স্যার, আর একটা কথা।
হ্যাঁ, বল।
মেয়েটিকে কী ট্রেনে আসতে বলব?
নেভার! একটা মেয়েকে একলা দু’তিন দিন ধরে ট্রেনে আসতে বলা যায়? ওকে আসা-যাওয়ার প্লেন ভাড়া দেবে আর আমাদের জুনিয়ার অফিসারদের রেটে ডেলি অ্যালাউন্স আর ডেলি দু’শ টাকা করে ট্রান্সপোর্ট…
স্যার, অশেষ ধন্যবাদ।
.
অফিসের পর শান্ত বাড়ি ফিরতেই মৌ এগিয়ে আসে।
শান্ত হাসতে হাসতে বলে, বল সুন্দরী, কোন পাড়ে ভিড়াব তোমার সোনার তরী?
মৌ হাসতে হাসতে বলে, কী হল? এত খোস মেজাজে?
আগে আমার ওষ্ঠে তোমার ওষ্ঠের বিষ ঢেলে দাও, তার সঙ্গে সঙ্গেই তুমি হাতে একটা বিশেষ কিছু পাবে।
আগে হাতে কিছু পাই, তারপর পুরস্কারের কথা চিন্তা করব।
ঠিক হ্যায় মেমসাহাব! লিজিয়ে নাম্বার ওয়ান।
শান্ত সঙ্গে সঙ্গে ওর হাতে অ্যাপয়েন্ট লেটার তুলে দেয়।
চিঠিটার উপর দিয়ে চোখ বুলিয়েই মৌ খুশিতে চিৎকার করে ওঠে, ও মাই গড! তুমি তো দারুণ লোক।
মেমসাহাব, তোমার প্লেনে আসা-যাওয়ার খরচ এগার হাজার টাকা।
কী হচ্ছে কি?
মেমসাহাব, আমাদের কোম্পানীর নিয়ন্ট অনুযায়ী এখানে পনের দিন থাকার খরচ–দিন প্রতি পাঁচ শ’ পঁচাত্তর হিসেবে আটহাজার ছ’শ পঁচিশ টাকা।
শান্তদা, তুমি কী গৌরী সেনের কোম্পানীতে চাকরি করো?
মেমসাহাব, দৈনিক দুশ’ টাকা হিসেবে পনের দিন অফিস যাতায়াতের খরচ এই তিন হাজার।
শান্ত একটু হেসে বলে, ব্যস, দ্যাটস্ অল।
কী ব্যাপার বল তো? রাম না জন্মাতেই রামায়ণ?
মৌ না থেমেই বলে, কাজে যোগ দেবার আগেই তোমাদের কোম্পানী আমাকে এত টাকা দিল কেন?
ওহে সুন্দরী, ভুলে যেও না, ভারতের অন্যতম বিখ্যাত কোম্পানীর একজন হতে চলেছ তুমি; কোম্পানীর নিয়ম অনুসারেই তোমাকে টাকা দিয়েছে।
সত্যি অবাক হচ্ছি।
দু এক মিনিট চুপ করে থাকার পর মৌ এগার হাজার টাকা ওর হাতে দিয়ে বলে, তুমিই আমাকে প্লেনে এনেছ, আবার তুমিই আমাকে নিয়ে যাবে; এই টাকাটা তোমার।
এখন তুই টাকাটা রেখে দে; পরে নেব।
.
তিন দিন পরের কথা।
মৌ শান্তর সঙ্গে ওদের অফিসে পা দিয়েই অবাক। এত সুন্দর, এত ঝকঝকে; তাছাড়া প্রত্যেক কোনে সবুজের সমারোহ। দেয়ালে অপূর্ব পেন্টিং। সিকিউরিটি গার্ড, দ্বাররক্ষকদের স্যালুট। লিফট-এরূধ্যে সরোদের মৃদু আওয়াজ।
বারো তলায় লিফট্ থামল।
শান্তর পিছন পিছন মৌ ওর ঘরে পা দিয়েই বলে লাভলি!
সামনেই আরব সাগর আর সীমাহীন আকাশ। ওদিকে পিছন ফিরেই শান্ত বসে তার গদীওয়ালা বিরাট চেয়ারে। সামনে বিরাট টেবিল। একদিকে চার রঙের চারটে টেলিফোন। অন্যদিকে কমপিউটার। ঘরের এক কোনে ভারি সুন্দর কাঁচের গণেশ মূর্তি।
শান্ত চেয়ারে বসতে না বসতেই একজন বয়স্কা মহিলা ঘরে ঢুকেই একটু হেসে বলেন, স্যার, গুড মর্নিং!
