বাঈ না থেমেই একটু হেসে বলে, আমি ওকে এত করতে বারণ করেছিলাম কিন্তু ওর পাগলামীর তো নেই।
মৌ পাশে দাঁড়ানো শান্তকে একটা চিমটি কেটেই একটু হেসে বলে, এর পাগলামীর পরিচয় আমি খুব ভালভাবেই পেয়েছি।
তবে বিবিজি, তোমার স্বামী সত্যি খুব ভাল ছেলে।
বাঈ রান্নাবান্না করে চলে যাবার সময় মৌ-কে বলে, বিবিজি, টেবিলের উপর সবকিছু সাজিয়ে রেখেছি; তবে খাবার আগে একটু গরম করে নিও।
হ্যাঁ, নেব।
ভাল করে খাবে আর তোমার পাগলা স্বামীকেও ভাল করে খাওয়াবে।
মৌ হাসতে হাসতে বলে, ও খাবার আগে পাগলামী করবে না তো।
বাঈ গম্ভীর হয়ে বলে, তুমি সোজা বলে দেবে, আগে খেয়ে নাও, তারপর যা ইচ্ছে পাগলামী কোরো।
বাঈ আর দাঁড়ায় না; সেদিনের মতো চলে যায়।
শান্ত সঙ্গে সঙ্গে মৌ-কে জড়িয়ে ধরে বলে, শুনলে তো, বাঈ কী বলল?
বাঈ তো অনেক কথাই বলল।
সব শেষে বলল, খাওয়া-দাওয়ার পর যা ইচ্ছে পাগলামী করতে।
মৌ হাসতে হাসতে ওর পিঠে আলতো একটা ঘুষি মেরে বলে, যা ইচ্ছে পাগলামী করো কিন্তু আজ তুমি আমাকে টাচ্ করবে না।
টাচ্ করব না?
নো স্যার।
তাহলে তুমি আমাকে টাচ …
মাই ডিয়ার মি. সরকার, আই উইল অলসো নট টাচ্ ইউ।
শান্ত দু’হাত দিয়ে ওর মুখখানা ধরে বলে, মৌ, আজ তো আমাদের ফুলশয্যা; আজই তো প্রথম রাত যখন আমরা দু’জনে এক সঙ্গে…
মৌ হাসতে হাসতে বলে, আমাকে বাথরুমে যেতে দাও; গায় একটু জল ঢেলে আসি।
.
মৌ বাথরুম থেকে বেরিয়ে পোশাক বদলে চুল আঁচড়ে ফেস টাওয়েল দিয়ে আরেকবার মুখ পরিষ্কার করে। তারপর ড্রেসিং টেবিলের বিরাট আয়নার সামনে একটু ঘুরে-ফিরে নিজেকে দেখতে দেখতে একটু হাসে।
মৌ এ ঘরে-ও ঘরে উঁকি দিয়ে শান্তকে দেখতে না পেয়ে এদিক-ওদিক তাকাতেই দেখে, ও বারান্দায় বসে আছে। একটু কাছে যেতেই বুঝতে পারে, শান্ত স্নান করার পর পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেছে।
মৌ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই শান্ত বলে, সন্ধের পর আলো জ্বললে মেরিন ড্রাইভ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, তাই না?
শান্তর একটা হাত দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে, সত্যি অপূর্ব।
আমাদের দেশে সমুদ্রের ধারে তো কত শহরই রয়েছে কিন্তু আর কোথাও এই অপরূপ দৃশ্য দেখা যাবে না।
.
আরব সাগরের কোল ঘেষে ধনুকের মতো বেঁকে গিয়েছে মেরিন ড্রাইভ; অন্যদিকে বাড়ির পর বাড়ি। রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি সবই আলোয় আলো। ’গোল্ডেন নেকলেস’ একেই বলে।
শুধু কী তাই?
