে শুতে যায়।
মৌ সযত্নে মুখে ক্রীম মাখে, হাতেও ক্রীম লাগায়; আলতো করে চুলের উপর দিয়ে চিরুনি টানে কয়েকবার।
তারপর?
বিছানায় যেতে না যেতেই শান্ত দু’হাত দিয়ে ওকে টেনে নেয়।
.
কী হল মৌ? কথা বলবি না?
এত আনন্দ, এত ভাললাগার পর কথা বলতে ইচ্ছে করে না।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মৌ বলে, শান্তদা, আমার একলা থাকতে একটুও ভাল লাগছে না। এবার আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করো।
সত্যি বলছি, আমারও একলা থাকতে ভাল লাগে না কিন্তু অফিসের জন্য আমাকে বছর খানেক অপেক্ষা করতেই হবে।
কেন?
বছর খানেকের মধ্যেই পাতিল সাহেব কোম্পানীর চেয়ারম্যান হবেন আর ওর জায়গায় আমাকে যেতে হবে।
এ তো দারুণ খবর।
কিন্তু তার আগে আমাকে তিন-চার মাস করে দিল্লী, নাগপুর, হায়দ্রাবাদ আর চেন্নাইতে থাকতে হবে।
বোম্বে ফিরে আসার পর আমাদের বিয়ে হবে তো?
নিশ্চয়ই হবে।
৯. মেয়ের সাফল্য
মেয়ের সাফল্যে অভাবনীয় আনন্দিত বিমলবাবু ও অনুপমা দেবী; মা-বাবার আনন্দ দেখে খুশি মৌ-ও।
সারাদিন কাজকর্মের পর মৌ বাড়ি ফিরে এলে তিনজনে মিলে কত কথা, কত গল্পগুজব। মৌ উত্তরবঙ্গ বা সিকিম গেলেও প্রত্যেক দিন সন্ধের পর মা-বাবার সঙ্গে কতক্ষণ ধরে টেলিফোনে কথা বলে।
অনুপমা দেবী জিজ্ঞেস করেন, তুই কবে ফিরবি? কোচবিহার আর গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়ি ফিরেছিস কী?