ইয়েস দিদি, মর্নিং!
শান্ত সঙ্গে সঙ্গেই মৌ-কে দেখিয়ে ওকে বলেন, দিদি, দিস ইজ মহুয়া চৌধুরী…
নমস্কার! নমস্কার!
দু’জনের নমস্কার বিনিময়ের পর শান্ত বলেন, মহুয়া, দিদি হচ্ছেন মিসেস যশোদা যোশী, আমার সেক্রেটারী।
মিসেস যোশী হাসতে হাসতে মৌ-কে সুন্দর বাংলায় বলেন, স্যার ভারি বিচিত্র মানুষ। অফিসের সব সিনিয়র অফিসারদের সেক্রেটারীরা ইয়াং স্মার্ট সুন্দরী মেয়েরা কিন্তু ওদের কাউকে না রেখে…
মৌ এক গাল হেসে বলে, আপনি এত সুন্দর বাংলা শিখলেন কী করে? আমার বাবা রেলের অফিসার হিসেবে অনেক দিন কলকাতায় ছিলেন; আমি নব নালন্দা থেকে হায়ার সেকেন্ডারী পাস করেছি।
বুঝেছি।
আমি স্যারের সামান্য সেক্রেটারী কিন্তু উনি আমাকে দিদি বলেন বলে আমি খুব অস্বস্তিবোধ করি।
আপনি দিদির মতো বলেই উনি দিদি বলেন।
মৌ না থেমেই বলে, তাছাড়া আপনি কখনই সামান্য সেক্রেটারী না; সেক্রেটারীদের সাহায্য ছাড়া কী কোন অফিসার ঠিক ভাবে কাজ করতে পারবেন?
এবার শান্ত বলেন, দিদি, মহুয়ার ব্যাপারটা আপনি জানেন?
হ্যাঁ, স্যার, জানি কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে।
কী প্রশ্ন?
যে মেয়ে ইকনমিক্স নিয়ে এম.এ পাস করেছে তা সরাসরি অফিসার না করে কেন…
শান্ত একটু হেসে বলেন, বুঝেছি।
এক নিশ্বাসেই উনি বলেন, আপনি তো জানেন, আমাদের কোম্পানীতে অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে কত রকমের নিয়ম-কানুন; তারপর ছ’মাসের ট্রেনিং। তাই…
হ্যাঁ, স্যার, বুঝেছি।
দিদি, আমি মহুয়াকে একবার মি. পাতিলের কাছে নিয়ে যেতে চাই; প্লীজ দেখুন তো উনি ফ্রী আছেন কি না।
হ্যাঁ, স্যার, দেখছি।
মিসেস যোশী নিজের ঘরে যান কিন্তু তিন-চার মিনিট পরই ফিরে এসে বলেন, হ্যাঁ, স্যার, আপনি এখনই যেতে পারেন।
.
শান্ত মহুয়াকে নিয়ে ডাইরেক্টর সাহেবের ঘরে ঢুকতেই মি. পাতিল এক গাল হেসে বলেন, শান্ত, সো দিস ইজ ইওর মহুয়া?
ইয়েস স্যার।
মি. পাতিল ওদের দুজনকেই বলেন, প্লীজ বসুন।
ওরা সামনের চেয়ারে বসতেই মি. পাতিল বলেন, মহুয়া, টেল মী ওয়ান থিং; আপনি কলেজের লেকচারার না হয়ে আমাদের কোম্পানীর কাজ করবেন কেন?
স্যার, একই সিলেবাস মতো বছরের পর বছর পড়াবার চাইতে একটু চালেনজিং কাজ করতে চাই।
রিয়েলী?
ইয়েস স্যার, আই মীন ইট।
ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু ভেবেছেন?
মৌ এক গাল হেসে বলে, স্যার, ইফ অল ইজ ওয়েল, তাহলে কোন কোম্পানীর ইকনমিক প্ল্যানিং বা ইকনমিক সার্ভে সম্পর্কে কাজ করতে চাই।
ইকনমিক প্ল্যানিং বা সার্ভের ব্যাপারে কী বলতে চান?