সামনে আরব সাগরের অসংখ্য লঞ্চ আর নৌকায় আলো জ্বলে উঠেছে বলে যেন মনে হয়, অসংখ্য পুণ্যার্থী জলে ভাসিয়েছেন অসংখ্য প্রদীপ।
এই পরিবেশে ভাল লাগা, ভালবাসা জন্ম নেবেই। তাই তো সব বয়সেরই নারী-পুরুষ হাত ধরাধরি করে হাঁটছেন মেরিন ড্রাইভের ফুটপাথ ধরে।
এইসব দেখতে দেখতে মৌ যেন নিজেকে নিজের মধ্যে হারিয়ে ফেলে; খেয়ালই করেনি, কখন সে শান্তদার কোলে বসে দু হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে মুখের পর মুখ রেখেছে।
এই অনন্ত রহস্যময় পৃথিবীর কোন কোন পরিবেশে মানুষের মন সঙ্কুচিত হয়, আবার কোন কোন বিশেষ পরিবেশে মানুষ নিজেকে বিলিয়ে না দিয়ে তৃপ্তি পায় না। ঘটনাচক্রে আজ সেই বিশেষ পরিবেশের সোনাঝরা মুহূর্ত, যখন এই প্রাচীন পৃথিবীর নবীন দুই যাত্রী নিজেদের বিলিয়ে দেবার নেশায় উন্মাদ হয়ে ওঠে। তারপর? একটা বিচিত্র পূর্ণতার স্বাদে শান্ত আর মৌ-এর মন ভরে ওঠে।
.
পরদিন অফিসে গিয়ে শান্ত ডাইরেক্টর মি. পাতিলকে বলে, স্যার, আমার একটা প্রস্তাব আছে।
ইয়েস টেল মী।
স্যার, আমি চাইছি, ডিস্ট্রিবিউটর-এজেন্টদের প্রতিনিয়ত চাপে রাখার জন্য একজন পার্টটাইম প্রোমেশন অফিসার রাখতে।
নট এ ব্যাড আইডিয়া কিন্তু এই অফিসারের মাইনে কত দিতে হবে? স্যার, আমরা ওকে মাইনে দেব না; শুধু ফিক্সড অ্যালাউন্স দেব আর ঘুরাঘুরির খরচ দেওয়া হবে।
কত অ্যালাউন্স দিতে চাও?
স্যার, প্রথম বছরের জন্য পনের হাজার টাকা; তারপর ওর কাজ দেখে পরের বছর কিছু বাড়িয়ে দেবেন।
এই কাজের জন্য কোন ছেলে বা মেয়েকে তোমার পছন্দ হয়েছে?
হ্যাঁ, স্যার, সদ্য এম.এ পাস একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।
ও কোন এরিয়া দেখাশুনা করবে?
স্যার, গ্রেটার ক্যালকাটা; ফ্রম কল্যাণী টু ঠাকুরপুকুর।
এই মেয়েটি কাজ শুরু করলে তুমি ক্যালকাটা যাওয়া কমিয়ে দেবে না তো?
শান্ত একটু হেসে বলে, না, স্যার, আমাকে তো প্রত্যেক মাসেই দু’ এক সপ্তাহের জন্য ওদিকে যেতে হবে।
তাহলে ঠিক আছে।
স্যার, আপনি কী মেয়েটির ইন্টারভিউ নিতে চান?
আমি কী পার্ট-টাইমারের ইন্টারভিউ নিতে পারি?
মি. পাতিল মুহূর্তের জন্য না থেমেই বলেন, মেয়েটি যখন তোমার আন্ডারে কাজ করবে, তুমিই ওকে ডেকে পাঠাও, দু’ এক সপ্তাহ ওকে ব্রীফ করো, তারপর ওকে নিয়ে কলকাতায় গিয়ে এজেন্ট-ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে পরিচয় করাবার পর ওকে বলে দাও, কীভাবে কাজ করবে—দ্যাটস্ অল।
স্যার, আপনি কী মি. ডি কস্টাকে বৃলেঞ্জবেন, মেয়েটিকে পার্ট-টাইমার হিসেবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিতে?
তুমি ওকে একটা নোট দাও যে আমার সঙ্গে আলোচনা করে সবকিছু ঠিক হয়েছে। আর হ্যাঁ, মেয়েটির সিকিউরিটির কথা ভেবে ও যেন সব সময় আমাদের ট্রান্সপোর্ট অপারেটরের গাড়িতে যাতায়াত করে; মেয়েটির সই করা পেপার্স পাঠালেই অপারেটরকে এখান থেকে চেক পাঠিয়ে দেবে।